রাতের আঁধারে বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও মামলা দিয়ে হয়রানি
চকরিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বংশ পরম্পরায় বৈধভাবে ভোগ-দখলীয় জায়গা জোরপূর্বক জবর-দখলে নেওয়ার চেষ্টা, রাতের আঁধারে বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযোদ্ধার জায়গাকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পৌরসভার নামার চিরিঙ্গাস্থ মুক্তিযোদ্ধা মরহুম জহিরুল ইসলাম চৌধুরীর সহধর্মীনি সেলিনা চৌধুরী রবিবার() সকালে চকরিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত এসব অভিযোগ করেন।
সেলিনা চৌধুরী অভিযোগ করেন, এসবের প্রতিবাদ করায় প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রীসহ পরিবার সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায়ও সাধারণ ডায়েরী রুজু করা হয়েছে মিথ্যা অভিযোগ এনে।
অবশ্য মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকেও থানায় পাল্টা সাধারণ ডায়েরি রুজুর পর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে কাউন্সিলর মুজিব তার দলবল নিয়ে বাড়ির সামনে গিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এতে ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়েছেন এই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে মায়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ছোট ছেলে আবরার নাবিল।
লিখিত বক্তব্যে সেলিনা চৌধুরী অভিযোগ করেন, কয়েকবছর আগে তাঁর স্বামী মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম চৌধুরী মারা যান। আবার বড় ছেলে রণি চৌধুরী থাকেন ফ্রান্সে। মেঝ ছেলে খাইরুল ওয়ারা রবিন সরকারি চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। বাড়িতে থাকেন ছোট ছেলে কলেজ পড়ুয়া আবরার নাবিল।
তাছাড়া প্রায় সময় তিনি (সেলিনা চৌধুরী) থাকেন সিলেটে বাপের বাড়িতে। এই সুযোগে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও একসময়ের শিবির ক্যাডার বর্তমানে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী মো. মুজিবুল হক তাদের পরিবারের সহায়-সম্পদ জবর-দখলে নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছেন।
সেলিনা চৌধুরীর অভিযোগ-কাউন্সিলর মুজিবের অপচেষ্টার অংশ হিসেবে গত ২৮ সেপ্টেম্বর মুষলধারে বৃষ্টিপাতের সময় ভোররাতে পরিকল্পিতভাবে একে একে চারটি ভাড়া বাসায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তারও আগে আরেকটি বসতবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব আগুন লাগার পেছনে কাউন্সিলর মুজিবের হাত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পৌরশহরের বায়তুশ শরফ সড়কস্থ তার স্বামীর বংশ পরম্পরায় বাউন্ডারিসহ বৈধভাবে ভোগ-দখলীয় এবং স্বামীর নামীয় খতিয়ানভুক্ত (বিএস খতিয়ান-৫৩২, বিএস দাগ-৬৩৩) ১৭ শতাংশ জায়গা রয়েছে। ওই জায়গায় একপাশে দোকানঘর নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে ভোগ-দখলে রয়েছি। বাকী জায়গায় ২০১৩ সালে দোকান-ঘর নির্মাণ করার সময় তখন আমার স্বামী মারা যান।
এ কারণে ওইসময় আর কাজে হাত দিইনি। সেই জায়গায় অতিসম্প্রতি দোকান-ঘরের সংস্কারকাজ করতে গেলে মুজিবুল হক সদলবলে হামলে পড়ে সেখানে। তার (মুজিব) সশস্ত্র বাঁধার মুখে আমরা আজ এগুতে পারিনি। তার ওপর আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ এনে সাধারণ ডায়েরি রুজু করেছেন। বিষয়টি জানার পর থানার ওসিকে গিয়ে আসল ঘটনা অবহিত করি এবং আমি বাদী হয়ে কাউন্সিলর মুজিবের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি রুজু করি।’
সেলিনা চৌধুরী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়েও আজ তার কাছে অসহায়। আমি কেন তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি, এনিয়ে সে (মুজিব) আমার বাড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে গিয়ে ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দিয়ে এসেছেন। সে একসময়ের শিবির ক্যাডার হয়েও কিভাবে আওয়ামী লীগের মতো একটি দলে সে স্থান পেয়েছে তা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা। সে না-কি এখন উপজেলা যুবলীগের বড় নেতা। এ সুবাদে সে গরীব মানুষের জায়গা দখল করে নিয়ে রাতারাতি শতকোটি টাকার সহায়-সম্পদের মালিক বনে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ভিটেছাড়া করতে ইতোপূর্বে পর পর দুইবার আমাদের বসতবাড়িতে রাতের আঁধারে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনাও সংঘটিত করেছেন কাউন্সিলর মুজিবুল হক। এমনকি আমাদের জায়গাকে পরিকল্পিতভাবে ময়লা-আবর্জনার ডিপোতে পরিণত করেছেন। এখন প্রতিনিয়ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছেন এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। তাই আমি এ ব্যাপারে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
তবে এসব অভিযোগ একেবারেই অবান্তর বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত পৌর কাউন্সিলর ও চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞা না নেমে আমাদের পৈত্রিক জায়গায় কাজ করায় আমি বাঁধা দিয়েছি এবং থানায় জিডি করেছি। তাই আমার বিরুদ্ধে এসব উল্টাপাল্টা অভিযোগ করছেন তারা।’