রাজবন বিহারে শেষ হলো দু’দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব

Rangamati chibor dan pci01

স্টাফ রিপোর্টারঃ  

ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি রাজবন বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দু’দিনব্যাপী দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব শুক্রবার শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার চরকায় সুতা কেটে শুরু এ ধর্মীয় মহোৎসব শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। তার আগে ২৪ ঘন্টায় তৈরি কঠিন চীবর বৌদ্ধধর্মীয় গুরুদের পরিধেয় বস্ত্র মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত বৌদ্ধ আর্য্যপুরুষ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের উদ্দেশে শোভা যাত্রা সহকারে উৎসর্গ করা হয়। শুক্রবার সকাল থেকে ভিক্ষুসংঘের পিন্ডদান, বুদ্ধপূজা, কল্পতরু শোভাযাত্রা, পঞ্চশীল প্রার্থনা, চীবর উৎসর্গ, সংঘদান, অষ্ট পরিস্কার দান, ধর্মসভা, ধর্মীয় দেশনাসহ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানসূচি পালিত হয়।

অনুষ্ঠানে অগণিত পুণ্যার্থীর ঢল নামে। সমাগম ঘটে লাখো মানুষের। অগণিত পূণ্যার্থীর পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থী। সদ্ধর্ম দেশনাকালে বৌদ্ধ আর্য্যপুরুষ মহাসাধক পরমপূজ্য শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের হিতোপদেশ উদ্ধৃতি দিয়ে তার অনুগত শীষ্যমন্ডলী হিংসা-বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা, ক্ষমতার গর্ব, বর্বরতা ও পাশবিকতার বিপরীতে বুদ্ধের প্রেম, সাম্য, মৈত্রী, ক্ষমা, ত্যাগ, অহিংসা, আত্মসংযম ও করুণার বশবর্তী হয়ে বিশ্বমানবের সুখ-শান্তি ও কল্যাণে ব্রত থাকার পরামর্শ দেন।

বেলা ২টায় রাজবন বিহার মঠে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে দেশনা দেন রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরসহ শীর্ষ বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। তিনি বলেন, আজ থেকে আড়াই হাজার বছরেরও আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপুণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা বের করে বেইনে (কোমর তাঁত) চীবর তৈরি করে দানকার্য সম্পাদন করেন। বিশাখা প্রবর্তিত হাজার বছরের ঐতিহ্য নিয়মে রাঙামাটি রাজবন বিহারে ১৯৭৩ সালে প্রথম কঠিন চীবর দানোৎসব আয়োজন করা হয়। এবার অনুষ্ঠিত হল ৪১তম কঠিন চীবর দানোৎসব।

উৎসবে তিন পার্বত্য জেলার ২৫ উপজেলাসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যোগ দিয়েছেন অগণিত পুণ্যার্থী। বৃহস্পতিবার রাতব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বেইন বোনা ও ধর্মীয় সংস্কৃতি অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি গৌতম দেওয়ান। পরে বিশেষ প্রার্থনা পাঠ করেন তিনি। মহাপরিনির্বাণগত বনভান্তের উদ্দেশে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরি চীবরটি ভিক্ষুসংঘের হাতে তুলে দেন চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। সন্ধ্যায় হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলনসহ ফানুস উত্তোলণ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন