রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ আগুন, নিহতের সংখ্যা ৭০

নিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ভবনে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আগুনের ভয়াবহতা কিছুটা কমলেও আবারও বেড়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে লাশের অনুসন্ধান  চলছে। ব্যাগ ভর্তি করে একের পর এক লাশ বের করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৭০ জনের মৃতদেহ বের করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষনিকভাবে নিহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

বিক্ষিপ্তভাবে এখনও বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলছে। ভবনটির ছাদেও আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্ট্রেচারে করে ব্যাগ ভর্তি করে একের পর এক লাশ বের করে নিয়ে আসছেন। কতজন দগ্ধ হয়েছেন তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। অর্ধশতাধিক ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে ভর্তি। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত। নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৪০টি ইউনিট।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের শতাধিক কর্মীসহ অনেকেই এখানে কাজ করছেন। নগরবাসী, দেশবাসী সবার দোয়া চাচ্ছি, যাতে করে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পারি।

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হলো আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। যারা আহত হয়েছেন তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেয়া। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমরা ঘটনার তদন্ত করব। কেন, কিভাবে আগুন লেগেছে সে সম্পর্কে জানাতে পারব।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, পুরো ভবন খুঁজে দেখা হচ্ছে আর কোনো লাশ আছে কি না। আমরা মনে করছি, আরও কয়েকজনের লাশ থাকতে পারে। পুরো ভবনটি খুঁজে দেখার পর তা বোঝা যাবে।

ভবনে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আইজিপি বলেন, ভবনটিতে রাসায়নিক গুদাম ছিল। এছাড়া নিচতলায় কয়েকটি গাড়ি ছিল, যেগুলো গ্যাসে চলে। এই আগুনের কারণে গাড়িগুলো বিস্ফোরিত হয়। আরেকটি গাড়ি ছিল, যার ভেতর ছিল অনেকগুলো সিলিন্ডার। ওই সিলিন্ডার হয়তো আশপাশের বাড়িতে ও হোটেলে গ্যাস সরবরাহের জন্য ছিল। ওই গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এ কারণে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যায়।

ফায়ার সার্ভিসের ৩৭ ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট কাজ করছে। এ ছাড়া তিনটি হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর থেকে পানি দেওয়া হয় আগুন নেভানোর জন্য।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ বলেন, উদ্ধারকাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর হতাহতের সঠিক তথ্য জানা যাবে।

তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার পর থেকেই পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ৪০টি ইউনিটের দুইশতাধিক ফায়ার ফাইটার্স কাজ করছে। এই জায়গাটা আসলে সংকীর্ণ, আমাদের পানির সঙ্কট হয়েছিল। এখানে বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যাল আছে। আমরা দ্রুত আগুন নিভানোর চেষ্টা করছি।

আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল জুলফিকার বলেন, এক একটি ব্যাগে একাধিক লাশ থাকতে পারে। ভেতরে আরও অনেক লাশ থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সকালে হেলিকপ্টারে করে উপর থেকে পানি ছিটানোর পর আগুন আর দেখা যাচ্ছে না।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও ভেতরে এখনও জ্বলছে। রাসায়নিকসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন পুরো নিভাতে অনেক সময় লাগবে।

 

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন