রাখাইনে সহায়তা স্থগিত করতে জাতিসংঘকে বাধ্য করেছে মিয়ানমার সরকার

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান শুরুর পর বেসামরিকদের বিপন্নতার মধ্যেই ২ সেপ্টেম্বর রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত করার ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। নিরাপত্তাজনিত সংকটকে কারণ দেখিয়ে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে মিয়ানমারের জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয় গার্ডিয়ানকে ইঙ্গিত দিয়েছে, মিয়ানমার সরকারই তাদেরকে কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে না।

হঠাৎ করে ত্রাণ সরবরাহের কারণ কী সে ব্যাপারে গার্ডিয়ানকে আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয় জানায়, ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শনে সরকারের পক্ষ থেকে কড়াকড়ির কারণে আমরা সহায়তা দিতে পারিনি। যত দ্রুত সম্ভব যেন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা যায় তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছে।’

রাখাইন রাজ্যের অন্য অংশগুলোতে মানবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এবং জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল (ইউনিসেফ) এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে মাঠ পর্যায়ের কোনও কাজ করেনি।

কয়েকদিনের সহিংসতায় বিধ্বস্ত মংদোতে দাঁড়িয়ে আছেন এক পুলিশ জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)জানায়, রাখাইনের অন্য এলাকাগুলোতে তাদেরকে কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়েছে। এতে নিয়মিত খাদ্য যোগাড় করতে না পারা কয়েক লাখ মানুষ অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

অক্সফাম ও সেভ দ্য চিলড্রেনসহ বিশ্বের বড় বড় ১৬টি মানবিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানও অভিযোগ করেছে মিয়ানমার সরকার তাদেরকে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যেতে দিচ্ছে না। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থার মিয়ানমার কার্যালয়ের মুখপাত্র পিয়েরে পেরন বলেন, ‘চলমান সহিংসতায় লাখো মানুষের পরিণতি নিয়ে ত্রাণ সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগে আছে।’

সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েন শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ২৪ আগস্ট পুলিশ চেকপোস্টে হামলা হয়। মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকার এক বিবৃতিতে রাখাইন রাজ্যের ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গা’রা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে সমন্বিত হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে। দাবি অনুযায়ী রাতভর সংঘর্ষে রোহিঙ্গা-পুলিশ-সেনাসদস্য মিলে অন্তত ১০৪জন নিহত হয়েছে বলে জানায় সেনাসূত্র। এই হামলার দায় স্বীকার করে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)।

ওই হামলার পর থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার হয়। শুক্রবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে গেল এক সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে ৪শ জন নিহত হয়েছে। মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের সেনাবাহিনী নিহত ৪শ জনের মধ্যে ৩৭০জনকে সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করেছে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে সংঘটিত সামরিক অভিযানের সময়ে জাতিসংঘের তরফ থেকে মিয়ানমারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সেখানকার পরিস্থিতিকে তারা আখ্যা দেয় ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগও তুলেছিল। আর রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রতিক সহিংসতায় ৪০০জন নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রাখাইন-পরিস্থিতিকে মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা বলে আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন