যে ‘অভিশাপে’ বিশ্বকাপ জিততে পারছেনা আর্জেন্টিনা!

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার জাদুতে বিশ্বকাপ জিতেছিলো দলটি। তারপর কেটে গেছে ৩২টি বছর। এরমধ্যে কয়েকবার আশা জাগিয়ে, এমনকি গেলবার ব্রাজিলেই বিশ্বকাপের একদম কাছে পৌঁছে গেছিলো মেসির আর্জেন্টিনা। কিন্তু জার্মানির কাছে শেষ মিনিটে গিয়ে হার মেনে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ে আকাশি-সাদা জার্সিধারীরা।

আর এবার তো বাছাইপর্ব টপকাতেই জান-প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তবুও এক মেসির কল্যাণেই বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে সমর্থ হয় ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। কিন্তু রাশিয়ায় আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিততে হলে শুধু এক মেসির পায়ের জাদুর ওপর ভরসা করে থাকলেই চলবে না। পাশাপাশি তাদের খুঁজে বের করতে হবে গেল ৩২ বছর আগের অভিশাপ থেকে মুক্তির উপায়ও!

যে অভিশাপ এখনও তাড়া করে চলেছে আর্জেন্টিনার ফুটবলকে। যে অভিশাপ দেশের ফুটবলের ওপর নিয়ে এসেছে দিয়েগো ম্যারাডোনার সেই বিশ্বকাপজয়ী দল!

হ্যা, আর্জেন্টিনার জনগণের একটা অংশ এখনও মনে করেন, ‘তিলকারা’ নামের অভিশাপ থেকে এবারও মুক্তিলাভ পাবেন না মেসিরা। বিশ্বকাপ এবারও অধরা থেকে যাবে ফুটবল রাজপুত্রের।

কিন্তু, কী সেই তিলকারার অভিশাপ?

জানা গেছে, আর্জেন্টিনার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে একটা ছোট্ট গ্রাম তিলকারা। সে গ্রামে ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শিবির করেছিল কার্লোস বিলার্দোর দল। সে সময় গোটা গ্রামে একটিমাত্র টেলিফোন ছিল। টিভি খুঁজলেও পাওয়া যেত না।

আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই হাজার মিটার উচ্চতায় ওই গ্রামে শিবির করার একটাই কারণ ছিল। মেক্সিকোর উচ্চতায় খেলার প্রস্তুতি নেয়া। প্রস্তুতি শিবির চলাকালীনই বিলার্দোর কানে আসে একটি উপকথা। ওই গ্রামের একটিমাত্র চার্চে ‘ভার্জিন অব কোপা কাবানা’র মূর্তি রয়েছে।

গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করেন, ওই মূর্তির সামনে যদি কিছু মানত করা হয়, তা পূরণ হয়। আবার কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে, সেটি রক্ষা করতে হয়। রক্ষা না করলে বিপদ।

৩২ বছর আগের সেই ঘটনার কথা এখনও মনে আছে স্থানীয় মানুষের। আর্জেন্টিনার একটি ওয়েবসাইটে অতীতের সেই কাহিনী তুলে ধরেছেন ডেভিড গর্দিলো নামে জনৈক গ্রামবাসী। সে সময় বছর পঁচিশেক বয়স ছিল গর্দিলোর। আর্জেন্টিনার সেই দলের সঙ্গে অনুশীলনও করতেন তিনি।

একবার ফুটবলারদের কাছে এই জাগ্রত বিগ্রহের কথা বলেছিলেন গর্দিলো। তারপর ফুটবলাররা নাকি প্রতিশ্রুতি দেন, বিশ্বকাপ জিততে পারলে তারা আবার তিলকারায় ফিরে ‘ভার্জিন অব কোপা কাবানা’কে ধন্যবাদ জানাবেন।

সারা ভেরা নামের অপর এক স্থানীয় বাসিন্দাও প্রায় একই কথা বলেছেন। আর্জেন্টিনার অনুশীলনের জন্য মাঠ ভাড়া দিয়েছিলেন ভেরা। ভেরার বক্তব্য, তিনি জাতীয় দলের কোচ বিলার্দোকে নিয়ে ওই চার্চে গিয়েছিলেন।

স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ভেরা বলেছেন, ‘ভার্জিনের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে বিলার্দো বলেন, বিশ্বকাপে তারা যদি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন, তাহলে এখানে ফিরে এসে, হাঁটুমুড়ে বসে ধন্যবাদ জানাবেন।’

অসম্ভব সম্ভব হয়েছিল। দিয়েগো ম্যারাডোনার দল সেবার বিশ্বকাপ জিতেছিল। কিন্তু বিলার্দোরা আর ফিরে যাননি তিলকারায়!

স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, এরপর থেকেই অভিশাপ তাড়া করছে আর্জেন্টিনাকে। যে কারণে তারপর থেকে দু’বার বিশ্বকাপ ফাইনালে (১৯৯০, ২০১৪) উঠেও কাপ জেতা হয়নি তাদের। দু’বারই ফাইনালে এক গোলে হারতে হয়েছে জার্মানির কাছে।

সেই বিতর্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে’৮৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যদের। কিছুদিন আগেও বিলার্দো বলেছিলেন, তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি কোথাও। দলের ফুটবলারদেরও একই বক্তব্য। তা সত্ত্বেও বিতর্ক থামেনি। বিশেষ করে তিলকারার গ্রামবাসীরা ঘটনাটা ভালোভাবে নেননি।

স্থানীয়দের বক্তব্য, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিশাপ এখনও তাড়া করছে আর্জেন্টিনাকে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে ২০০৬ বিশ্বকাপের একটি প্রতিরূপও তিলকারার চার্চে পাঠিয়েছিল আর্জেন্টাইন ফুটবল সংস্থা। কিন্তু বিশ্বকাপ আর জেতা হয়নি আর্জেন্টিনার।

এ বছর সেই শাপমুক্তির লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালের কাপজয়ী দলের কয়েকজন ফুটবলার তিলকারার গ্রামে যাওয়ার কথা ভেবেছেন। তাদের মধ্যে আছেন অস্কার রুগেরি, হর্হে বুরুচাগা, রিকার্দো বচিনিরা। তবে সংশ্লিষ্ট ফুটবলাররা এই ব্যাপারে মুখ খোলেননি। বিশ্বকাপ সামনে এসে পড়লেও এখনও পর্যন্ত ফুটবলারদের তিলকারা যাওয়ার কথা জানা যায়নি।

তিলকারার ওই শিবিরে ছিলেন না ম্যারাডোনা। তাতে কী? বিশ্বকাপজয়ী তার দলের অনেক ফুটবলার তো ছিলেন। স্থানীয়রা মনে করেন, বিশ্বকাপ হাতে তোলার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরসূরিদের মাথার ওপর ওই অভিশাপের বোঝাও চাপিয়ে দিয়েছিল ম্যারাডোনার দল, যা থেকে এখনও মুক্তি মেলেনি মেসিদের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন