রাঙ্গামাটিতে স্থলবন্দর নির্মাণ কাজ শুরু

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বরকল উপজেলার থেগামুখ এলাকার ভারতের মিজোরাম সীমান্তে স্থলবন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। স্থলবন্দরটি যত দ্রুত সম্ভব চালু করতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সুবিধা সম্প্রসারণ হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারীরা।

রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী থেগামুখ এলাকায় স্থল বন্দর চালু হলে প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত-বাংলাদেশ উভয়ই লাভবান হবে। এক দেশের পন্য অন্যদেশে বৈধ উপায়ে সহজেই আমদানী এবং রফতানী করা যাবে এবং এই পশ্চাৎপদ এলাকার উন্নয়নের ছোঁয়াসহ স্থানীয় অধিবাসীদের জীবন যাত্রার  মান পরিবর্তন ঘটবে।

এজন্য নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে বরকলের থেগামুখ পর্যন্ত ৩২৭ দমমিক ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক। পাশাপাশি নৌপথ সংস্কার করা হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডি।

এলজিইডি’র সূত্রে জানা যায়, ঠেগামুখ স্থলবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে সড়কটি নির্মিত হবে পৃথক দুটি অংশে। এর মধ্যে একটি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রাঙামাটির রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি হয়ে বরকলের থেগামুখ পর্যন্ত- যার দূরত্ব ১৮৪ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার। অন্য অংশে রাঙ্গামাটি হয়ে নির্মাণ করা হবে বহুমাত্রিক আঞ্চলিক পথ- যার দূরত্ব ১৪২ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার।

সূত্রগুলো আরও জানায়, সড়ক নির্মাণে ইতোমধ্যে জরিপ সম্পন্ন করেছে বিশ্বব্যাংক ও এলজিইডি। সড়কটি মূলত ঠেগামুখ স্থলবন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের পাশাপাশি আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেও সড়কটি অসামান্য অবদান রাখবে বলে মত ব্যক্ত করে এলজিইডি। তারা জানান, সড়কটি নির্মাণ শেষ হলে দেশের অর্থনীতি উন্নয়নে আমুল পরিবর্তনসহ বদলে দেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান। এই রুট নির্মাণের ফলে প্রতি বছর গড়ে জিডিপি বাড়বে ৬ ভাগ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি শহর থেকে নৌপথের প্রায় ১শ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত বরকল উপজেলার ভূষনছড়া ইউনিয়নের থেগামুখ। এ থেগামুখের ওপারে রয়েছে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দেমাগ্রি এলাকা। দু’দেশের একমাত্র সীমানা হচ্ছে ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপত্তি নদী কর্ণফুলী। এ নদীর ওপর দিয়ে দু’দেশের লোকজন নিজ নিজ দেশের পতাকা উড়িয়ে চলাচলসহ দু’দেশের জেলেরা একই নদীতে মাছ শিকার করে থাকেন।

আবার সীমান্তের উভয় পাড়ের বসবাসকারী জনগোষ্ঠী হচ্ছেন চাকমা সম্প্রদায়ের। তাদের মধ্যে ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি মিল রয়েছে। তাই তাদের মধ্যে প্রায়শই বিয়ে দেয়ানেয়াসহ আত্মীয়তার বন্ধন তৈরি হওয়ার কারণে নেই কোন সংঘাত। এমনকি দেশের অন্য স্থানে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রতি মুহুর্তে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে থাকলেও পার্বত্য সীমান্তবর্তী উভয় পাড়ের মানুষের হৃদয়ের বন্ধনের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে বিডিআর-বিএসএফ উভয়েরই। তাই তারা সীমান্ত পাহারায় কখনো কখনো যান্ত্রিকতার চেয়ে হৃদয়বৃত্তিকেই প্রাধান্য দেন। আবার বিডিআর বিএসএফএর মধ্যে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ রাখতে প্রায়ই আয়োজন করা হয় প্রীতি ভলিবল খেলা ও পতাকা বৈঠক। এ থেগামুখ

এলাকায় একটি বাজার রয়েছে। এই বাজারকে কেন্দ্র করে দুই শতাধিক পরিবারের বসবাস রয়েছে। কিন্ত এসব পরিবারের বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র প্রকট। খাবার পানি হিসেবে কুয়ার পানি পান করতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া সেখানকার অধিবাসীদের জন্য নেই টেলিফোন নেটওয়ার্ক ও পর্যাপ্ত নৌযানসহ যোগাযোগের বিকল্প কোন মাধ্যম। অপরদিকে ভারতের ডেমাগ্রি এলাকার দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানে বিদ্যূৎ, রাস্তাঘাট ও টেলিফোন নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, সড়কটি নির্মাণের জন্য জরিপ শেষে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এটির নির্মাণ শেষ হলে পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বৈপ্লিক পরিবর্তনের পাশাপাশি সেখানকার আর্থ-সামাজিক অবস্থারও আসবে আমুল পরিবর্তন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন