রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা (৩৬০ মিলিয়ন ডলার) সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সোমবার সুইজার‍ল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত  আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের পক্ষে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক তিনটি সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কুয়েতের উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি সম্মেলন আয়োজিত হয়। রবিবার সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান মার্ক লুকক সাংবাদিকদের জানান, সম্মেলনে আমরা প্রায় ৩৪০ মিলিয়ন ডলার সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি। তিনি বলেন, শিশু, নারী ও পুরুষ মিয়ানমার থেকে পালাচ্ছে। তাদের অবস্থা বিপন্ন।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৪৩ কোটি ৪০ লাখ (৪৩৪ মিলিয়ন) ডলার সহযোগিতা প্রয়োজন।

লুকক সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তা দিতে আমাদের আরও অর্থ প্রয়োজন। এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি দীর্ঘদিনের নিপীড়ন, সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতির ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সংযোজন।

সম্মেলনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রাখাইনের রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সাড়ে তিন কোটি ডলার সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইইউ’র পক্ষে এই সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দেন মানবিক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিশনার ক্রিসটস স্টিলিয়াজিডেজ।

তুরস্ক ঘোষণা দিয়েছে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় ৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। এছাড়া ১৫ মিলিয়ন ডলার সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে কুয়েত। যুক্তরাজ্য ১২ মিলিয়ন পাউন্ড, অস্ট্রেলিয়া ১০ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার,  ডেনমার্ক ১০ মিলিয়ন ডলার।

সম্মেলনে সহিংসতা কবলিত রাখাইনে ত্রাণ সংস্থাগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রবেশাধিকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন লুকক। একই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গাদের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মান ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূত শামীম আহসান জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সহিংসতায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে আসায় সমর্থন করা যায় না।  তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে রোয়ান্ডার গণহত্যার পর কোনও একটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিতাড়িত হওয়ার ঘটনা এটি। এরপরও রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ হয়নি। প্রতিদিন হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশ আসছে।

২৫ আগস্ট পুলিশ ফাঁড়িতে আরসা’র হামলার পর রাখাইনে সেনা অভিযান জোরদার করে মিয়ানমার। অভিযানে সহিংসতায় প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ সেনা অভিযানকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রধান ও মানবাধিকার সংস্থা রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সহিংসতার জন্য রোহিঙ্গাদের দায়ী করেছে। সূত্র: রয়টার্স

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন