Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে সাড়া দেয়নি, প্রত্যাবাসন নিষ্ফল

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির তথ্য অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৫ নভেম্বর।কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ চুক্তি অনুযায়ী প্রস্তুত ছিল দু’দেশ।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজ দেশের বসত-ভিটায় ফেরাসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের দাবীতে রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ করেছে ক্যাম্পে। ফলে বহুল প্রতীক্ষিত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি। এতে চরম অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয়েছে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার মদদে ও কিছু উশৃঙ্খল রোহিঙ্গাদের পরিকল্পিত হুমকি ধমকির কারণে প্রত্যাবাসন নিষ্ফল হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রথম দফায় যেসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করার কথা ছিল উখিয়ার থাইংখালীর জামতলী জি-৮ ব্লক ও টেকনাফের উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা নাগরিকদের। প্রথম দফায় তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের উখিয়ার পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ট্রানজিট পয়েন্ট দিয়ে ফেরত পাঠানোর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ১৫ নভেম্বর ঠিক ছিল। তবে রোহিঙ্গারা সাড়া না দেওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দাবি স্বদেশে ফিরে যাওয়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। নিরাপত্তার কথা বলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে ইচ্ছুক নয় রোহিঙ্গারা। আমরা তো আর জোর করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারবো না। সর্বশেষ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রোহিঙ্গারা স্বদেশে প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণে ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী লম্বাঘোনা গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, কতিপয় এনজিও সংস্থা ও উশৃঙ্খল রোহিঙ্গাদের হুমকি-ধমকির কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক। অন্যথায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হবে।

এদিকে প্রত্যাবাসন শুরুর দিনে টেকনাফের উনচিপ্রাং ক্যাম্পে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। বিক্ষুদ্ধ রোহিঙ্গারা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী নয় বলে জানান।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রত্যাবাসনের জন্য ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেতে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) কয়েকটি বাস পৌঁছালে বিক্ষোভ শুরু করে রোহিঙ্গারা। এ সময় তারা বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নানা দাবি তুলে শ্লোগান দেয়।

শ্লোগানে রোহিঙ্গারা বলতে থাকে- ‘এখন আমরা ফিরবো না’, ‘ গণহত্যার বিচার চাই’, ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই’, ‘স্বদেশের বসত ভিটা ফেরত চাই’ ইত্যাদি দাবীতে শ্লোগান দেয়।

উখিয়ার থাইংখালী জামতলী জি-৮ ব্লকে অবস্থানরত প্রত্যাবাসন তালিকার রোহিঙ্গা নারী হামিদা খাতুন (৫৫) বলেন, আমরা নির্যাতিত দেশে ফিরতে চাই না।

উখিয়ার থাইংখালী জামতলী জি-৮ ব্লকে অবস্থানরত প্রত্যাবাসন তালিকার আবুল কালাম (৩৫) বলেন, কিছু দিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে ক্যাম্পে এসে আমাদের নাম ঠিকানা নিয়ে যায়। ক’দিন পর এসে বলে আমাদেরকে মিয়ানমার ফেরত যেতে হবে। এতে আমরা স্বপরিবারে দিশেহারা হয়ে পড়ি। রাতে দেখি আমার বউ ও মেয়ে কোথায় যেন পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, তিনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না। নির্বাচন কমিশনের মিটিংয়ে ঢাকায় আছি।

তবে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারে চলে যেতে হবে এ বিষয়টি জানানো হলেও কোথায় ও কীভাবে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে, তা তারা জানেন না।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশী চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে আশ্রয় নেওয়াসহ ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দেশের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হয়। স্মারকের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ামারের কাছে আট হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠায়। যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার ওই তালিকা থেকে ৫ হাজার ৫শ’ জনকে প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র দেয়।

গত ৩০ অক্টোবর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় প্রথম ধাপে ২ হাজার ২৫১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। প্রতিদিন ফেরত নেওয়া হবে ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে। প্রথম ধাপের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরুনতলী এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্প প্রস্তুত করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন