এবার রোকেয়া পদক পেয়েছেন পাহাড়ের মেয়ে শোভা রাণী ত্রিপুরা

ডেস্ক প্রতিবেদন:
এবার রোকেয়া পদক পেয়েছেন রাঙ্গামাটির পাহাড়ের মেয়ে লেখক শোভা রাণী ত্রিপুরা। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া পদক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নে নারী পুরুষ সবার সমান অবদান রাখতে হবে। নারীদের নিজ পায়ে দাঁড়ানোরও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

নারী উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য প্রতিবছরের ন্যয় এ বছরও রোকেয়া পদক দেওয়া হয়েছে দেশের গুণী নারীদের। এবার লেখক শোভা রাণীসহ বেগম রোকেয়া পদক-২০১৭  পেয়েছেন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ (মরণোত্তর), চিত্রশিল্পী সুরাইয়া রহমান, সংগঠক মাজেদা শওকত আলী, সমাজসেবক মাসুদা ফারুক রত্না।

শোভা রাণী ত্রিপুরার জন্ম রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলায়। তাঁর স্বামী মংছেনচীং সাহিত্যে ২০১৬ সালে একুশে পদক পান। ওই বছর শোভা রাণীও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ‘জয়িতা’ হিসেবে পুরস্কৃত হন। কবি ও কথাসাহিত্যিক শোভা রানী ত্রিপুরা পেশায় শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চা আর লেখালেখিতে তাঁর বিশেষ আগ্রহ। শৈশব-কৈশোর থেকে লেখালেখির অভ্যাস। ছোট বয়সে লেখায় হাতেখড়ি। শোভা ত্রিপুরা নিজ জনগোষ্ঠীর একজন উদ্যমী নারী। ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ছাড়াও তিনি লিখেছেন ছোটগল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী, গান, উপন্যাস ইত্যাদি।

১৯৮৪ সালে আরেক লেখক ও গবেষক মংছেনচীং রাখাইন (মংছিন) এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শোভা ত্রিপুরা। এ যাবত তাঁর প্রকাশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঝরাপাতা (কবিতা) ১৯৯৬, ত্রিপুরা জাতির ইতিকথা ২০০১, ত্রিপুরা জাতির রূপকথা ২০০২, জাতক (বুদ্ধ) ২০০৪, ত্রিপুরা জাতি ২০০৭, ত্রিপুরা জাতির ইতিবৃত্ত, আলোময়ীমা ত্রিপুরেশ্বরী, শুভ বাংলা নববর্ষ ২০১২, স্বপ্নের ধূসর ছায়া (গল্প) ২০১৩, ‘রাখাইন ও ত্রিপুরা জাতিসত্তা’ ২০১৪, ধূসর পাহাড়ে সবুজ তারুণ্য (গল্প) ২০১৪, ত্রিপুরা জাতির কিংবদন্তী ২০১৪, একুশের অপরাজিত কথামালা (নাটক) ২০১৪, গিরি নন্দিনী (কবিতা) ২০১৪ ও আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহার ও ভদন্ত চন্দ্রমণি মহাথেরো প্রভৃতি। শোভা ত্রিপুরার সাহিত্য কর্মের বেশি অংশ জুড়ে নিজ জাতি-ধর্ম, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, ইতিহাস স্থান পেয়েছে। তাছাড়া বৌদ্ধ ধর্ম ও জাতক, রাখাইন জীবনধারা ইত্যাদি নিয়েও কাজ রয়েছে তাঁর।

বাবার চাকরি সূত্রে শোভা ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়িতে বসবাস করছেন। ১৯৭৭ সালে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে প্রথমবর্ষে পড়া অবস্থায় শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন। এর আগে শোভা ত্রিপুরা ১৯৭৩ সালে বঙ্গভবনে কৃতী যুব সংবর্ধনায় অংশ নেন। ১৯৯৯ সালে ঢাকা নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার লেখিকা হিসেবে সংবর্ধিত হন। ১৯১২ সালে মহান স্বাধীনতা দিবসে মহালছড়ি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ কর্তৃক সাহিত্যে অবদানের জন্য ‘সংবর্ধনা’ প্রদান করা হয় তাঁকে। শিক্ষকতায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তিনবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন। কবি ও কথাসাহিত্যিক শোভা ত্রিপুরা বাংলাদেশ ত্রিপুরা জাতির মসী চালনায় ‘অগ্নিকন্যা খেতাব’ প্রাপ্ত হন। সামাজিক অনেক কাজে জড়িত শোভা ত্রিপুরা। মহালছড়ি শিল্পকলা একাডেমির সদস্য তিনি। জাতীয় মহিলা সংস্থা, রাখাইন-ত্রিপুরা প্রকাশনা সমিতি, বিশ্ববাংলা সাহিত্য পরিষদ, ছায়ানীড় এর সাথেও সম্পৃক্ত।

উল্লেখ্য, ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে এক জমিদার পরিবারে রোকেয়ার জন্ম হয়। একই দিন, ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন। নারীশিক্ষার প্রসারে কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। নারীদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে মাথা উচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। তার সম্মানে প্রতি বছর এই পদক প্রদান করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন