রামু-নাইক্ষ্যংছড়িতে কমিশন বানিজ্যে পল্লী চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক নির্বিচার ব্যবহার

1010957

মো.আবুল বাশার নয়ন:
নাইক্ষংছড়ি ও রামু উপজেলায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে কমিশন বাণিজ্য এখন রমরমা। চিকিৎসক, দালাল আর প্যাথলজি ও ল্যাব মালিকেরা যোগসাজস করে এ ব্যবসা চালাচ্ছেন। ঔষধ ব্যবসায় ও চিকিৎসকদের প্রতি নজরদারী না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এলএমএফ, আরএমপি, ডিএম, ভিএইচডব্লিউটিসি, পিসি ৩-৬ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ব্যবসা করছে তারা। এ সকল চিকিৎসকরা বিশেষ করে অধুনালুপ্ত ঔষধ কোম্পানী ও ল্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করছেন বলে সচেতন মহলের অভিযোগ।

মোমেনা আক্তার (২২) নিজ কন্যা শিশুর চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর হাসপাতালে। জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রুম থেকে বের হওয়ার সময় পথরুদ্ধ করে প্রেসক্রিপশনটি দেখতে চান একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভ। অপরদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির পার্শ্ববর্তী গর্জনিয়া বাজারের একটি ফার্মেসীতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ডাক্তারের রুমের আশ পাশে পূর্র্ব থেকে অবস্থান করা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দ্বারা একই সমস্যার সম্মুখীন হন জামছড়ি এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম। এভাবে ওষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের চাপের মুখে শুধু চিকিৎসাপ্রার্থী নয়; খোদ প্রকৃত ডাক্তারও বিরক্তবোধ করছেন। যদিওবা কমিশন বানিজ্যের কারনে পল্লী চিকিৎসকরা মানিয়ে চলেন।

নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেজান আকবর (ছদ্ধ নাম) উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক। আর্থিক অনটন ও সরকারী চাকুরী বঞ্চিত হয়ে বাধ্য হয়ে একটি ঔষধ কোম্পানীতে যোগদান করেন। পরিবারের ভরণ পোষনের জন্য বেতন পেলেও তাতে সন্তুষ্ট নন তিনি। প্রতিদিন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশে কথিত ডাক্তারদের নিত্যদিন চলাচলে মোটর সাইকেলে প্রাইভেট ড্রাইভারের ভূমিকা পালন ছাড়াও উক্ত চিকিৎসক নিয়মিত কোম্পানীর ঔষধ লিখছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হয়।

উক্ত মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভ এর মতে ‘পল্লী চিকিৎসকের সার্টিফিকেট’ নিয়ে বিভিন্ন ফার্মেসীতে ডাক্তার সেজে বসার কারনে তার কদর বহুগুন। নিয়মিত পূজনীয় ভূমিকা পালনের পরও উক্ত চিকিৎসককে প্রতি মাসে অন্তত ৩/৪ হাজার টাকা মূল্যের গেটিজ (ঔষুধ) দিতে হয়। এভাবে প্রতি কোম্পানী থেকে ৩/৪ হাজার টাকা আয় অনুযায়ী নাইক্ষ্যংছড়ি, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, বাইশারী, দোছড়ি, চাকঢালা, কাউয়ারখোপ এলাকায় প্রায় ২৭/২৮টি কোম্পানী থেকে লক্ষাধিক টাকার উর্দ্ধে উৎকোচ গ্রহণ করছে প্রতিজন পল্লী চিকিৎসক। এছাড়াও গ্রামের সহজ সরল মানুষ গুলোকে অপ্রয়োজনীয় টেষ্ট করার নামেও বিভিন্ন ল্যাব থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ডাক্তারের সহকারী হিসেবে কাজ করা অথবা পল্লী চিকিৎসক কিংবা এলএমএফ কোর্স পাস করা চিকিৎসকরা। তাদের অধিকাংশই ফার্মেসি ব্যবসার সাথে জড়িত। নামমাত্র ভিজিট নিয়ে অপ্রয়োজনে ওষুধ লিখে তা রোগীদের কাছে বিক্রি করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেন।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, অনভিজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে যেসব ওষুধ লিখেন তার অধিকাংশই নিম্নমানের কোম্পানির। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেওয়া হয় উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিক। শিশুকে নানা রোগের জন্য তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেফুরক্সিম, সেফিক্সিম কিংবা সেফোডক্সিম গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক লেখে। যেসব রোগের জন্য এসব অ্যান্টিবায়োটিক লেখা হচ্ছে এর অধিকাংশতেই কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার দরকার নেই বলে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শাওন বড়ুয়া বলেন- যারা চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রে লিখেন তারা ভাল করেই জানেন, অকারণে অ্যান্টিবায়োাটিক দেয়া ঠিক না, এতে ভাল বদলে খারাপ হয়। এছাড়াও পরীক্ষা নিরীক্ষার ভাল ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে মনগড়া ঔষধ দিয়ে থাকে। অপরদিকে অ্যান্টিবায়াটিক দিয়ে অল্প সময় রোগীকে সুস্থ করে তোলার মাধ্যমে নিজেকে ভাল ডাক্তার হিসাবে জাহির করার জন্য তারা এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামেন বলে অভিযোগ করেন অভিজ্ঞ ডাক্তাররা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন