রুমা-রোয়াংছড়ি সীমান্তে ম্রক্ষ্যংখালের ‘সাকলাই ঝিরি’তে অবাধে পাথর উত্তোলণ

ruma-stone-pic-copy

রুমা প্রতিনিধি:

কোনো প্রকার ঝুঁকি নিরূপণ ছাড়াই ঝিরি-ঝরনা থেকে অবাধে পাথর উত্তোলণ চলছে। প্রাকৃতিক ঝিরি-ঝরনায় পাথর উত্তোলণকারীদের পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র বা প্রশাসনের অনুমতি নেই। প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ রক্ষায় পাথর উত্তোলণ বন্ধে দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রুমা-বান্দরবান সড়কের ম্রংগো ডাকবাংলো হয়ে  ম্রক্ষ্যংখালের সাকলাই ঝিরির উজানের ভিতরে গেলে বোল্ডার পাথরের স্তুপ আর স্তুপ চোখে পড়ে। দৃশ্যত মাটি খুঁড়ে বোল্ডার পাথর উত্তোলণ করে স্তুপ রাখা হয়েছে, তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলাদ্বয়ের আলেক্ষ্যং মৌজা ও পান্তলা মৌজার মানচিত্রের সীমারেখা হচ্ছে ‘সাকলাই ঝিরি’।

 বোল্ডারের স্তুপগুলো দেখতে গিয়ে কথা হয় শ্রমিক সর্দার আব্দুল্লাহ(২৭)‘র সঙ্গে। তিনি পার্বত্যনিউজকে বলেন, বোল্ডার পাথরের স্তুপ গুলো বান্দরবানের হাফেজ ঘোনার বাসিন্দা বশর কোম্পানির। পাথর উত্তোলণে অনুমতি কাগজপত্র আছে কিনা তা আমি জানিনা। এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের দেখভাল করা তার দায়িত্ব বলে জানিয়েছে শ্রমিক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদ বশর কোম্পানি বলেন, রোয়াংছড়ি উপজেলার অধীনে একটি অনুমতি পত্র আছে। অনমতি পত্র দেখাতে বলা হলে তিনি বলেন, নিরাপত্তাবাহিনীর পাথর সরবরাহ করার জন্য পাথর উত্তোলনের কোনো অনুমতি প্রয়োজন হয়না বলে উল্লেখ করেন বশর কোম্পানি। তবে কোন নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে বিক্রি করবেন, তা জানাতে অস্বীকৃতি জানায় বশর কোম্পানি।

 স্থানীয় লোকজন জানায়, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলা সীমারেখা ম্রক্ষ্যংখালের ‘সাকলাই’ ঝিরিতে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অক্টোবর মাস থেকে মাটি খুঁড়ে বোল্ডারের পাথর স্তুপ করা শুরু হয়। ডলুঝিরি পাড়াবাসিন্দা সুইসিঅং ও সাবেক ইউপি সদস্য থুইসাচিং বলেন, অবাধে পাথর উত্তোলণ অব্যাহত থাকায় ছড়া-ঝিরিগুলোতে পানি প্রবাহ  বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হচ্ছে। পাথর উত্তোলণ বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে এ ঝরণায় পানি শুকিয়ে যাবে। আর পাড়াগুলোতে পানির অভাবে  মানুষ  এখানে বসবাস করতে পারবেনা বলে জানায় স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের হাফেজ ঘোনার বাসিন্দা বশর কোম্পানি শ্রমিক লাগিয়ে পাথর উত্তোলণ করছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নানা জায়গা থেকে অবৈধভাবে আহরিত এইসব পাথর বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে সরবরাহ করে ব্যবসা করছে। অব্যাহত পাথর উত্তোলণের কারণে একদিকে প্রশাসন ব্যাপকহারে রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বিপন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ। তবে এখানে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের  কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নেই বলেও জানায় স্থানীয়রা ।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মোহাম্মদ দাউদ হোসেন চৌধুরী বলেন, রোয়াংছড়ি উপজেলায় পাথর উত্তোলনে কারোর কোনো অনুমতি পত্র নেই। ঝিরিতে অবাধে পাথর উত্তোলণের বিষয় খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ম্রক্ষং পাড়া চনুমং মারমা জানান, অক্টোবর মাসের শুরু থেকে বশর কোম্পানি ধাপে-ধাপে প্রায় ৫০জন শ্রমিকের মাধ্যমে বোল্ডার পাথর উত্তোলণ করে স্তূপ করিয়েছে। ফলে এই সাকলাই ঝরনা পানি প্রবাহ শুকিয়ে যাবে। পানির অভাবে ডলুঝিরির দু‘টি পাড়ার ৮০টি পরিবার এখান থেকে ভবিষ্যতে অন্যত্র চলে যেতে হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।

শৈসিংঅং মারমা ও চনুমং মারমার ভাষ্য মতে, বর্তমানে বোল্ডারের পাথর স্তুপগুলো পরিমাণে দুই লক্ষ ঘনফুটের বেশি জমানো হয়েছে। এসব পাথর বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অবাধে। এখানে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে বলেও জানায় যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন