Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

মিয়ানমারে বিতর্কিত জাতিসংঘ কর্মকর্তা রেনেটার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন অন্তর্বর্তী প্রতিনিধি

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারে জাতিসংঘের বহুল বিতর্কিত আবাসিক প্রতিনিধি রেনেটা লকের মেয়াদ না বাড়িয়ে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালনে নতুন একজন আবাসিক প্রতিনিধির নাম ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার নরওয়ের নাগরিক নাট ওস্তবিকে অন্তবর্তী আবাসিক প্রতিনিধির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব হারানো আবাসিক প্রতিনিধি রেনেটা লকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রোহিঙ্গা নিধনের পূর্বাভাস গোপন করা এবং মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ হাজির করে প্রভাবশালী দুই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও গার্ডিয়ান। জাতিসংঘ অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, রেনেটার মেয়াদ না বাড়ানোর সঙ্গে মিয়ানমারে তার ভূমিকার কোনও সম্পর্ক নাই।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমার সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই দেশটিতে অস্থায়ীভাবে নতুন প্রতিনিধি নিয়োগ দিলো জাতিসংঘ। আফগানিস্তান, পূর্ব তিমুরসহ বেশ কয়েকটি সংঘাতের এলাকায় জাতিসংঘের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে ওস্তবির। মিয়ানমারে সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি রেনেটা লক ডেসালিয়ানের অন্তর্বতী দায়িত্বগুলো পালন করবেন তিনি।

গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ সূত্র এবং মিয়ানমারের ভেতরের ও বাইরের মানবাধিকারকর্মীদের দাবিকে উদ্ধৃত করে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান সংকট শুরু হওয়ার চার বছর আগে থেকেই কানাডীয় নাগরিক রেনেটা লক ডেসালিয়েন বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা এলাকা পরিদর্শনে বাধা দিয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোচ্চারমূলক প্রচারণা কাজে বাধা দিয়েছেন তিনি।

তাছাড়া যেসব কর্মকর্তা সতর্ক করতে চেয়েছেন যে, এভাবে চলতে থাকলে জাতিগত নিধন অনিবার্য, তাদেরকেও তিনি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের জাতিসংঘ কার্যালয়ের প্রধান রেনেটা লক ডেসালিয়েন চাননি মানবাধিকার সংগঠনগুলো সংকটপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করুক। স্পর্শকাতর রোহিঙ্গা এলাকায় মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ প্রতিহত করেছেন তিনি।

অক্টোবরের শুরুতে ইয়াঙ্গুনভিত্তিক বিশ্লেষক ও জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা রিচার্ড হর্সের করা একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের পূর্বাভাস জাতিসংঘকে আগেই দেওয়া হয়েছিল।

রিচার্ড হর্সে জানান, জাতিসংঘ সদর দফতরে পাঠানো তার প্রতিবেদনে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। আহ্বান জানানো হয়েছিল, যেন পরিস্থিতির উন্নতির উপায় শনাক্ত করা হয়। জাতিসংঘ সূত্র এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান সেসময় জানিয়েছিল, রিচার্ড হর্সে’র ওই প্রতিবেদন শুধু উপেক্ষাই করা হয়নি; বরং সেটা গোপন রাখা হয়েছিল। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য গার্ডিয়ান’কে বলেন, ওই প্রতিবেদনটিকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছিল।

জাতিসংঘের ফোরাম এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাছেও এটা সরবরাহ করা হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রেনাটা লক ডেসালিয়ান পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি পছন্দ করেননি। দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধান বলেছে, ইয়াঙ্গুনভিত্তিক বিশ্লেষক রিচার্ড হর্সে’র ২৮ পৃষ্ঠার পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি রেনাটা লক ডেসালিয়ানকেই দেওয়া হয়েছিল। তিনি এতে খুশি হতে না পারায় সেটি আর বিতরণ করেননি।

তবে মিয়ানমারে রেনাটা লক ডেসালিয়ান-এর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নিধনে মিয়ানমার সরকারকে সহযোগিতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান দুজারিক সংস্থাটির এমন অবস্থানের কথা জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর রেনাটা লক ডেসালিয়ান-এর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে জাতিসংঘ দৃঢ়ভাবে ভিন্নমত পোষণ করছে। আবাসিক সমন্বয়কারী এবং তার টিমের প্রতি মহাসচিবের শতভাগ আস্থা রয়েছে।

তবে জাতিসংঘ মহাসচিবের এ বক্তব্যের কয়েকদিন পরই বিবিসির নতুন এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে জাতিসংঘ সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, তাদের আগের অনুসন্ধানে রেনেটা লকের বিতর্কিত ভূমিকার কথা উঠে আসার কারণেই রেনেটাকে নিউ ইয়র্কে সংস্থাটির সদর দফতরে ডাকা হয়েছে। ইয়াঙ্গুনের কূটনীতিক ও ত্রাণ সংস্থাগুলোর বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসালিয়েনের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তটি মূলত তার মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই নেওয়া হয়েছে।

তবে জাতিসংঘ এ খবরটি নাকচ করে দিয়েছিল। রেনেটাকে সদর দফতরে ডাকার কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ নিজেও জানিয়েছে, অক্টোবরের শেষদিকেই ফিরে যেতে পারবেন ডেসালিয়েন। তাকে দায়িত্ব থেকে বদলি করা হবে। তবে জাতিসংঘের দাবি, এটা তার কোনও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে নয়। মিয়ানমারের জাতিসংঘ দফতর থেকে জানানো হয়, ডেসালিয়েনের চলে যাওয়াটা সংস্থার নিয়মিত কার্যক্রম। নতুন কেউ আসার প্রক্রিয়া হিসেবেই এটি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পর ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তখন থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে।

জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ইন্টারসেক্টর কো অর্ডিনেশন গ্রুপ- আইএসসিজি জানিয়েছে, আগস্টে সহিংসতা জোরালো হওয়ারপর থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ সেনা অভিযানকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রধান ও মানবাধিকার সংস্থা রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। তবে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সহিংসতার জন্য পাল্টা রোহিঙ্গাদের দায়ী করেছে।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন