রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় আটকা পড়েছে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের মুখে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম আটকা পড়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার, পানি, ওষুধ সংকটের কারণে তাদের প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

পুলিশ চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলা এবং সেখানকার সংঘর্ষে শতাধিক প্রাণহানির পর জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদারের ঘোষণা দেয় মিয়ানমার। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রত্যক্ষদর্শীর মতামত, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর স্যাটেলাইট ফুটেজ এবং স্থানীয় অ্যাকটিভিস্টদের তথ্য অনুযায়ী সেখান অভিযানের টার্গেট হচ্ছেন বেসামরিকরা।

ইউএনএইচসিআর’র আঞ্চলিক মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান আল-জাজিরাকে দেওয়া সবশেষ আপডেটে বাংলাদেশে প্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৮৭ হাজার বলে জানিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, আমরা অনেক গর্ভবতী নারী, সদ্যজাত শিশু ও বৃদ্ধদের বাংলাদেশ সীমান্তের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর দিকে ছুটতে দেখেছি। দুর্ভাগ্যজনক হলো, আমরা তাদের অনেকের কাছ থেকে শুনেছি যে তারা না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন।

সিএনএন-এর খবরে মানবাধিকার কর্মীদের উদ্ধৃত করে আটকা পড়া ওই ৩০ হাজার রোহিঙ্গার ব্যাপারে বলা হয়েছে, পাহাড়ে আটকা এই রোহিঙ্গারা কোনো ধরনের খাবার, পানীয় এমনকি ওষুধ পাচ্ছেন না। তাদের প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে এরা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারেননি। আবার পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামে ফেরার কোনও উপায় নাই। মংডু আর রাতারডাং শহর সংলগ্ন পাহাড়ে আটকে আছেন তারা। সিএনএন-কে সেখানকার একটি ভিডিও সরবরাহ করেছে অ্যাকটিভিস্টরা। ওই ভিডিওতে শত শত রোহিঙ্গাকে দেখা গেছে। লাঠি আর কাগজ ব্যবহার করে নিজেদের আবাস বানিয়েছেন তারা।

মিয়ানমারের হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক একমুহুর্ত দেরি না করে এই ভয়াবহ বিপন্ন অবস্থায় বাস করা মানুষগুলোকে উদ্ধারের তাগিদ দিয়েছ।

রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদারের নামে রাখাইনে তাণ্ডব শুরু করে সেনাবাহিনী। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ছেন সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হচ্ছে তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে মানুষকে।

জাতিসংঘ মিয়ানমারের অসহযোগিতা আর বাধার কারণে রাখাইনে ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত করেছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ দেখছে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের অভিমত, মিয়ানমার আদতে রোহিঙ্গাদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের পৃথক পৃথক প্রতিবেদনে উঠে আসছে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’র করুণ আখ্যান ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন