রামুতে শিবদর্শন ও মহারাম নবমী মেলায় লাখো পূর্ণ্যাথীর ভিড়

DSC_0248 copy

রামু প্রতিনিধি :
নানান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে কক্সবাজাররে রামুর ঐতহিাসকি রামকুট র্তীথধামে চলছে ৫ দিন মহারাম নবমী মেলা। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) মেলার ৪র্থ দিনে বাসন্তীদেবীর পূজা, শিবদর্শন, মহানামযজ্ঞ ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গনে বসেছিল লাখো পূর্ণ্যাথীর ঢল। শনিবার (১৬ এপ্রিল) বিজয়াদশমী, মহানামযজ্ঞ র্পূণাহুতি, মোহন্ত ও বৈষ্ণব দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলা শেষ হবে।

গত ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রামচন্দ্রের জন্মোৎব উদযাপন উপলক্ষে শুরু হয় শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলা। পাঁচ দিনব্যাপী শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলায় প্রতিদিন ও রাতে নামসূধা পরিবেশন করে, গোপালগঞ্জ’র নর-নারায়ণ সম্প্রদায়, সিলেটের রাম কানাই সম্প্রদায়, জগন্নাথ সম্প্রদায়, চট্টগ্রামের সচ্চিদানন্দ সম্প্রদায়, স্বামী জগদানন্দ সম্প্রদায় ও রামু উপজেলার উমখালী গীতা সংঘ।

মেলার দর্শনার্থীরা জানান, সনাতন ধর্ম মতে দক্ষিণের পাহাড়ের শীর্ষে রাজমুকুটের মত সবুজের সমারোহে প্রতিষ্ঠিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূণ্যোজ্জ্বল রামকুট তীর্থধাম। এখানে রাম ও সীতা দেবীর মত মহাপুরুষের বিদর্ভকালের বিচরণ ছিলো। দুর্জন ক্লিষ্ট ধরা ও বিপর্যস্থ মানবকুলকে বিপন্ন জীবন থেকে পরিত্রাণের অভিপ্রায়ে শ্রীশ্রী ভগবান কর্তৃক প্রেরিত সপ্তমাবতার শ্রীশ্রী রামচন্দ্র পিতৃসত্য পালনার্থে বনবাসকালে অপহৃত সীতা দেবী তৎভ্রাতা লক্ষন ও বীর শিষ্য হনুমান সমভিব্যবহারে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের পথে রম্যভূমি রামুর এই স্থানটিতে অবস্থান করেছিলেন। যার পূণ্যপদভারে বিশেষত্ব ও অমরত্ব লাভ করেছে গিরিময় এ স্থানটি।

 

DSC_0257 copy

শ্রীশ্রী রামচন্দ্রের বসবাস স্থানটি বর্তমানে রামকুট তীর্থধাম নামে পরিচিত। পূণ্যাত্মাধর্মাবতার শ্রীশ্রী রামচন্দ্রের পবিত্র পদচারনায় ধন্য হয়েছিল রামু। পূণ্যদ্যুতির আলোকজ্জ্বল মহিমায় ধন্য হয়েছিল রামকুট। এ বিশ্বাসে রামু রামকুটে ছুটে আসেন সনাতন ধর্মালম্বীরা। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পাঁচ দিনব্যাপী রামু উপজেলার রামকুটের শিবদর্শন ও মহারামনবমী মেলা উদযাপন করা হচ্ছে। বহু দূর-দূরান্ত থেকে রাম চন্দ্রের জন্মতিথি, বাসন্তী পূজা, নাম সংকীর্তন, মহোৎসব, শিবদর্শন ও মেলায় পূণ্য পাথেয় অর্জনের জন্য হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে রামকুট তীর্থধামে।

মহারামনবমী মেলা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলায় ভক্তিমূলক গান, মহাপ্রসাদ বিতরণ, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নামসংকীর্তন, ধর্মসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, সীতাকুন্ড, পটিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও ভারতের কলকাতা থেকে রামকুট তীর্থধাম দর্শনের জন্য পুণ্যার্থীরা ছুটে আসেন বলে জানান মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বদীপ শর্মা। সাধারণ সম্পাদক অজিত ধর জানান, গত বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পূণ্যর্থীরা মেলায় আসতে শুরু করেন। তাঁরা প্রতিদিন রামকুট তীর্থধাম পুকুরে পূণ্য¯œানে, বাসন্তী পূজা, শিবদর্শন, অহোরাত্র মহানামযজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরনে অংশ নেন।

DSC_0259 copy

এ মেলায় হিন্দুধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠির মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠির লোকজন সমাবেশে স্বতস্ফুর্ত ভাবে যোগ দিয়েছেন বলেও তিনি জানান। রামকুট তীর্থধাম পরিচালনা পরিষদের সাধারন সম্পাদক প্রকাশ শিকদার জানান, পিতৃসত্য পালন করতে ত্রেতাযুগে ভগবান শ্রীশ্রীরামচন্দ্র জটাবল্কল ধারণ করে ভার্যা সীতা ও অনুজ লক্ষ্মণসহ বনের ভরদ্বাজ মুনি আশ্রমে উপস্থিত হন। আশ্রমে ভরদ্বাজ মুনিসহ অনেক মুনি ঋষির সাথে দেখা হলেও অগস্ত্য মুনির সাথে রামের দেখা হয়না। রাম অগস্ত্য মুনির আশ্রমের পৌঁছলে, অতিথিকে মহাসমাদর করেন। অগস্ত্য মুনি রামকে বিশ্বকর্মার তৈরী বৈষ্ণব ধনু ব্রহ্মাস্ত্র এবং অক্ষয় তুনীরদ্বয় প্রদান করেন। রামচন্দ্রকে অগস্ত্য মুনি পঞ্চবটী নামে একটি অতি সুন্দর বনের সন্ধান দেন। সে বনে সুন্দর ফলমূল, মিষ্টিজল, হরিণ-ময়ূর পাওয়া যায়। সুখে বসবাস করতে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতাকে নিয়ে দক্ষিণের পঞ্চবটীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যরে অশ্বথ, বিল্ব, বট, অশোক, আমলকি এই পঞ্চ বৃক্ষের পঞ্চবটী বনে কুটির নির্মাণ করে কালযাপন করেন। সনতাতন সম্প্রদায়ের মতে খ্রিষ্টপূর্ব ২৮০০ অব্দে শ্রীশ্রীরামচন্দ্র পঞ্চবটীবনে পৌঁছে ছিলেন। রামচন্দ্রের স্মৃতিকে ধারণ করে পঞ্চবটীবন আজকের শ্রীশ্রীরামকুট তীর্থধামে সনাতন ধর্মালম্বীরা প্রতিবছর এ সময়ে রামচন্দ্রের জন্মোৎব উদযাপন করে আসছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন