রামগড়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা ১৪ জন মাদ্রাসা ছাত্রী পুনরায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে: অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন

Ramgarh 01.9
রামগড় প্রতিনিধি :
হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে  বুধবার  বাড়ি ফেরা রামগড় গণিয়াতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার ৩৫ জন ছাত্রীর মধ্যে ১৪ জন পুনরায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। ১২ জন ছাত্রী রামগড় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এমতাবস্থায় সন্তানদের এমন অসুস্থতায় অভিভাবকরা বেশ উদ্বিগ্ন। অবশ্য চিকিৎসারা বরাবরই বলছেন, ভয়ের কোন কারণ নেই, ছাত্রীরা ভালো আছে। ধীরে ধীরে সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে যাবে। এদিকে মঙ্গলবার ছাত্রীদের গণ অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় মাদ্রাসার শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গঠিত তদন্ত কমিটি বৃহষ্পতিবার তাঁদের তদন্ত কাজ শুরু করতে পারেননি।

হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে  চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফেরা ৩৫ জন ছাত্রীর মধ্যে পুনরায় অসুস্থ হয়ে  বুধবার রাতে ১২ জন এবং বৃহষ্পতিবার সকালে আরও দুজন ছাত্রী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের অভিভাবকরা বলেছেন, বাসায় যাওয়ার পর  প্রচন্ড মাথা ব্যথা ও খিঁচুনী হয়ে মেয়েরা অজ্ঞান হয়ে পড়ায় তাদের পুনরায় হাসপাতালে এনেছেন। এদিকে বৃহষ্পতিবার রাতে  জিন্নাত আরা ও শাহেদা নামে দুজন ছাত্রীকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছেন তাদের অভিভাবকরা।

৯ম শ্রেণীর ছাত্রী তানিশার মা  বিবি আয়েশা জানান, মঙ্গলবার চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর ঐ রাতেই মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যান। বুধবার রাতে হঠাৎ আবার প্রচন্ড মাথা ব্যথা ও শরীরে খিঁচুনী হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে। এ অবস্থায় বৃহষ্পতিবার সকালে তাকে পুনরায় হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছেন। একই কথা বলেছেন, ৯ম শ্রেনীর অপর ছাত্রী আকলিমার মা আনোয়ারা বেগমও। তিনি বলেন, ডাক্তাররা বলছেন মেয়েরা সম্পূর্ন সুস্থ। তাহলে তাদের মাথা ব্যথা, খিঁচুনি, মাথা ঘোরে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি হচ্ছে কেন। হাসপাতালে আলাপকালে ছাত্রীদের  সকল অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মেয়েদের সঠিক রোগ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। বুধবার রাতে ও বৃহষ্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া  ছাত্রীরা হচ্ছে  শাহেদা, আয়েশা, জেসমিন, তানিশা, আকলিম, সখিনা, জানানতুল ফেরদৌস, সাহিদা আক্তার, রোকেয়া, খাদিজা, জিন্নাত, জাকিয়া, মারজান ও ফেরদৌস।

কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার তারেক নিজামী ও ডাক্তার রানা চৌধুরি  বলেন, ছাত্রীদের মনে এখনও ভয় ও আতংক রয়ে গেছে। দুশ্চিন্তা মনের মধ্যে ভর করে  থাকায় তাদের মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরানো অনুভব হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ওরা সবাই সুস্থ। তাদের মন থেকে ভয় ও আতংক দূর করতে অভিভাবকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে কাউন্সিলিং করার জন্য। চিকিৎসকদ্বয় আরও বলেন, মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে মেয়েরা ঠিকমত খাওয়া দাওয়াও করছে না । তাই তারা শারিরীকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি তাদেরকে ভাল ভাবে খাওয়া দাওয়াও করাতে হবে।

এদিকে রামগড় উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, অসুস্থ হয়ে পড়া ছাত্রীদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। যথাযথ চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বুধবার রাতে পুনরায় ১২জন ছাত্রী ভর্তি হওয়ার খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে যান। এর আগে রামগড় পৌরসভার মেয়র মো. শাহ জাহান কাজী রিপনও ছাত্রীদের দেখতে হাসপাতালে  আসেন।

গণহারে ছাত্রীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে গঠিত কমিটি গতকাল বৃহষ্পতিবারও তাদেন তদন্ত কাজ শুরু করতে পারেননি। কমিটির সদস্য ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার তারেক নিজামী বলেন, বুধবার ও বৃহষ্পতিবার মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় তাঁরা তদন্ত শুরু করতে পারেননি। মাদ্রাসা খুললে তাঁরা কাজ শুরু করবেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন