রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের কাছে পিছিয়ে পড়েছে ভারত

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা-কূটনীতির প্রশ্নে বাংলাদেশ, মিয়ানমার তথা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল ভারতের সামনে। কিন্তু এক্ষেত্রে সফল হতে পারেনি দিল্লীর সাউথ ব্লক। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চালকের আসনে এখন বেইজিং। সম্প্রতি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে চীন যে তিনটি সমাধানের পথ ঘোষণা করার পরে এমনটাই মনোভাব কূটনীতিকদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের লক্ষ্য ভারতকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারে প্রভাব বাড়ানো। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলে মানবাধিকার প্রশ্নে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করারও চেষ্টা করছে চীন।

তবে এখন চীন যে পথে সমস্যা নিরসনের কথা বলছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আগেই সেই কথা বলেছিলেন। তবে এক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়নি সাউথ ব্লক। সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার সফরে গিয়ে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণই করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বরং সে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে মিয়ানমারকে খুশি করার চেষ্টা করেছিলেন। কারণ, ভারতের বরাবরের আশঙ্কা মিয়ানমারকে খুশি রাখতে না পারলে দেশটি পুরোপুরি চীনের প্রভাবে চলে যাবে। গতকাল শুক্রবার আনন্দবাজার পত্রিকার এক খবরে এসব কথা বলা হয়েছে।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে চীন এবং ভারতের টানাপড়েন বাড়ছে। আশিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর সিংহদ্বার হিসেবে মিয়ানমারের খুবই গুরুত্ব রয়েছে ভারতের কাছে। কিন্তু সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে নতুন শিল্পোদ্যোগের ক্ষেত্রে চীন ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে মিয়ানমারে। বাংলাদেশেও বিনিয়োগ করছে তারা।

কার্যক্ষেত্রে চীনের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের প্রস্তাবে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়েই সম্মত হয়েছে। চীনের তিন প্রস্তাব হলো- ১) রাখাইন প্রদেশে অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা, রোহিঙ্গাদের দেশ ছেড়ে যাওয়া বন্ধ করা এবং শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনা। ২) বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো। ৩) রাখাইনের দারিদ্র্য দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সহায়তা জোগাড়। এ ব্যাপারে বড় দায়িত্ব নিয়েছে চীনই।

চীনের এই প্রস্তাবে খুশি ঢাকা। প্রায় রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে জর্জরিত বাংলাদেশ, ভারতের কাছেও এমন অবস্থান আশা করেছিল। বাংলাদেশের এক কূটনীতিকের কথায়, মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সেনা প্রশাসন দুই পক্ষের কাছেই চীনের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তারা এগিয়ে আসায় আমরা আশাবাদী যে, রোহিঙ্গা সমস্যা মিটবে। অন্যদিকে চীনা প্রস্তাবে মিয়ানমার কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কিন্তু চীনের প্রস্তাব মেনে নিলে বেইজিং যে রাখাইন প্রদেশকে নতুন করে গড়ে দেবে তাই-ই নয়, তাদের কাছ থেকে অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে বাড়তি সুবিধা আদায় করা সম্ভব হবে, মিয়ানমার তা ভালো করে জানে। আনন্দবাজার।

 

সূত্র: ইত্তেফাক

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন