মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি 

ঘুমধুম প্রতিনিধি:

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও মিয়ানমার সামরিক জান্তার সঙ্গে কথিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ গত ৪ দিন ধরে অব্যহত রয়েছে। এতে ৯৬জন নিহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

মিয়ানমার সরকারের দাবি অনুযায়ী শুক্রবার ভোরে ৩০টি পুলিশ ও সেনা চৌকিতে পরিকল্পিত হামলা চালায় (আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেনশন আর্মি)। হামলাকারীরা ওই দলের ছিল দেড়শ’র বেশি মানুষ। বন্দুক, চাপাতি ও ঘরের তৈরি গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালানো শতাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে বলে সরকারি বিবৃতিতে জানিয়েছেন।

তাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্রের ছবি ও অনলাইনে প্রকাশ করে। ইতিমধ্যে আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেনশন আর্মি (এআরএসএ) হামলার দ্বায় স্বীকার করে নিজেদের মিয়ানসার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক বাহিনী বলে দাবি করেছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ও মিয়ানমারের এ ধরনের হামলার ৯জন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ সহ ব্যাপক নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় কমপক্ষে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এদেশে আশ্রয় নেয়।  সোমবার(২৮আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্র“ সীমান্তের ওপারে ৫০জনের একটি মগদের যেতে দেখে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিকাল ৪ টা ৫ মিনিটের দিকে মিয়ানমার সীমান্তে একটি হেলিকেপ্টার উড়ে যেতে দেখেছি।

সীমান্তে বসবাসকারী লোকজনের মাঝে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা:

গত কয়দিন ধরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও রোহিঙ্গা সংগঠনের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে ব্যাপক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম, জলপাইতলী, তুমব্র“ পশ্চিমকুল, উত্তর কুল, কলাবাগান, বাইশপাড়ি, চাকমাপাড়া, হেডম্যান পাড়া রেজু আমতলী, আচারতলি সহ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের অজানা এক আতঙ্ক বিরাজ করেন। স্থানীয় সিরাজ, শাহ জাহান, আলী আবর, ইমরান বলেন, প্রতিদিন প্রচণ্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। তার কারণে পরিবারের সদস্যদের অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিজিবি কর্তৃক সতর্কতা জারি করেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষা সহযোগিতা:

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। মিয়ানমারের ডেকুবনিয়া, ফকিরা বাজার, মিয়া বাজার, উত্তর পাড়া, তুমব্র“ থেকে আসা ৫ শতাধিক নারী-শিশু, পুরুষের খিচুড়ি, মুড়ি ও শুকনা খাবার বিতরণ করেন। ঘুমধুম ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন।

নারী ও শিশুর উপস্থিতির হার বেশি:

মিয়ানমারের অভ্যন্তরিন ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অবস্থানকারী নারী-শিশু উপস্থিত বেশি। ওখানে পুরুষ সদস্য আসতে পারেনি। গত দুই দিন ধরে সীমান্তের ঘুমধুম, তুমব্র“, বাইশপাড়ি, জলপাইতলী, বেতবুনিয়া, কলাবাগান ঘুরে দেখা গেছে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেশি সংখ্যক নারী শিশু উপস্থিতির হার বেশি। সেই কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কিছু কিছু নারী ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে এসেছে।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে চলছে বাণিজ্য:

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প ও বালুখালী টালে পৌঁছাতে পারলে কতিপয় ব্যক্তিরা জনপ্রতি ১ হাজার টাকা বকশিস পায়। ঘুমধুম ইউনিয়নের জনৈক এক ব্যক্তি দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ঘুমধুম ইউপির সদস্য খালেদা বেগম বলেন, এখানকার কতিপয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি উত্তেজনা হওয়ায় এলাকার মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ভয়ের কোন কারণ নেই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন