নিজস্ব প্রতিনিধি:
মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা লোকদের গ্রহণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে থাইল্যান্ড। ‘তারা তৈরি হলেই’ কেবল তাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে। মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন থাই প্রধানমন্ত্রী। গত সপ্তাহে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা মুসলিম বিদ্রোহীদের হামলার প্রেক্ষাপটে তিনি এ কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রিয়ুথ চ্যান-ওচা সাংবাদিকদের বলেন, ‘থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন উদ্বাস্তু লোকজনকে গ্রহণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।’তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে অতীতের মতো আশ্রয় দেবো… তারা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলে ফিরতে দেবো।
রাখাইন রাজ্য থেকে সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের আন্দামান সাগর অতিক্রম করে থাইল্যান্ডে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। অনেকে স্থলপথেও থাইল্যান্ডে যায়।
তবে ২০১৫ সালে থাই পুলিশ আদম পাচারকারী সিন্ডিকেট দমন করার জন্য অভিযানে নামার সময় রোহিঙ্গা অভিবাসী নৌকাগুলোকে সাগরে ফেলে দেয়। এতে করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় যাওয়া অভিবাসীদের রুটটি ভেঙে যায়।
থাইল্যান্ডে ইতোমধ্যেই কোনো উদ্বাস্তু এসেছে কিনা সে সম্পর্কে থাই প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেননি। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে রোহিঙ্গাদের কথাও বলেননি।
থাই অভিবাসন পুলিশ গত মে মাসে রয়টার্সকে বলেছিল, দমন অভিযান সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডে আদম পাচার বাড়ছে।
রাখাইনে সাম্প্রতিক সহিংসতায় অন্তত ১০৯ জন নিহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই জঙ্গি। তবে নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেসামরিক লোকজনও রয়েছে নিহতের তালিকায়।
গত অক্টোবরের আগের হামলায় সামরিক বাহিনী নৃশংস প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল। তাতে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়েছিল।
অনেক পর্যবেক্ষক এবার ২০১২ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেবার বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ এবং রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ২০০ লোক নিহত হয়েছিল। এছাড়া এক লাখ ৪০ হাজার লোক উদ্বাস্তু হয়েছিল। এদের বেশির ভাগই ছিল রোহিঙ্গা।
মিয়ানমারের ১১ লাখ রোহিঙ্গার প্রতি সদাচরণ দেশটির জাতীয় নেত্রী আঙ সান সু চির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা না বলার জন্য পাশ্চাত্য থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন সু চি।
থাইল্যান্ড উদ্বাস্তুর মর্যাদা দেয় না। এমনকি রোহিঙ্গাদের বৈধ অভিবাসী শ্রমিক হিসেবেও স্বীকার করে না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, পলায়নপর রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে থাইল্যান্ডের উচিত তার নীতি পুনর্বিবেচনা করা।
তিনি বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রী তার ঘোষণার ব্যাপারে আন্তরিক হলে তার উচিত পলায়নমান রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তাদের নীতি পরিবর্তন করা। তিনি বলেন, এসব লোক থাইল্যান্ডে থাকতে চায় না, তারা চায় কেবল মর্যাদার সাথে সাময়িক আশ্রয়।