মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে তিন শতাধিক বাংলাদেশী পাহাড়ী যুবককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে
পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:
বান্দরবান জেলার মিয়ানমার সংলগ্ন দূর্গম উপজেলা থানচি ও রুমা থেকে পাহাড়ী যুবকদের নিয়ে গিয়ে খোদ মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দানের চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে। বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানের উপজাতীয় বাসিন্দাদের প্রলোভন দেখিয়ে মিয়ানমার নিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ভূমিতে পুনর্বাসন ও পাহাড়ী যুবকদের সেদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মিতে নিয়োগদানের জন্য চিঠির ইস্যু খবর ইতোমধ্যে জাতীয় মিডিয়াগুলোতে আলোচিত হয়েছে।
কিন্তু এবারে পাওয়া গেলো আরো গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই তিন শতাধিক পাহাড়ী যুবককে মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তারা কর্মরত রয়েছে।
এলাকার বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বান্দরবানের মার্মা সম্প্রদায়ের বেশকিছু যুবক মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে কর্মরত রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর জন্য সীমান্ত এলাকা থেকে আরো যুবক সংগ্রহের পাঁয়তারা শুরু করলে এখবর প্রকাশ্যে আসে।
জানা গেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া যুবকরা ছুটি পেলে বাংলাদেশে আসে। যা এলাকার চেয়ারম্যান, হেডম্যান ও কার্বারীরা জানেন। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দু দেশের নাগরিক এসব সশস্ত্র প্রশিক্ষিত যুবকরা বাংলাদেশের রাস্তাঘাট চেনে, স্থানীয় ভাষা ও জনগনের সাথে তাদের রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ এবং এরা স্থানীয় পাহাড়ী সশস্ত্র বাহিনীর সাথে মিলে যে কোন সময় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাতে পারে। বিষয়টি স্থানীয় ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিরাট ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে।
এ সংক্রান্ত আরো খবর
- বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় আরাকান আর্মির সদস্য সংগ্রহের চিঠি: নেপথ্যে কি?
- এএফপির প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বৌদ্ধদের রাখাইনে নিতে রোহিঙ্গাদের ভূমি দেওয়ার প্রলোভন মিয়ানমারের
- একমাসে মিয়ানমারের আরাকানে চলে গেছে বান্দরবানের ৩১ উপজাতীয় পরিবার
বাংলাদেশের ভোটার থানছি উপজেলার বাসিন্দা অথচ দীর্ঘদিন থেকে মিয়ানমার সেনা বাহিনীতে কর্মরত রয়েছে এমন কয়েকজন যুবকের নাম পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে। একধিক জনপ্রতিনিধি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৩ শতের বেশী বাংলাদেশী মার্মা ও চাকমা সম্প্রদায়ের যুবক মিয়ানমারে নিয়মিত সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছে ও কর্মরত রয়েছে।
থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের ফো-সু পাড়ার বাসিন্দা মং মং ছেন এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর গত ২০১৩ সালে মিয়ানমারে চলে যায়। বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে মংডু জেলায় কর্মরত আছেন।
থানচি উপজেলার রেমাক্রি বাজার এলাকায় ঙা নু মে মার্মার পুত্র ক্য ই হ্লা মং ৪/৫ বছর যাবৎ মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে বুচিডং এ অপারেশনে কর্মরত রয়েছে বলে জানা যায়।
থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড পাই মং পাড়ার (বড় মদক বাজার পাড়া) চিং সা নু মার্মার ছেলে মং হ্লা খই ৩ বছর আগে মিয়ানমারে যায়। বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিয়মিত সৈনিক হিসেবে মংডুতে কর্মরত রয়েছে। তার বাংলাদেশী ভোটার আইডি নং- ০৩০১৫২১৮১২৪৮।
থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের খু সা অং পাড়া (তং পাড়া), বড় মদক বিজিবি ক্যম্পের পাশে চ নু প্রায় ১১ বছর যাবৎ মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে কর্মরত। বর্তমানে সেনাবাহিনীতে হাবিলদার পদে কর্মরত রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের দাবী, বান্দরবান জেলার সাথে মিয়ানমারের প্রায় ১৭৬.৪২ কি. মি. সীমানা রয়েছে। অধিকাংশ দুর্গম ও যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় সীমান্তের পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় জেএসএস এর সশস্ত্র বাহিনী ও মিয়ানমারের একধিক বিদ্রোহী বাহিনী রয়েছে। স্থানীয়দের জীবনের নিরাপত্তা বজায় রাখতে এসব সন্ত্রাসীদের মন যুগিয়ে চলতে হয়।
রেমাক্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা (রনি) উল্লিখিত ব্যক্তিদের চিনেন বলে প্রতিনিধির কাছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, রুমা ও থানছি থেকে প্রায় ৩০০ বেশী মার্মা সম্প্রদায়ের যুবক মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন। এসব ব্যক্তিরা পরিবার পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে মিয়ানমারে বসবাস করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় বসবাস ও যাতায়াত করতে হলে সব বাহিনীকে ম্যানেজ করে চলতে হয়। ২০০৮ ড্যানিডা কর্মকর্তা সুমন অপহণের ঘটনার জের ধরে আমার বড় ভাই হেডম্যানসহ আরো ২জন কার্বারীকে এএলপি হত্যা করে বলে তিনি জানান।
উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং বলেন, দূর্গমতা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে থানছি উপজেলাকে একসময় মনে হত এটি বার্মার রাজ্য। বার্মার স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র বাহিনীর আনাগোনা ছিল প্রকাশ্য। কয়েক বছর ধরে পরিবেশ পরিস্থিতি পাল্টেছে। এখানে বিজিবির তিনটি ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। নতুন নতুন বিওপি করা হচ্ছে। সীমান্ত সড়ক হয়ে গেলে যোগাযোগ যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি সন্ত্রাসীদের আনাগোনা কমে যাবে।
তিনি আরো বলেন, তিন পার্বত্য জেলা থেকে মার্মা, চাকমা, ত্রিপুরা জাতির কয়েক হাজার পরিবার মিয়ানমারে বসবাস করছেন। তাদের মধ্য অনেকে আবার বাংলাদেশেও যাতায়ত করেন। বাংলাদেশী প্রায় তিনশত জন মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে রয়েছে।
থানছি ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি বিনা অনুমতিতে অন্যদেশের নাগরিক হয়ে সেনা বাহিনীতে কর্মরত থাকেন সেটি অপরাধ। এবিষয়ে তথ্য নিয়ে মিয়ানমারে নাগরিক হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
বলিপাড়া বিজিবি কমান্ডার হাবিবুর রহমান বলেন, সীমান্ত এলাকার পাহাড়ী জনগণ গরীব। তারা কৃষিকাজের জন্য মিয়ানমারে গিয়ে থাকে, আবার ফিরেও আসে। সম্প্রতি কোন যুবক মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছে এমন তথ্য জানা নেই। দিনদিন আমাদের নতুন নতুন বিওপি হচ্ছে এবং সীমান্ত সুরক্ষিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় একটি গোয়েন্দা সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্বত্যনিউজকে জানায়, বিষয়টি তারাও জেনেছেন এবং এ বিষয় নিয়ে তারা কাজ করছেন।
সূত্র মতে, বান্দরবানের রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলা মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় মার্মা, ম্রো, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজনের বসবাস। চেহারা, ধর্ম ও ভাষার মিল থাকায় সীমান্তের অপর পাড়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাথে তাদের সম্প্রদায়গত ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মার্মা সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে রাখাইন/মগ নামে অভিহিত করা হয়।
ফলে এ সমস্ত সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারে চলে যায়। কেউ কেউ আবার ফিরেও আসে। আবার অনেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তাদের অনেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে থাকতে পারে। তাদের সাথে এ দেশে থাকা তাদের আত্মীয় স্বজনের যোগাযোগ রয়েছে। সেই সূত্রে আসা যাওয়াও রয়েছে। তাদের সাথে স্থানীয় পাহাড়ী সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে। ফলে বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। তাই বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি।
please throw out all of upojati and rohinga into mayenmer or anywhere.
খুবই ভালো খবর।