রাঙামাটিতে অপহরণের তিন দিন পরেও উদ্ধার হয়নি তিন বাঙালী নির্মাণ শ্রমিক
লংগদুর মাইনীমুখের আনোয়ার পরিবারের সাথে অভিমান করে নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার:
অপহরণের তিনদিন পার হলেও উদ্ধার হয়নি রাঙামাটি সদর থেকে অপহৃত ৩ বাঙালী নির্মাণ শ্রমিক। ৮ ফেব্রুয়ারী রাঙামাটি সদরের রাজবন বিহারপুর থেকে একটি উপজাতীয় সংগঠনের সন্ত্রাসীরা নৌকাযোগে তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। স্থানীয় পুলিশ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
এদিকে ৬ ফেব্রুয়ারী লংগদুর গাঁথাছড়া ইউনিয়নের মাইনীমুখ এলাকার অপহৃত বলে জানাজানি হওয়া আনোয়ার আসলে অপহৃত হয়নি। পরিবারের সাথে অভিমান করে নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছে বলে নিরাপত্তাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, রাঙামাটি সদরের রাজবন বন বিহারের পাশে বিহারপুর এলাকায় একটি সেতুর নির্মাণ কাজ করছিলেন অপহৃত শ্রমিকরা। সেতুর নিমার্ণের ঠিকাদার আবু সাইদ রাঙামাটি বনরূপা ব্যবসায়ী সমিতির নেতা। সেতু নির্মাণের কাজের শুরু থেকেই চাঁদা দাবী করে আসছিলেন স্থানীয় উপজাতীয় সংগঠনের চাঁদাবাজরা। কিন্তু চাঁদা না দেয়ায় সোমবার রাত দশটার দিকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা নির্মাণস্থল থেকে ৩ শ্রমিককে অপহরণ করে নৌকা যোগে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে দুই জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের একজনের নাম মানিক(৩৯), অপরজনের নাম আব্বাস(২৯)। মানিকের বাড়ি সিলেট এবং আব্বাসের বাড়ি লংগদুর মাইনী মুখে।
সূত্র জানিয়েছে, অপহরণের পর উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা নির্মাণকারী কোম্পানীর নিকট থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেছে। তবে এ নিয়ে থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সেতুর ঠিকাদার কোম্পানীর তরফ থেকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের সাথে মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করার জন্য আপোষ রফার চেষ্টা চলছে। সেকারণে থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
রাঙামাটি সদর থানার সেকেন্ড অফিসার লিমন বোস পার্বত্যনিউজের কাছে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরাও শুনেছি। কিন্তু আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে আমরা নিজেরা তাদের উদ্ধারের জোর চেষ্টা করছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এ ব্যাপারে কাজ করছে।
এদিকে লংগদু উপজেলার গাঁথাছড়া এলাকার বাসিন্দা হাশেমের পুত্র আনোয়ার (২৫) গত ৬ ফেব্রুয়ারি দূরছড়ি বাজারে গেলে বাজার থেকে সেদিন সে আর ফিরে আসেনি। পরে তারই ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে চাঁদা দাবি করে পরিবারের কাছে ফোন করা হয়।
জানা যায়, নিজের গাছ ব্যবহার প্রয়োজনে বাঘাইছড়ির দুরছড়ি এলাকায় যান। কিন্তু শনিবার থেকে তাকে আর মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছিল না। রোববার তার মোবাইল ফোনটি হঠাৎ সচল হয় এবং সেই ফোন থেকে তার ভাই আলমগীরের মোবাইলে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা আনোয়ার তাদের জিম্মায় আছেন এবং দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ পেলে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা জানায়।
অপহরণের বিষয়টি প্রেস ও পুলিশকে না জানাতে তাকে শাসিয়ে বলা হয়, যদি এ নিয়ে তারা কারো কাছে অভিযোগ করে তাহলে তার ভাইকে মেরে ফেলা হবে। ভাইয়ের জীবনের কথা ভেবে পরিবারটি এতোদিন সাংবাদিক ও পুলিশকে জানায়নি।
কিন্তু অহরণের বিষয়টি ধীরে ধীরে এলাকায় জানাজানি হয়ে তা একসময় পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর কাছেও পৌঁছায়। এরপর গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে জোর তদন্ত শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে আনোয়ারের মোবাইল ট্রাক করে রাঙামাটি সদরসহ কয়েকটি স্থানে তার অবস্থান জানা যায়।
স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র পার্বত্যনিউজকে নিশ্চিত করে জানিয়েছে, আনোয়ার আসলে অপহৃত হয়নি। ব্যবসার কাজে পিতার কাছে টাকা চাইলে পিতা টাকা দিতে অস্বীকার করায় নিজেই আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণের নাটক সাজায় এবং পিতার কাছে টাকা আদায় করতে উপজাতীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম দিয়ে ফোন করে।