মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি নিয়ে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়িতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, পাল্টা-পাল্টি সাংবাদিক সম্মেলন, হট্টগোল ও আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত খাগড়াছড়ি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছে।
খাগড়াছড়ি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে বুধবার সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি আলী আশরাফ, সহকারী জেলা কমান্ডার মো. মোস্তফা, মো. আলী হাওয়লাদা ও মো. আবুল হাসেম।
সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয় যে, অনলাইনে আবেদনকারী নতুন ১৮০ জনের যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্ত ১১৯ জনের যাচাই-বাছাই পক্রিয়া উচ্চ আদালতের নির্দ্দেশে স্থগিত আছে।
এ দিকে সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কমান্ডার মো. আব্দুর রহমান, মো. রফিক ও মো. আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে অপর অংশটি প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সম্মেলন স্থলে ঢুকে পড়ে এবং সাংবাদিক সম্মেলন বন্ধ করতে বললে দুইপক্ষের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে চলে এ হট্টগোল।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কমান্ডার মো. আব্দুর রহমানের অপর একটি অংশ খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতিসহ অধিকাংশ সদস্যকে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত ইসলামের সক্রিয় নেতা-সদস্য দাবি করে অনাস্থা প্রকাশ সহ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
তাদের অভিযোগ ছিল, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নব গঠিত কমিটির সভাপতি আলী আশরাফ বিএনপির সমর্থিত খাগড়াছড়ি জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হয়। অন্যদিকে নবগঠিত কমিটির অপর সদস্য মো. আবুল হাসেম হেফাজত ইসলামের সক্রিয় সদস্য এবং মামলার অভিযুক্ত আসামী। আরেক সদস্য মো. মোস্তফা বিএনপির রামগড় উপজেলার উপদেষ্টা ও সাবেক সহ-সভাপতি।
এছাড়াও মো. জাফর আহম্মদ বিএনপির সক্রিয় সদস্য হয়। তারা নানা অজুহাতে তালিকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিচ্ছে। তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে পক্ষান্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির নেতৃবৃন্দ এমন অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, কাউকে বাদ দেওয়ার ক্ষমতা এ কমিটির নেই। একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই হচ্ছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. রইছ উদ্দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়িতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুক হক খোকন স্বাক্ষরিত খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রেরিত প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ হয়, গত ০৯/০২/২০১৭ তারিখের ৪৮.০০.০০০০.০০৪. ০৪৯.২৩৩.০৯/২০১৭- ৪০৬ নং স্মারকের মাধ্যমে গঠিত খাগড়াছড়ি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে মো. রইছ উদ্দিন ২২২৮/২০১৭ নং রিট পিটিশন দায়ের করলে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ফারুক (এম. ফারুক)’র সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করে এবং বর্ণিত স্মারকটির কার্যকারীতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (রাজস্ব) ড. গোফরান ফারুকী বিষটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি মো. আলী আশরাফকে সভাপতি করে মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে। এ কমিটি ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা শুনানি করে। শুনানীতে খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি, মহালছড়ি, রামগড়, গুইমারা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার ৩০০ আবেদন যাচাই বাছাই করা হয়।
১৮ ফেব্রুয়ারি দিঘীনালা, লক্ষীছড়ি ও মানিকছড়ি উপজেলার নতুন আবেদন এবং বিভিন্ন উপজেলার অভিযোগের শুনানি হওয়ার কথা ছিল।