রাজধানী জুড়ে জমজমাট দেহ ব্যবসা

  নিউজ ডেস্ক

সরকারের সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রহস্যজনক নীরবতার সুযোগে রাজধানী ঢাকার ৪৯ থানার প্রায় পৌনে ১শ স্পটে ৪ শতাধিক হোটেল ও ২ সহস্রাধিক বাসা-বাড়ী ও ফ্ল্যাটে চলছে জমজমাট দেহ ব্যবসা। যা রোধ করা না হলে মৃত্যু অনিবার্য ‘এইডস’ [অ্যাকোয়ার্ড ইমিউন ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম]  এর মত মরণ ব্যাধি দেশ ব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে যেতে বেশি দিন সময় লাগবে না।

’৯৯ সালে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার ও ঢাকার নয়াবাজারের ইংলিশ রোডের পতিতা পল্লী তুলে দেয়ার পর রাজধানী জুড়ে বিস্তার লাভ করে পতিতাবৃত্তির এই ব্যবসা। ব্যবহৃত সিরিঞ্জ পুশ করলে অথবা একাধিক পুরুষের সাথে সঙ্গমে অভ্যস্ত নারীর সাথে ইনজয় করলে উভয়ের এইডস রোগ হবার সম্ভনার কথা প্রচারিত হলেও এতে কেউ কর্ণপাত করছে না। বিধায় ক্রমেই এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী মাদক গ্রহণকারীদের ৪ শতাংশই এইডস ভাইরাসের বাহক। জাতীয় এইডস কমিটির মতে দেশে এইডস ভাইরাস বাহকের সংখ্যা সহস্রাধিক এবং এইডস রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯ শতাধিক।

দেশে প্রতিদিন ৭ জন করে এইডস রোগী সনাক্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে আমাদের দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজার। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয় ২০২০ সালের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে প্রতি বছর ৫ লাখ এইডস রোগী মারা যাবে। জানা যায়, বারিধারা বনানী ও গুলশান এলাকার দেড় শতাধিক গেষ্ট হাউজে রাতের বেলায় চলে মদ জুয়া ও দেহ ব্যবসা। কাজ হাসিলের জন্য এখানে প্রায় দেয়া হয় ওম্মা ওম্মা নাইট, থার্সডে নাইট ও ককটেল পার্টি। এসব পার্টিতে দেশী-বিদেশী কলগার্লরা অংশ নিয়ে আগত ভিআইপি অতিথিদের মন রাঙিয়ে তুলে। এছাড়া ৪ শতাধিক হোটেলের পাশাপাশি ২ সহস্রাধিক রেস্তরা, বিউটি পার্লার, ম্যাসেজ পার্লার, ক্লাব, বার, রেষ্ট হাউজ, ফ্ল্যাট ও বাসাবাড়ীতে চলছে দেহ ব্যবসা। অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলা অবাধ যৌনাচারে সিফিলিস, গনোরিয়াসহ জীবন বিধ্বংসী এইচ আইভি এইডস এর মত কঠিন ব্যাধির বিস্তার ঘটছে গোটা দেশ ব্যাপী। জানা যায়, নগরীর ৮৫ ভাগ আবাসিক হোটেলে প্রতিদিন সাড়ে ৭ হাজার খদ্দেরের সমাগম ঘটে। আর এদের যৌনানন্দ দেয়ার জন্য সাড়ে ৫ হাজার ললনা নিজেদেরকে বিলীয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

যৌন ব্যবসায় লিপ্ত থাকা হোটেলগুলোর মাসিক আয় ৬ কোটি টাকা, যৌন কর্মীদের স্বার্থ রক্ষার সংগঠন ‘দূর্জয় নারী সংঘের’ মতে তা ১২ কোটি টাকা। সামান্য যৌনানন্দের জন্য প্রত্যেক খদ্দরকে ব্যয় করতে হয় ২৫০ টাকা। অধিকাংশ হোটেলে ২৫০ টাকা রেট হলেও অনেক হোটেলে ললনাদের ধরন ভেদে রেটের তারতম্য হয়। তবে ২০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। খদ্দরের দেয়া ২৫০ টাকা তিন ভাগ হয়, হোটেল ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা, ষ্টাফ ফান্ডে জমা রাখা হয় ৫০ টাকা, পতিতা ও দালাল পায় যথাক্রমে ৮০ ও ২০ টাকা। দালাল বিহীন খদ্দর মিললে পতিতার ভাগ্যে জোটে আরো ২০ টাকা।

এসব হোটেলের কর্মচারীরা নামকা ওয়াস্তে বেতন-ভাতা পায়। ম্যানেজার পায় ৬০০ হতে ১৫০০ টাকা, বয়রা পায় ৩০০ হতে ১২০০ টাকা। এছাড়া ষ্টাফ ফান্ডের জমানো টাকা প্রতি সপ্তাহে হিসেব করে সবাই ভাগ করে নেয়। নগরীর অধিকাংশ বিউটি পার্লার ম্যাসেজ পার্লারে পরিণত হয়েছে। দেশী-বিদেশী সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে এসব পার্লারে চালানো হয় সেক্স মিশন। অভিজাত এলাকার হোটেল, গেষ্ট হাউজ, রেষ্ট হাউজ, ক্লাব, বার ও ফ্ল্যাট বাড়ীতে এলিট শ্রেণীর লোকজন যাতায়াত করে। তবে সাধারণ হোটেল ও ফ্ল্যাট বাড়ীতে সর্বশ্রেণীর পেশার মানুষ যাতায়াত করে।

সাধারণত: ১৩ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণীরা এ ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের সঙ্গ পেতে ১৫ বছরের কিশোর হতে ৭০ বছরের বৃদ্ধ খদ্দর হিসেবে যাতায়াত করে। ফ্ল্যাট বাড়ী এবং হোটেল ভিত্তিক পতিতা ব্যবসায় ৩টি শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয় ভাবী, ইনটেক ও এ্যাংগেজ। ২৫ হতে ৩০ বছরের বয়সী বিবাহিতা পতিতাকে বলা হয় ভাবী, প্রথম এ রাস্তায় নামছে এমন পতিতাকে বলা হয় ইনটেক ও কাঙ্ক্ষিত পতিতা অন্যের সাখে ডেটিংএ থাকাবস্থায় তাকে বলা হয় এ্যাংগেজ। ঢাকার রাজপথে প্রতি রাতে প্রায় ৫ হাজার ভাসমান পতিতা শতাধিক স্পটে খদ্দর ধরার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন বস্তি ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, বিক্রমপুর, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, সাভার ও টঙ্গী হতে তরুণীরা কর্মস্থলে যোগ দেয়ার নামে বোরকা, হাত ও পা মোজা পরে প্রতিদিন সকাল হতে রাত ৮ টা পর্যন্ত এ কাজে লিপ্ত হয়।

এছাড়া কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রী ও সমাজের এক শ্রেণীর গৃহবধু এই অসামাজিক কাজে জড়িত। গৃহবধুরা শুধু জৈবিক চাহিদা মিটানোর জন্যই এই পথে পা রাখছে। টাকা-পয়সা তাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। দেহ ব্যবসার পাশাপাশি মাদক গ্রহণ করা হয়। মাদকের ব্যবহার হোটেলেই সবচে’ বেশি নিরাপদ, বিশেষত মদ। হোটেলের আসরে বাংলা মদ থেকে শুরু করে দামী গ্রীন লেবেল, হুসকি, রয়াল সেলুট ও জীন, ভোদকাসহ সবই চলে।

উল্লেখ্য যে, আগে বাসাবাড়ী ও ফ্লাটে পতিতাদের জন্য খদ্দর এনে দিত দালালরা আর এখন আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে লোকচক্ষুর অন্তরালে মোবাইলের মাধ্যমে মক্ষিরাণীরা খদ্দর সংগ্রহ করে। মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা নগর, পশ্চিমআগানগর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, আদাবর, শেখেরটেক, লালবাগ, চকবাজার, কোতোয়ালী, ওয়ারী, সুত্রাপুর, ধানমন্ডী, জিগাতলা, কলাবাগান, শুক্রাবাদ, হাতিরপুল, এলিফ্যান্ট রোড, রায়ের বাজার, মিরপুরের টোলারবাগ, পাইকপাড়া, প্রথম ও দ্বিতীয় কলোনী, ফার্মগেট, তেজকুণী পাড়া, নাখাল পাড়া, মুনিপুরী পাড়া, গ্রীনরোড, ইন্দিরারোড, রাজাবাজার, মগবাজার, মালিবাগ, মানিকনগর, সিদ্ধেশ্বরী, ইস্কাটন, শান্তিনগর, কাকরাইল, বেইলি রোড, পরিবাগ, শান্তিবাগ, মতিঝিল, আরামবাগ, শহীদবাগ, কমলাপুর, গোপীবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাও, বাসাবো, কদমতলা, গোড়ান, শনিরআখড়া, ধলপুর, গোলাপবাগ, ধনিয়া, শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া, ইব্রাহীমপুর, কচুক্ষেত, ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, বারিধারা, বনানী, নিউডিএইচএস, উত্তরা, কামরাঙ্গীরচর, শহীদনগর, ইসলামবাগ ও হাজারীবাগ। উল্লেখিত স্পটগুলোর হোটেল, বাসাবাড়ী ও ফ্লাটে চলছে জমজমাট দেহব্যবসা। বলাবাহুল্য, এমতাবস্থায় পতিতাবৃত্তি বন্ধকল্পে তাদের পুনর্বাসনের বিকল্প নেই। অতএব এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের নিকট আবেদন জানিয়েছে সচেতনমহল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “রাজধানী জুড়ে জমজমাট দেহ ব্যবসা”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন