মিয়ানমারে ফিরতে রোহিঙ্গাদের ৬ শর্ত

বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার:

মিয়ানমারে ফিরতে সে দেশটির প্রতিনিধি দলকে ৬টি শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।

বুধবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রায় ৫০জন রোহিঙ্গার সাথে বৈঠক করেন প্রতিনিধি দল। তখন মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে ৬টি শর্ত তুলে ধরেন তারা।

এ সময় মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বাধীন দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে এই ৬টি শর্ত তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা।

পরিদর্শনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক।

কুতুপালংয়ে ডি-৫ রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল ডি-৫ ক্যাম্প এলাকায় ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন (আইএসসিজি) এর সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করেন।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের এসব দাবির বিষয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব কোনও জবাব দেননি। এরফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানাগেছে।

বৈঠকে শর্তগুলো উপস্থাপন করেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার আব্দুর রহিম, ছেনুয়ারা বেগমসহ বেশ কয়েকজন। তারা বলেন, ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্তগুলো মেনে নিলে তারা ফিরে যেতে ইচ্ছুক।

রোহিঙ্গাদের ৬টি শর্তের মধ্যে রয়েছে-

জমিজমা ফেরত : মিয়ানমারে তাদের সমস্ত সম্পত্তি ও বসতভিটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের সেই সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে। মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগেই এই ব্যবস্থা করতে হবে।

মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রদান: মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এরফলে সবকিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। তাই নাগরিকত্ব ফেরত দিতে হবে।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার: রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর পরিচালিত বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।

ক্যাম্পে থাকবেন না রোহিঙ্গারা: বিভিন্ন মাধ্যমে রোহিঙ্গারা খবর পেয়েছেন সেখানে (মিয়ানমারে) তাদেরকে রাখার জন্য ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তারা ক্যাম্পে থাকতে চান না। তারা চান, মিয়ানমারে তাদের ফেলে আসা বসতভিটায় আবারও নতুন করে বসতি গড়ে তুলতে।

নিরাপত্তা জোরদার: রাখাইন রাজ্যে যেসব জায়গায় রোহিঙ্গাদের বসতি ছিল সেখানে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। যাতে রোহিঙ্গাদের ওপর আর কোনও নির্যাতন চালানো না হয়।

গণমাধ্যমের সামনে সব শর্ত মেনে নেওয়া: রোহিঙ্গারা যেসব শর্তে মিয়ানমারে ফেরত যাবে, সেগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে এসে মেনে নিতে হবে। যাতে পরবর্তীতে দেশটির কর্তৃপক্ষ এসব ওয়াদা ভঙ্গ করতে না পারে।

এ বিষয়ে উখিয়া রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ফয়েজু বলেন, ‌‘বন্দি শিবিরে রোহিঙ্গারা আর থাকতে চায় না। জাতি হিসেবে রোহিঙ্গা স্বীকৃতি, সেফ জোন এবং সকল রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার না পেয়ে কীভাবে আমারা সেদেশে ফেরত যাই?’

রোহিঙ্গাদের দাবিগুলোর বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও উত্তর দেননি মিয়ানমরের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। পরে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় মিন্ট থোয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের দেওয়া দাবিগুলো মিয়ানমার সরকারের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে।

পাশাপাশি বাকি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করা হবে।

মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে আসা মিয়ানমারের ১৬ প্রতিনিধি ছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন