রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন কনসালটেন্ট কোয়ার্টার ব্যবহার করছে ডাক্তার মং হ্লা প্রু

Bandarban Coatar PiC-6.9

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বান্দরবান জেলার সরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সেবা না মিললেও সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিতে কৌশলে নামে-বেনামে নিয়ম বহিভূর্ত ভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের কনসালটেন্ট কোয়ার্টার এক ডাক্তার ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

স্থানীয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারীদের অভিযোগ, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী থাকলেও চিকিৎসকরা কর্মস্থলে না থাকছে না। বেশীর ভাগ সময় নার্স ও ব্রাদাররা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর নাইক্ষ্যংছড়িতে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. মং হ্লা প্রু। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি ছাড়াও আরো  ৩ জন চিকিৎসক কাগজে কলমে থাকলেও বেশীর ভাগ সময় কর্মস্থলে থাকেন না চিকিৎসকরা। খোদ ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মং হ্লা প্রু কর্মস্থলে না থাকায় কার্যত: অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জানিয়েছে স্থানীয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারীরা ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মং হ্লা প্রু কর্মস্থলে না থাকলেও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জেলা সদরে স্বাস্থ্য বিভাগের কনসালটেন্ট কোয়ার্টারের দ্বিতীয় তলায় বসবাস করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। কনসালটেন্টের জন্য বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অফিস সহকারী প্রণব দাশের নামে বরাদ্দ নিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ডা: মং হ্লা প্রু ব্যবহার করছেন। বেতন  স্কেলে সরকারী কোয়ার্টারের ভাড়া কয়েকগুন বেশি হওয়ায় সরকারের কোষাগারে কম টাকা জমা দিতে এ অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

সূত্র মতে, ডাক্তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরো অনেকে একইভাবে নামে-বেনামে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারী কোয়ার্টারগুলো ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অফিস সহকারী মোক্তার হোসেন এবং প্রধান সহকারী ‘মং মেনু’ দুজনের সহযোগীতায় ডাক্তার এবং কর্মচারীরা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বহু বছর ধরে এ অনিয়মগুলো চালিয়ে আসছেন।

অফিস সহকারী প্রণব দাশ বলেন, শহরে আমার পারিবারিক বসতবাড়ি থাকায় বরাদ্দ থাকা সত্বেও আমি কনসালটেন্ট কোয়ার্টারে থাকিনা। সেখানে ডা. মং হ্লা প্রু স্যার পরিবার নিয়ে থাকেন। বেতন স্কেল অনুপাতে কোয়ার্টারের ভাড়া আমার বেতন থেকে কেটে নেয়া হয়। পরে মং হ্লা প্রু স্যার ভাড়ার টাকাটা নগদে নিয়মিত পরিশোধ করে দেন।

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী মং মেনু বলেন, ২০১৩ সাল থেকে অফিস সহকারী প্রণব দাশের নামে কনসালটেন্ট কোয়ার্টারের একটি বাসা বরাদ্দ রয়েছে। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বর্তমানে ঐ কোয়ার্টারটি ডা. মং হ্লা প্রু এবং তার স্ত্রী ডা. বানু ব্যবহার করে আসছেন। তবে আমার আমলে কোয়ার্টারটি বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মং হ্লা প্রু বলেন, আমার নিজস্ব বাড়ি না থাকায় অফিস সহকারীর নামে বরাদ্দকৃত কনসালটেন্ট কোয়ার্টারের নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করে বসবাস করে আসছি। দীর্ঘদিন রাজস্ব ফাঁকি দিলেও অহংকার করে বলেন, বেতন স্কেলে অনুপাতে এতদিনের ভাড়া বাবদ সরকার যত টাকা পাবে তাও দিতে হলে দিবো। আমি দিবোনা বলছিনা, সরকার ভাড়ার পাওনা টাকা চাইলে আমি দিতে বাধ্য।

তিনি আরো বলেন, কর্মস্থলে আমি’সহ চিকিৎসকরা থাকিনা কথাটি সত্য নয়। ট্রেনিং এবং অফিসিয়াল কাজে বিভিন্ন সময়ে জেলা সদরে থাকতে হয়। কিন্তু তবুও কমপক্ষে একজন চিকিৎসক সবসময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত অবস্থায় থাকেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন