রাঙামাটিতে সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক আত্মত্যাগ আর্ত মানবতার সেবায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে- প্রধানমন্ত্রী

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

সেনা সদস্যদের জাতীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার প্রসঙ্গ টেনে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সম্প্রতি রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে পুরো এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় নিরলস প্রচেষ্টায় তা দ্রুত পুনরুদ্ধার অভিযান ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার, পানি ও চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ সাতটি আশ্রয় কেন্দ্রের দায়িত্ব গ্রহণ করে জনগণের সেবায় সেনা সদস্যরা নিজেদের নিয়োজিত করেন।

সেনা সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাঙ্গামাটিতে উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন দু’জন সেনা কর্মকর্তাসহ পাঁচজন সহকর্মীকে হারানোর ব্যথা নিয়ে রোজা রেখে আর্তমানবতার সেবায় আপনাদের এই আত্মত্যাগ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমি সেনাবাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগকে গভীর সমবেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি।

প্রধানমন্ত্রী রোববার ঢাকা সেনানিবাসের সেনা সদর দফতরে আর্মি সিলেকশন বোর্ড-২০১৭-এর বৈঠকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণে দক্ষ এমন দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের হাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব থাকা উচিত।

তিনি বলেছেন, মাঠপর্যায়ে সাফল্য এবং প্রশিক্ষণে দক্ষতাই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হওয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে চারটি বিশেষ গুণ থাকতে হবে। যেগুলো হচ্ছে- একজন কমান্ডার, কর্মকর্তা এবং প্রশিক্ষক হওয়ার জন্য প্রথমত, সেনা কর্মকর্তাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত, তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। দেশ ও সমাজের সেবার মানসিকতা এবং উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। তৃতীয়ত, তাদের মাঠপর্যায়ের সাফল্য থাকতে হবে। চতুর্থত, তাদের অবশ্যই নেতৃত্বের যোগ্যতা, পেশাগত এক্সিলেন্স, নিয়মানুবর্তিতা, সততা এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে।

তিনি এ সময় কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সিলেকশন বোর্ডকেও যোগ্যতার এই মাপকাঠি বিবেচনায় আনার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী পদোন্নতির জন্য সেনা কর্মকর্তা নির্বাচনে ট্রেস (টিআরএসিই-টেবুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কম্পারেটিভ ইভ্যালুয়েশন) পদ্ধতির অন্তর্ভুক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের মান আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে তার সরকার কয়েকটি নতুন প্রশিক্ষণ একাডেমিসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদাতিক কোরের উন্নয়ন ও কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ছাড়া সেনা সদস্যদের চিকিৎসা, বেতন-ভাতা ও আবাসনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও পুনর্গঠনমূলক পদক্ষেপ গৃহীত হয়।

সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও জঙ্গি তৎপরতা দমনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ও সিলেটের আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর কমান্ডো ইউনিটের জঙ্গিবিরোধী অভিযান দেশে ও বিদেশে সেনাবাহিনীর উন্নত প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূঁইয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন