রোহিঙ্গাদের সরানোর চিন্তায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

fec-image

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে সরিয়ে হাতিয়া দ্বীপে রাখার চিন্তা করছে সরকার। সরকারের এ চিন্তাকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলার সচেতন মহল। আবার অনেকে দ্বিমতও পোষন করেছেন।

এ চিন্তাকে যারা স্বাগত জানিয়েছেন তারা বলছেন, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের পরিবেশের ক্ষতি করছে। তারা পাহাড় ও গাছ পালা কেটে সাবাড় করছে। তাদের বেশিরভাগই জড়িত রয়েছে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে। তাদের কারণে অবনতি হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা। তাই তাদেরকে সরিয়ে অন্যত্রে রাখাটা যৌক্তিক। এতে সুবিধা হবে তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে এবং সনাক্ত করে রাখতে। তাই সরকারের এ চিন্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আর যারা দ্বিমত পোষন করেছেন তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের দেশের অভ্যন্তরে জায়গা দেওয়া উচিত হবেনা। এতে তারা এ সমাজের সাথে মিশে যাবে। বরং যারা পালিয়ে এসেছে তাদেরকে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় রাখা হোক। আর প্রশাসনকে কঠোর অবস্থা নিতে হবে। যেন আর কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। আর রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হোক। এছাড়া সে দেশের সেনা বাহিনী যদি নিশ্চিত হতে পারে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। তাহলে মিয়ানমারের সব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর রোহিঙ্গারাও চলে আসবে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের দুই রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে ৩৭ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ৪ লাখেরও বেশি। আর এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে নতুনভাবে পলিয়ে আসা ৬৭ হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা কোনভাবেই দেশের জন্য মঙ্গল জনক নয়। তারা বসবাসের জন্য পাহাড় কেটে সাবাড় করছে। তারা নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। তারা চাঙ্গা করে রেখেছে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ।

এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের হাতিয়া দ্বীপে নেয়ার চিন্তা করছে সরকার। আর সেখানে শরণার্থী ক্যাম্প করার জন্য দাতা সংস্থাগুলো সহযোগিতা চাওয়া হবে। আর বিষয়টি নিয়ে বিদেশী দাতা সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনা করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।  সোমবার মন্ত্রিসভায় নিয়মিত বৈঠকে এ নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই বৈঠকে সিন্ধান্ত হয় বাংলাদেশে যত রোহিঙ্গা আছে তাদেরকে কক্সবাজার থেকে সরিয়ে হাতিয়ার দ্বীপাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে। দাতারা সহযোগিতা করলে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প করতে যা করা প্রয়োজন তা করা হবে। সেখানে কয়েক হাজার একর জমি রয়েছে। দাতারা সহযোগিতা করলে রোহিঙ্গাদের ঘর তৈরী করে দেওয়া হবে। দরকার হলে নিরাপত্তাবাহিনী দিয়ে শরনার্থী ক্যাম্পের ঘর তৈরী করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও প্রতিরোধ কমিটির সাবেক নেতা মাহমুদুল হক চৌধুরী জানান, কক্সবাজারের টেকনাফে ও নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন জায়গায় বেশিরভাগ লোকই রোহিঙ্গা। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ভাল হয় এসব রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া। আর এমনই চিন্তা করছে সরকার। সরকারের এ ভাল চিন্তায় রক্ষা পাবে কক্সবাজারের পরিবেশ। আর বন্ধ হবে পাহাড় কাটা এবং অপরাধকর্ম।  এছাড়া রোহিঙ্গাদের হাতিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হলে সহজেই সনাক্ত করা যাবে। আর তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াও সহজ হবে। বিশ্ববাসীও দেখবে রোহিঙ্গাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা জানান, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে স্থানান্তর করার চিন্তাটা তেমন যৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে না। কারণ এসব রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করার বিষয়টি তাদেরকে স্থায়ীভাবে সম্পৃক্ত করার মত দেখায়। আর তাদেরকে যে চর এলাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে ওখানে জলদূস্যতার একটি বিষয় রয়েছে। রোহিঙ্গারা এমনিতেই অপকর্মের সাথে জড়িত। আর এ সুযোগকে তারা কাজে লাগাবে কিনা যেটি দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ হবে। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে মিয়ানমার সীমান্তে আশপাশে রাখা উচিত। যাতে করে সহজেই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজার সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল বারী জানান, কক্সবাজারের ইতিহাসই পরিবর্তন হয়ে গেছে রোহিঙ্গাদের কারণে। রোহিঙ্গাদের বইতে বইতে ভার অনেকটা বেশি হয়ে গিয়েছে। তাদের অন্যত্রে সরিয়ে নিলে স্বস্তিতে থাকা যাবে। সরকারের এ চিন্তা খুবই মহৎ। তারা চায় তাদের সরিয়ে ফেলা হোক। তাদেরকে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে সনাক্ত করে রাখা হোক। আর মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। সরকারের এ চিন্তাকে স্বাগত জানাই।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়ার আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিলে ভাল ও খারাপ দুই দিক রয়েছে। খারাপ দিক হল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যদি নিশ্চিত হতে পারে রোহিঙ্গাদের এ দেশে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে তখন তারা পেয়ে বসবে। তারা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের এদেশে পাঠিয়ে দেবে। আর স্থানান্তরের বিষয়টি রোহিঙ্গারা জানলে তারা স্বেচ্ছায় অবৈধভাবে এদেশে চলে আসবে। এটি দেশের জন্য কোনভাবেই মঙ্গলজনক নয়। আর ভাল দিক হল, রোহিঙ্গাদের এক জায়গার রাখা হলে তাদের ফেরত পাঠাতে সুবিধা হবে এবং সনাক্ত করতেও সুবিধা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন