Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

মৃত্যুর আগে আদিবাসিদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যেতে চাই: সুলতানা কামাল

IMG_9864

স্টাফ রিপোর্টার:

‘আমার মৃত্যুর আগে আদিবাসিদের সাংবিধানীক রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যেতে চাই’। বুধবার দি ডেইলি স্টার ভবনের তৌফিক আজিজ খান সেমিনার হলে ‘বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার রিপোর্ট-২০১৫’ এর প্রকাশ ও মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ব্যক্তব্যে মানবাধিকার কর্মী ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখার স্বপ্ন নিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীন দেশের প্রতিটি মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আমরা এমন একটি দেশ চেয়েছিলাম যেখানে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। ধনী-গরীব উচু-নিচু জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ সবাই সমান অধিকার পাবে। আজ আমরা বিশেষ একটা গোষ্ঠীকে সুবিধা ভোগ করতে দেখছি। আর আদিবাসিদের নিয়ে কথা বলা ভাষা আমাদের নেই। সব জাতির লোকেরা যাতে সমান সুযোগ পায় সে ব্যাপারে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। প্রাণপন ভাবে আন্দোলনে লেগে থাকতে হবে।”

সুলতানা কামাল বলেন, “কেউ যদি কোন পরিচয়ের কারণে প্রতারণার শিকার হয়। তা হলে সেটা দেশের মুলনীতির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ বহু ধর্মের, বহু বর্ণের বহু জাতির দেশ হবে। রাষ্ট্র ধর্মের কোন স্থান থাকতে পারে না”।

তিনি আরো বলেন, “রাষ্ট্রীয়ভাবেই আদিবাসীদের প্রান্তিকতার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আজকে আদিবাসীদের সার্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে যে কথাগুলো বলা হয়েছে সেগুলো অবশ্যই রাষ্ট্রকে ইতিবাচকভাবে শুনতে হবে এবং আদিবাসীসহ দেশের আপামর জনসাধারনের মানবাধিকার রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে”।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, “বর্তমান সময়কে যদি আমরা পাকিস্তানের সময়ের সাথে তুলনা করি। তাহলে দেখা যাবে সেই সময়ে সংখ্যালঘুদের যে অবস্থা। আজকের স্বাধীন দেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থার কি কোন পরিবর্তন হয়েছে? গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ্যের সরকার ক্ষমতায় আসলেও সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থতির কোন উন্নয়ন আমরা দেখছি না। বাংলাদেশের সংবিধান পঞ্চদশ সংশোনীর মাধ্যমেও আমরা অসাম্প্রদায়িক হতে পারেনি। এই কারণেই এখনো এদেশের সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত হয়নি”।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম তার বক্তব্যে বলেন, “পাহাড়ী আদিবাসীদের আজকে সরকার অবগার চোখে দেখছে। তারা যেন নিজ দেশে পরবাসি। এভাবে কোন একটি গোষ্ঠীকে অব্যগার চোখে রেখে কোন ভাবেই টেকশই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়”।

তিনি বলেন, “আদিবাসীদের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম, অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার বেদনার, বারংবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও তার বিচার না হওয়া আদিবাসীদের মনে এক ধরনের বৈরিতা তৈরি করছে। এদেশের বৈচিত্র্যতা রক্ষা করতে হলে রাষ্ট্রকে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আদিবাসীদের মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন করতে হবে”।

তিনি বলেন, “আদিবাসীদেরকে প্রতিটি বিষয় থেকে বঞ্জিত করা হচ্ছে।বিশ্বব্যাপি যখন সমতার কথা বলা হচ্ছে তখন আমাদের দেশে আদিবাসীদের সমতার জায়গাগুলোকে সংকীর্ণ করে দেওয়া হচ্ছে। আর এটা থেকে বেড়ার একমাত্র পথ হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। টেকশই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ব্যাপারে সরকার আমাদের কাছে দায়বদ্ধ। আর এটা তখনি সম্ভব যখন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা যাবে”।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান বলেন, “আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে একধরনের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। যখন কোন পাহাড়ী আদিবাসীরা কোন কিছুর প্রতিবাদ করে তখনই সমঅধিকারের নামে সেখানে আদিবাসীদের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া হয়। আমি মনে করি সরকারকে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। সরকার কেন বিষয়গুলো নিয়ে টালবাহানা করছে সেটার জবাবদিহিতা সরকারকে দিতে হবে”।

এমবি আক্তার বলেন, ‘আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আদিবাসী অধিকার আন্দোলন গত ১৫-২০ বছর ধরে একই রকম অবস্থায় আছে। হয় এটি আন্দোলনের ব্যর্থতা নয়তো রাষ্ট্র ব্যবস্থা আদিবাসীদের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। আমরা মানবাধিকারের কথা যখন বলি তখন অনেকসময় সরকার মনে করে আমরা সরকারের শত্রু। আসলে তা নয়, এটি হচ্ছে আমাদের বাস্তবিক অবস্থা। রাষ্ট্রকে মানবাধিকার রক্ষায় আরো বেশী যত্নবান ও সক্রিয় হতে হবে। এদেশের সংখ্যালঘু-আদিবাসীদের কথা শুনতে হবে বলেই আমি মনে করি”।

কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন রবীন্দ্রনাথ সরেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, উন্নয়ন সংস্থা অক্সফামের প্রোগ্রাম ডাইরেক্টর এমবি আক্তার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাপেং ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন চৈতালী ত্রিপুরা এবং সঞ্চালনা করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের ফাল্গুনী ত্রিপুরা।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় আরো অংশ্রগহণ করেন, মানবাধিকার কর্মী রোজালিন কস্তা, জান্নাতুল ফেরদৌসী, অজয় এ মৃ. হামিদুর রহমান, শিপন রিবদাস প্রাণকৃষ্ণ, গনেশ মার্ডী, চঞ্চনা চাকমা প্রমুখ।

বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্ট ২০১৫ এর সম্পাদনা করেছেন প্রফেসর মংসানু চৌধুরী ও কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। মানবাধিকার রিপোর্টের কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করেছেন কাপেং ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মঙ্গল কুমার চাকমা; কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর বাবলু চাকমা; বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য পার্বতী রায়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুরাগ চাকমা; জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক মানিক সরেন; কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট অফিসার সিলভিয়া খিয়াং।

অক্সফামের সহযোগিতায় কাপেং ফাউন্ডেশন প্রতিবছরের ন্যায় বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা পঠিত বার্ষিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়- ২০১৫ সালে কমপক্ষে ৭৪ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠ যার মধ্যে নারী ও স্কুলের ছাত্রীকে পর্যন্ত ফৌজদারী অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। কমপক্ষে ১১৭ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সমতলের ১৩ জন (৩ জন নারী ও কন্যাশিশু হত্যাসহ) বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। ১৯১ জনের অধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যেখানে ২০১৪ সালে মাত্র ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ’

একই সময়ে কমপক্ষে ১৩৪ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যার মধ্যে ১০১ জন পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং ৩৩ জন সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে নির্যাতন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করা হয়েছে। এধরনের ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষগুলো, যেমন- নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরোক্ষ সমর্থন বা নিস্ক্রিয় ভূমিকা ছিল। গতবছর সমতলের কমপক্ষে ৮৪টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের বাড়িতে দুষ্কৃতিকারীরা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে অন্যদিকে সমতল ও পার্বত্য চট্টগ্রামের কমপক্ষে ৩৪টি পরিবারের বাড়ি ভূমিদস্যুরা অগ্নিসংযোগ করে ভস্মিভূত করেছে।

২০১৫ সালে কমপক্ষে ৪৫ টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবার নিজেদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে এবং ১৪০০ টি পরিবার উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৬৫৭ টি পরিবার।

ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সমতলের অন্তত একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গ্রাম হামলার শিকার হয়েছে, অপরদিকে সমতলের ১১.৫ একরসহ মোট ৫,২১৬ একর জমি রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় পক্ষ কর্তৃক দখল করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ২২.৫ একরসহ প্রায় ১৩২৬.৯৯ একর ভূমি অবৈধ জবরদখল ও অধিগ্রহণের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৫ সালে ভূমিদুস্যরা সমতল অঞ্চলে ১১ জনসহ মোট ২৮ জন প্রতিবাদকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে।

১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি ২০১৫ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে অনুমোদনের ফলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার খাসি জনগোষ্ঠীর পাল্লাথল পুঞ্জির মোট ৩৬০ একর ভূমি ভারতের হাতে চলে যাওয়ার শংকায় প্রায় ৩৫০ টি খাসিয়া ও গারো পরিবার চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে। এতে করে তাদের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

২০১৫ সালে সারাদেশে ৮৫ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৪ জন পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং ৪১ জন সমতলের নারী ও শিশু।

২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মোট ৪৩৪ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতন সহ বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। ২০১৫ সালে ২৬ টি ধর্ষণ ও গণধর্ষণ, ৩ টি হত্যা, ১১ টি শারীরিক লাঞ্ছনা, ১৬ টি ধর্ষণের চেষ্টা, ৫টি অপহরণ, ৬ টি শারীরিক ও যৌন হয়রানি এবং ২টি পাচারের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে সংঘটিত মোট ৬৯ টি ঘটনার মধ্যে ৩৮টি পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং বাকিগুলো সমতলে সংগঠিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি ও অন্যান্য অধিকারসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো বাস্তব অগ্রগতি ব্যতীত ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ এর বিরোধাত্মক ধারা সংশোধনের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন