রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদে ভবন ধস: উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা, ৫ লাশ উদ্ধার

rangamati-dhos-pic01-1-copy

নিজস্ব প্রতিনিধি:

রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই হ্রদে ধসে পড়া ভবনের মৃতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে দাঁড়িয়েছে। নিহতরা হলেন- মো. জাহিদ ড্রাইভার (৪০) ও তার মেয়ে পিংকি আক্তার (১৩) এবং উম্মে হাবিবা (২২), সামাদ (১২) সাজিদুল (৭) । একই সাথে  শেষ হয়েছে উদ্ধার অভিযানও।

বুধবার সকাল ৮টার দিকে নিখোঁজ শিশুটির উদ্ধারের পর এ অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন নৌ বাহিনীর কাপ্তাই শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটির কমান্ডার লে. কর্ণেল রাইয়ান আল বেরুনী। তিনি বলেন, সকাল ৭ থেকে ৮টা পর্যন্ত মাত্র একঘন্টা অভিযান চালিয়ে নিখোঁজ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ধসে পড়া ভবনে আর কোন লোকজন আটকে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে নিশ্চিত হওয়ার পর এ উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। এছাড়া এ ভবন থেকে যারা বেঁচে আছেন তাদেরও দাবি এ ভবনে আর কোন মানুষ নেই।

অন্যদিকে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তের পর নিহত ৫ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

রাঙামাটি কোতয়ালী থানা তদন্ত কর্মকর্তা মো.নাজমুল ইসলাম জানান, কাপ্তাই হ্রদে ধসে পড়া ভবন থেকে উদ্ধারকৃত ৫জনের মরদেহ রাঙামাটি সদর হাসপাতালের থেকে তাদের স্বজদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১জন নারী ও ২জন শিশু হওয়ায় তাদের মযনা তদন্ত করা হয়নি। তবে জাহিদ নামে একজনের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।

রাঙামাটি সদর হাসপাতাল আরএমও চিকিৎসক মং কিয়ু চিং সাগর জানান, বিধস্ত ভবন থেকে যেসব মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছিল সবাই পানিতে দমবন্ধ হয়ে মারা গেছেন। কারণ পানিতে ডুবে দীর্ঘ সময় নিঃশ্বাস ধরে রাখা সম্ভব না। ভবনটি পানিতে ডুবার মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক দখল করে পানির ওপর দোতলা তলাবিশিষ্ট পাকা বাড়িটি নির্মাণ করেন স্থানীয় ঠিকাদার টিটু। এরপর একাধিক পরিবারকে ভাড়া দেন বাড়িটিতে। মাত্র কয়েক বছর আগে বাড়িটি নির্মান করা হলেও সম্প্রতিক কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়ার সাথে ভবনের মাটির চারপাশে পাঠল দেখা দেয়। কিন্তু তারপরও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছিল ওই চার পরিবার। তারপরও কোন নজরদারি ছিলনা ভবন মালিক কর্তৃপক্ষের। এ ঘটনায় রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে ভবন ধসের কারণে এলাকায় চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেখা দিয়েছে জনমনে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। শোকের ছায়া নেমে আসে সরকারি মহিলা কলেজ এলাকায়।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান জানান, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ তীরবর্তী এলাকায় যেসব ভবন রয়েছে সেগুলোর তালিকা তৈরি করার জন্য রাঙামাটি পৌরমেয়রকে দায়ীত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুত এ তালিকা তৈরি কাজ শেষ হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নত করার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১৫দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ারও নিদের্শ দেওয়া হযেছে। তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ কেজি চাল ও ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে রাঙামাটি শহরের সরকারি মহিলা কলেজ এলাকায় টিকাদার টিটুর দোতলা ভবনটি হঠাৎ ধসে পড়ে কাপ্তাই হ্রদে । এ সময় ভবনের ভেতর অবস্থন করছিল চারটি পরিবারের মোট ৮জন সদস্য। খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযানে নামে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি যৌথ টিম।এসময় তিনজন নারীকে জীবিত ও ৪জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন তারা। তবে খুঁজে পায়নি আরও এক শিশুর মরদেহ। পরে নৌবাহিনীর ডুবুরি দল শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে সকালে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন