যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদেরকে সাধুবাদ, যারা করেনি তাদের আর রেহাই নেই : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

অবশেষে বহুল আলোচনা-সমালোচনা শেষে সরকারের দেয়া বিভিন্ন শর্তে আত্মসমর্পণ করেছেন ১শ’ ২ ইয়াবা কারবারী।

শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি এর উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়া টেকনাফের হাজারো জনতা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা আজকে আত্মসমর্পণ করেছে তাদেরকে জানাই সাধুবাদ। আর যারা করেনি তাদের আর কোন রেহাই নেই। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন যেখানে থাকে না কেন আর পার পাবে না।

তিনি বলেন, এই ঘৃণ্য ইয়াবা কারবারির জন্য সমাজে, পরিবারে ও দেশে সামাজিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যাসহ নানামুখী সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। তাই এতোদিন পর হাজারো জনতা জেগে উঠেছেন এই মরণ নেশা ইয়াবার বিরুদ্ধে। তাই উপস্থিত জনতাকে উদার মনের পরিচয় দিয়েছেন বলে ধন্যবাদ জানান।

তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্য মাদকের সাথে জড়িত থাকার প্রমান পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন সবার জন্য সমান তাই প্রশাসনের লোক বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে না সেটা ভুল হবে। তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে দ্রুত তথ্য দিতে ৯৯৯ নাম্বারে কল করারও পরামর্শ দেন।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গিকার মাদক নির্মূল করা। সেই ঘোষণা হিসেবে যেকোন মূল্যে মাদক ব্যবসা বন্ধ করবোই করবো।

প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের যদি কোন চাকরি বা পুর্ণবাসন করতে হয় তাও করা হবে। মাদকের কুফল সম্পর্কে দ্রুত সেমিনারের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা হবে বলে জানান।

ইয়াবা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক অত্যন্ত ক্ষতিকর জিনিস।

মাদক ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, কেন আপনারা ইয়াবা ব্যবসা করবেন? কি নেই কক্সবাজারে? পর্যটন ব্যবসা, হোটেল, মহেশখালীতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, সেন্টমার্টিন, এক্সলোসিভ ট্যুরিস্ট জোন রয়েছে। এগুলোকে কাজে লাগালেই লাখ-কোটি টাকা আয় করা কোন ব্যাপার না।

সর্বশেষ তিনি আত্মসমর্পণ ১শ’ ২ ইয়াবা কারবারিকে সাধুবান জানান এবং সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলমান থাকবে।

বাকি মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমপর্ণ আজ বাংলাদেশে এক নজির স্থাপন হলো। পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে মাদক ব্যবসা প্রতিহত করা সম্ভব নয়। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ চলবেই। যারা এখনো আত্মসমপর্ণ করেননি তারা সাবধান, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কোন প্রান্তেই লুকিয়ে থাকতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, আত্মসমপর্ণকারীদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারটি দেখা হবে। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে সরকার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এর আগে দুপুর ১২টায় টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম এর কাছে ইয়াবা ও অস্ত্র জমা দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেছেন।

এসময় তাদের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা, ৩০ টি দেশিয় তৈরী এলজি ও ৭০ টি তাজা কার্তুজ হস্তান্তর করা হয়। যা আইন অনুযায়ী জব্দ করা হয়েছে। এ সংক্রান্তে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এসময় আত্মসমর্পণ করেছে ১শ’ ২ জন। তাদের মধ্যে ২৯ জন ইয়াবা গডফাদার। আত্মসমর্পণের পর তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে দুই ইয়াবা কারবারী ইউপি এনামুল হক ও সিরাজ বক্তব্য রাখেন।

তারা বলেন, মাদক ব্যবসার কারণে তারা সমাজে ঘৃণিত হয়েছে। তারা এই ঘৃণ্য পথ থেকে ফিরতে চায়। তারা মাদকমুক্ত সমাজ গঠণে নিজের জীবন দিয়ে হলেও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।

প্রতিক্রিয়ায় তারা আরও বলেন, ইয়াবা পুরো দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে দেশের নতুন প্রজন্ম চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এই অপরাধের আমরা দায়ী। অন্যদিকে ইয়াবা ব্যবসার কারণে টেকনাফসহ পুরো জেলার মানুষ সারা দেশের মানুষের কাছে ছোট হয়ে আছে।

যেখানে যাই টেকনাফের মানুষ পরিচয় দিলেও আমাদের ঘৃণা করা হয়। এমনকি কোথাও হোটেল ও বাসা ভাড়া নিতে গেলে আমাদের তা দেয় না। এসব কিছু বুঝতে পেরে আমরা দেশকে ইয়াবার আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছি। যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেনি তাদেরও আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

একই সাথে আমাদেরকে ক্ষমা করে স্বাভাবিক জীবনের ফেরা সুযোগ দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আকুতি জানাচ্ছি।

তারা আরও বলেন, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে কাজ করলে ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধ হয়ে যাবে। সীমান্তে যৌথভাবে টহল দেয়া হলে কোনো ভাবেই ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম, অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন এন্ড ক্রাইম) মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, কক্সবাজার জেলার চারটি আসনের সংসদ সদস্য উখিয়া-টেকনাফ শাহিন আকতার চৌধুরী, জাফর আলম, আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, বিজিবি’র রিজিওনাল চীফ, ব্যাটালিয়ন চীফ, মাদকদ্রব্য অধিদফতরের প্রধান, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ প্রমুখ।

জেলা পুলিশের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন-জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন