রোহিঙ্গারা জঙ্গি নয়, এটা শুধুমাত্র অমূলক আশঙ্কা- বার্টিল লিন্টনার

২০১২ সালে বৌদ্ধ রাখাইনদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষ হওয়ার পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। সংঘর্ষে শত শত রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়।

Linter

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যতদূর চোখ যায় কাঁটাতারের বেড়া দেখা যায়। কংক্রিটের পিলার দিয়ে এই কাঁটাতারের বেড়া পশ্চিম মিয়ানমারের পর্বত ও জলাভূমির ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাঁটাতারের ওই পাশে নাফ নদীর অপর পাড়ে ম্যানগ্রোভ বনের এবড়ো-খেবড়ো দিগন্ত। ওটা বাংলাদেশ। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলেন, ওখানে সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীরা ওঁৎপেতে আছে, তাদের দূরে রাখতেই অংশত এই কাঁটাতারের বেড়া ‍নির্মাণ করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি সাম্প্রতিক হামলার জন্য রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনকে (আরএসও) দায়ী করেছেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা।

অপর দিকেঅধিকাংশ বিশেষজ্ঞ আরএসও’র অস্তিত্ব প্রায় নেই বলেই বিশ্বাস করেন। রোহিঙ্গাদের আরো চাপে রাখতেই আরএসও’র কথা বলা হয় বলে মনে করেন তাদের কেউ কেউ। রাখাইন রাজ্যে প্রায় বর্ণবাদী পরিবেশে বসবাস করেন রোহিঙ্গারা। তাদের শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় না, বয়স্কদের কোনো চাকরিতে নেয়া হয় না আর অসুস্থদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও তেমন নেই। ২০১২ সালে বৌদ্ধ রাখাইনদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষ হওয়ার পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। সংঘর্ষে কয়েকশ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে রাখাইনরা। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন, যাদের অধিকাংশই প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের নানান দেশে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ব্রাসেলসভিত্তিক ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ অক্টোবরে তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আরএসও’কে ‘সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে মৃত’ বলে মত প্রকাশ করে। ১৯৮০’র দশকের প্রথমদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো বড় ধরনের অভিযানে প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গাকে মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম তুলনায় রাখাইন বৌদ্ধরা সংখ্যায় দ্বিগুণ। কিন্তু মানদাও জেলার ৫ লাখ ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ রাখাইন। এ সম্পর্কে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ কথা বলে বিস্তারিত কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। ৩০ বছর ধরে মিয়ানমারের সংবাদ কভার করা সাংবাদিক ও লেখক বের্তিল লিন্টনার বলেন, ‘রোহিঙ্গা জঙ্গি একটি বানানো গল্প। এখন এর তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই।’

মিয়ানমারের মংডুজেলার সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের উখিয়ায় এক সময় আরএসও’র একটি ছোট শিবির ছিল, কিন্তু মিয়ানমারে তাদের কোনো তৎপরতা ছিল না বলে জানান তিনি। উখিয়ায় যাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল, তারা রোহিঙ্গা ছিল না, বরং বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা তরুণ বাংলাদেশি জঙ্গি ছিল বলে জানিয়েছেন লিন্টনার। বাংলাদেশ সরকার এসব জঙ্গি সংগঠনকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার পর আরএসও’ও নিষপ্রভ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র: আরাকান নিউজ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন