রাঙ্গামাটিতে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান শুরু

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দানোত্তম কঠিন চীবর দান শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫নভেম্বর) বিকালে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বেইন ঘর উদ্বোধন করে এবং চাকমা রানী বেইন চরকায় সুতা কেটে দুই দিনের কঠিন চীবর দান উৎসবের সূচনা করেন। শুক্রবার বিকালে ভিক্ষু সংঘের কাছে চীবর দান করা হবে। এ উৎসবকে ঘিরে বসেছে গ্রামীণ মেলা।

রাজবন বিহারের কার্যকরী কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, রাজবন বিহারের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রায় ১৫০টি চরকা ও ২৪৭ টি বেইন স্থাপন করা হয়।  এতে প্রায় ২হাজার ৪শতাধিক মহিলা-পুরুষ এই চীবর প্রস্তুত কাজে অংশ গ্রহণ করে। তিনি আরও বলেন, উৎসবকে ঘিরে  যথাযথ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে, সুতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় তাঁতে কাপড় বুনে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে এর নাম কঠিন চীবর দান। পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধরা এ উৎসব পালিত করেন প্রাচীন নিয়মে। প্রাচীন নিয়ম মতে  ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উৎসর্গ করা হয়।

বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরীর প্রচলন করেছিলেন। প্রতি বছর আষাড়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনমাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর  দান করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সাল থেকে বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে  রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে ৪৫ বছর ধরে কঠিন চীবর দান উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, জগতে যত প্রকার দান রয়েছে তার মধ্যে এ চীবর দানই হচ্ছে সর্বোত্তম দান।

২৪ ঘন্টার পরিশ্রমে তৈরী করা এ চীবর চাক্মা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় পার্বত্য ধর্মীয় গুরু বনভান্তের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শুক্রবার ভিক্ষু সংঘের নিকট এ চীবর উৎসর্গ করবেন। রাতে রাজবন বিহারে ফানুষ উড়িয়ে শেষ হবে এ কঠিন চীবর দান উৎসব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন