রাঙামাটির লংগদুতে বন্যহাতির তান্ডবঃ ১৫বছরে অর্ধশত মানুষের প্রাণহানী

Rangamati Elifent pic-1

ফাতেমা জান্নাত মুমু, পার্বত্যনিউজ:
রাঙামাটি জেলার প্রত্যন্ত উপজেলা লংগদুর দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির তান্ডব বেড়ে চলেছে। প্রশাসনিকভাবে প্রতিকারের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ বন্যহাতীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে বন্যহাতীর আক্রমনে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তির প্রাণহাণি হয়েছে লংগদু উপজেলায়। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে আরও অনেকে। লোকালয়ে প্রবেশ করে তান্ডব চালাচ্ছে বন্যহাতি।

সম্প্রতি ওই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামে বন্যহাতি তান্ডবে জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটছে। গত কয়েক মাস ধরে লংগদু উপজেলার দুর্গম জনপদ চাইল্যাতলী, ঘনমোড়, রাঙ্গাপানি, বগাচতর, ভাসান্যাদমসহ আশেপাশের বেশকটি গ্রামে বন্যহাতি হানা দিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করে বলেন, গত বয়েক দিন ধরে বন্যহাতীর একটি দল বগাচত গ্রামে ঢুকে পড়ে বাড়িঘরে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এসময় এলাকার ৫টি বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছে। সম্প্রতি লংগদু উজেলার বগাচতর ইউনিয়নের ৮নং ও ৯ নং মারিশ্যাচর এলাকায় বন্য হাতির আক্রমনে ঘর হারিয়েছে- আবু বক্কর, ওমর আলী ইসলাম, মো. রফিকুল ইসলাম, শাহ আলম, লেয়াকত আলী।

এছাড়া বন্যহাতির আক্রমনে আহত হয়- লেয়াকত আলীর মেয়ে। ওই সময়ে ধানের জমিসহ ব্যাপক ফসলি জমি বিনষ্ট করে দিয়েছে বন্যহাতির পালটি। ক্ষতিতিগ্রস্ত লোকজন আতংকে খোলা মাঠে টাবু খাটিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছে। বর্তমানে বন্যহাতীর দলটি লোকালয়ে তান্ডব চালাচ্ছে। শুক্রবার রাতে গত কয়েকে দিন ধরে ১৪-১৫টির হাতির পালটি পাহাড়ি গ্রামে আক্রমন চালায়। বন্যহাতির ভয়ে লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। সমানে ঈদ আসলেও ঈদের আনন্দর হাসিটুকু নেই এসব গ্রামের মানুষগুলোর মুখে।

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয় চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম জানায়, বন্যহাতির তান্ডবে এ অঞ্চলের মানুষ সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে। কখন কারণ বাড়িতে আক্রমন চালায় ঠিক নায়। উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের জালালাবাদ, রাজনগর, মুর্শিদাবাদ, ছোট মাহিল্যা, বগাচতর ইউনিয়নের মারিশ্যাচর, রাঙ্গীপাড়া, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়নের পোকশাপাড়া, পূর্ব চাইল্যাতলী, ঘনমোড়, আমতলীসহ আশপাশের এলাকায় বন্যহাতীর পাল কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ঘুরে ফিরে প্রতিনিয়তই ধংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। দিনের বেলায় হাতীগুলো আশপাশের জঙ্গলে অবস্থান করে রাতের লোকালয়ে বসতবাড়ি ভাংচুর করে ধান, চালসহ ফসলি জমির ধংসযজ্ঞ চালায়। লোকজন হাতীর আক্রমন থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার রাঙ্গিপাড়া বন কর্মকর্তা মো. মাহাবুব আলম জানান, লংগদু উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন ও এলাকায় বন্য হাতির তান্ডব বেড়েছে। বর্তমানে রাঙ্গিপাড়া এলাকায় বন বিভাগের অফিসের পাশে দু’টি বন্যহাতি অবস্থান করছে। শুনেছি একটি বাচ্চাও না কি দিচ্ছে। ব্যাপক হারে বন উজাড়ের কারণে পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যাওয়ায় হাতীর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে প্রকটভাবে। ফলে খাদ্যের সন্ধানে পাহাড়ে হাতি উন্মত্ত হয়ে গ্রাম থেকে গ্রাম চষে বেড়াচ্ছে। পাহাড় থেকে নেমে এসে বন্যহাতির পাল এখন লোকালয়কে বসবাসের জায়গা করে নিচ্ছে। আর গ্রামের সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত বন্যহাতির সঙ্গে লড়াই করে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন