রোহিঙ্গাদের ত্রাণবাহি ট্রাক উল্টে নিহত ৯ শ্রমিকের দাপন সম্পন্ন: তদন্ত কমিটি গঠন

 

ফলোআপ—-

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ির দূর্গম চাকঢালায় মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় নিহত ৯ শ্রমিকের মধ্যে ৮ শ্রমিকের দাপন সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি বাকী বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মারা যাওয়া শ্রমিকের সৎকর্ম ও শেষ করা হয়। ঘটনার দিন রাতেই এদের  এ কাজ শেষ করা হয়।  এদিকে এ ঘটনার বিষয়ে  বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেডকে প্রধান করে  ৪ সদস্য বিশিষ্ট  ১টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসন। কমিটি ৩ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দেবেন বান্দরবান জেলা প্রশাসকের দপ্তরে।

সূত্র আরো জানায়, বান্দরবান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তত্বাবধানে কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় সেদিন ২ ট্রাক ত্রান নিয়ে যাচ্ছিল নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা বড়ছন খোলা নামক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সোসাইটির লোকজন এ ত্রান গুলো  কক্সবাজারের উখিয়া থেকে  নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে  পৌঁছান সকাল ৭ টায়। আর এখান থেকে চাকঢালা বাজার পার হয়ে এ সড়ক  দিয়ে রওয়ানা দেয় সীমান্তের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এভাবে সকাল সাড়ে পৌঁনে ৮ টায় তারা পৌঁছে সড়কের আমতলি মাঠ এলাকা তথা চাকঢালা বিজিবি চৌকি এলাকায়।  সড়ক ও জনপদ বিভাগের এ সড়কটির তদারকি না থাকায় নানা স্থানে খানাখন্দকে বেহাল হয়ে পড়া সড়কের । আর এই স্থানেও এই দূর্গম  অবস্থা হওয়ায় ট্রাকটি মাল সহ উল্টে যায় পশ্চিমপাশে।

এদিকে  শুক্রবার বিকেলে নাইক্ষ্যঙছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামাল জানান, রোহিঙ্গাদের জন্যে দান করা ত্রাণ সামগ্রির জন্যে সরকারি ভাবে গোদাম ঠিক আছে চাকঢালা জুনিয়র হাই স্কুলে। খোদ  মন্ত্রী বীর বাহাদুর  মহোদয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ স্টকে তাদের ত্রাণসামগ্রী জমা দিয়ে আসছেন গত ২ সপ্তাহ। কিন্তু রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণ তারা নিজেরাই বিতরণ করছেন । সেদিনের গুলোও তারা নিয়ে যাচ্ছিল প্রশাসনের অগোচরেই।

এ ছাড়া তিনি আরো জানান, তার পরেও অনাকাঙ্খিত এ ঘটনার খবর পেয়ে বানদরবানের এমপি ও পাবর্ত্য চট্টগ্রাম প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদূর উশৈসিং বৃহষ্পতিবার বিকেলেই  ছুটে আসেন নাইক্ষ্যংছড়িতে। সাথে বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক সহ অনেকেই  তার সাথে ছিলেন। এ সময় জেলা প্রশাসক বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেড  মফিদুল আলম প্রধান করে ১টি কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী  অফিসার, বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও বান্দরবান সড়ক ও জনপদের একজন প্রতিনিধি।

তারা আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেবেন। পরবর্তীতে এ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই ঘটনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

এদিকে এ তদন্ত কমিটিতে থাকা এ প্রভাবশালী সদস্য এ প্রতিবেদককে জানান, অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে তদন্ত হবে। ৯জনের মৃত্যু  আর ১৫জন আহতের এ ঘটনা মর্মান্তিক। তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট সময়ে সুপারিশ সহ প্রতিবেদন জমা দেবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এর পরই বাকী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

অপরদিকে সচেতন মহলের দাবি, এ ঘটনাটি নিছক কোন দূর্ঘটনা নয়। সরকারের নির্দেশে অমান্য করে সংশ্লিষ্টরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রান বিতরণ করে আসছে গত ১৫ দিন। তারা বড়ছন খোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টয়লেট, নলকূপ ও নানা আইটেমের ত্রাণ দিয়ে আসছে নিয়মিত। গত দু’দিন ধরে তারা প্রায় ১ হাজার পরিবারকে বেশ কিছু ত্রাণ দিয়েছেন। আর বৃহস্পতিবার দূর্ঘটনায় হতাহতের এ ট্রাকভর্তি ৫ শত পরিবারের ত্রাণও এই একই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছিল রেডক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রত্যক্ষর্দশী একাধিক এলাকাবাসী জানান, সেদিনের ত্রাণ পরিবহনের জন্যে নিয়োগ দেয়া শ্রমিকদের অধিকাংশই মিয়ানমার নাগরিক ছিল। এদের মধ্যে  ত্র্রাণবাহী  ২টি ট্রাক এবং শ্রমিক নিয়ে আসা আলাদা একটি জীপ গাড়িতে ছিল প্রায় ১’শ। মোট শ্রমিক ২ শত। যাদের মধ্যে  ১ ’শ লেবার এ্ই  ১৪ শত বস্তা ত্রাণ চাকঢালার একটি  মাদ্রাসা এলাকা থেকে  ২ কিলোমিটার দূরের ছনখোলা  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যেতে অপেক্ষা করছিল। এরই মাঝে ঘটে যায় এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন