Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্লট হারিয়েছে ভারত, খেলা এখন চীনের হাতে

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত প্লট বা জায়গা হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার – দুদেশের ওপর প্রভাব থাকার পরও, এবং মধ্যস্থতা করতে ঢাকার অনুরোধ সত্ত্বেও, ভারতের মধ্যে নিস্ক্রীয় ভাব ফুটে উঠে। আর এই ফাঁকে খেলা হাতিয়ে নেয় চীন।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনা শুরুর পেছনে যে বেইজিংয়ের হাত রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। দশ লাখের বেশি বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গার ভাগ্য নির্ধারণের জন্য গঠনমূলক আলোচনা শুরু করেছে তারা। এসব বাস্তচ্যুত মানুষ এখন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় ২০০০ একর জমিতে গড়ে ওঠা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।

দুই দেশে তুলনামূলক স্বার্থ বিবেচনা; চীনকে আটকাতে গিয়ে সে কি করবে; এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নিরন্তর ঘটাতির ফল দাঁড়িয়েছে যে ভারত এই উদ্যোগ চীনের কাছে হারিয়ে বসে আছে। ফলে ভারতকে হটিয়ে এখন বাংলাদেশ ও ভারত – দুটি দেশেই জায়গা দখল করে নিতে পারে চীন। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ – দুদেশেই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে ভারত ও চীনের।

রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য কিছু ত্রাণ সামগ্রি পাঠিয়েছে ভারত। কিন্তু যেসব কারণে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে জন স্রোত তৈরি হয় সেই মৌলিক কারণ দূরীকরণে সে কিছু করেনি। নয়াদিল্লি এমনকি এই সংকট উত্তরণের কোন উপায়ও বাতলায়নি। বরং সে রোহিঙ্গারা যেন ভারতে প্রবেশ করতে না পারে সেদিক সামলাতেই ব্যস্ত  ছিলো। সেখানে ইতোপূর্বে আশ্রয় নেয়া  ৪০,০০০ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করতেও দেশটি এখন তৎপর।

শুধু অতি সম্প্রতি ঢাকা সফরে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন যে এর একমাত্র সমাধান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যটিকে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর করা। কিন্তু তার এই সমাধান তেমন পাত্তা পায়নি। তিনি আসল বিষয়টি বেমালুম পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন।

রাখাইনের মূল সমস্যা অর্থনৈতিক নয়, এটা ধর্মীয়-কাম-জাতিগত। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকার করে না, অবৈধ বাঙ্গালী মুসলিম অভিবাসী বলে মনে করে। সংখ্যগুরু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মিয়ামারে রোহিঙ্গারা একেবারে বিপরীত কোণে অবস্থান করছে।

সেই দ্বাদশ শতক থেকে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাস করছে বলে ইতিহাস থাকলেও তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়নি দেশটি। শুধু তাই নয়, তাদের চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাখা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার প্রিন্স জেইদ রাখাইন থেকে বাংলাদেশে উদ্বাস্তুর ঢলকে জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের বাস্তব উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

ভারত ও চীনকে মধ্যস্থতার অনুরোধ জানায় ঢাকা। চীন এতে সাড়া দিলেও ভারত দেয়নি। মিয়ানমারে নতুন বন্ধুদের চটাতে চায়নি দিল্লি।

চীন তার এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত সান গুশিয়াংকে ঢাকায় পাঠায়। সুষমা স্বরাজও দু’দিন ঢাকায় ছিলেন, কিন্তু তার আগ্রহ ছিলো বাংলাদেশে ২০১৯ সালের সংসদীয় নির্বাচন নিয়ে। বাংলাদেশের বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) যেন ২০১৪ সালের মতো সামনের নির্বাচন বয়কট না করে সে বিষয়ে ভারতের আগ্রহ তুলে ধরায় তিনি ব্যস্ত ছিলেন। সংসদীয় রাজনীতির কাঠামোর মধ্যে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে বাংলাদেশে একটি দলকে আরেকটির বিরুদ্ধে খেলাতে চায় ভারত।

সান গুশিয়াং, চীনের বিশেষ দূত

মজার ব্যাপার হলো জিজ্ঞেস করার আগ পর্যন্ত সুষমা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখেন। অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে শুরু থেকেই চীনের অবস্থান ছিলো খোলামেলা ও অবিচল। দেশটি এই বিরোধে জড়িত কোন পক্ষের দিকে আঙ্গুল তোলার নীতি পরিহার করে চলে। সে বলে আসছে যে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ বিষয়টিকে শুধু জটিল করবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করার আহ্বান জানায় চীন।

দুই দেশকে দেয়ার মতো কোন পরামর্শ চীনের নেই। শুধু এই ইস্যুতে যেন আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ না হয় সেই চেষ্টাই সে করছে।

পশ্চিমা ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য অভিশাপ। দেশটির আসল শাসনকর্তা এরাই। সু চিও তাই মনে করেন। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর মতো তিনিও একই দৃষ্টির অধিকারী। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আদলে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের হুমকি নিয়েও মিয়ানমার উদ্বিগ্ন। যা দেশটিকে এই বিশ্বায়নের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এতে তার প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি ব্যাহত হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র একটি অবস্থান নিয়েছে এবং টর্গেটেড নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবছে। মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কাজ করে যে জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটি, তার সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে ওআইসি। আগামী মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ইস্যুটি উঠছে।

একদিকে, বাংলাদেশও কম উদ্বিগ্ন নয়। জাতিসংঘের আড়ালে বৃহৎ পরিসরে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ হতে পারে। এতে ভারত ও চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। যারা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে হাজির হচ্ছে তাদের মাধ্যমে গোয়েন্দা এজেন্সি, আন্তর্ঘাতক ও ইসলামি চরমপন্থীর অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। বলা হচ্ছে, যুক্তরাজ্যের একটি মুসলিম দাতব্য সংস্থা অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে যায় এবং সংস্থাটিকে কক্সবাজারে উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে ত্রাণকার্য চালানোর অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্থাটিকে বিদায় করা হয়। কারণ তারা শিবিরগুলোতে রাতের বেলা  ক্লাস চালু করে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের চরমপন্থার দীক্ষা দেয়া শুরু করেছিলো।

১০ দফা কর্মসূচি

সস্পষ্টত চীনের উদ্যোগে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর দফতরের মন্ত্রী কিয়াউ তিন্ত সোয়ে চলতি মাসের গোড়ার দিকে ঢাকা সফর করেন। এরপর চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান মিয়ানমার সফরে যান। ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি সু চি’র সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন। এর ফলস্বরূপ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে ১০-দফা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। মিয়ানমারের নিউজ পোর্টাল মিজিমা জানায়, ‘মিয়ানমারের নাগরিকদের অবিলম্বে বাংলাদেশ প্রবেশ বন্ধ ও যতদ্রুত সম্ভব উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন ও তাদেরকে রাখাইন রাজ্যে রিসেটেলমেন্ট করার জন্য স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়।’

এ লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নভেম্বরের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। অক্টোবরের শুরুতে ঢাকা এই কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়।

ঢাকা ঠিক এটাই চাচ্ছিল। এর মধ্য দিয়ে একটি অচলাবস্থার নিরসন হয়েছে। গত বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব চীনের বিশেষ দূত সান গুশিয়াং-এর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। পরে তিনি মিডিয়াকে বলেন, ‘চীন এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এটা এই অঞ্চলের জন্য যে ভালো না তা তারা বিশ্বাস করে। তারা সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ নিস্পত্তি আশা করে। তারা চায় এটি যেন দ্বিপাক্ষিকভাবে সুরাহা হয়।’

পররাষ্ট্র সচিব জানান যে তিনি চীনা কর্মকর্তাকে সর্বশেষ অবস্থা অবহিত করেছেন। এর আগে গত এপ্রিলেও তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। বাংলাদেশ সানকে জানিয়েছে যে এখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

হককে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, মিয়ানমার কি শিগগিরই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে? হক বলেন, ‘তেমনটাই আশা করছি।’

 

সূত্র: south asian monitor

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন