মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র: বিশেষ মার্কিন দূত

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়নের দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার ঢাকায় এ কথা জানান আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত স্যাম ডি ব্রাউনব্যাক।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে দুদিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকার আমেরিকান সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ট্রাম্প প্রশাসনের এই বিশেষ দূত। এর আগে তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির ঘুরে দেখেছেন এবং সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারকে একটি “সৃষ্টি করা মানবিক সংকট হিসেবে” হিসেবে বর্ণনা করে মার্কিন দূত বলেন, “এটা আমার দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। সাম্প্রতিক অতীতে এমন ভয়াবহ নৃশংসতা পৃথিবীর কোথাও হয়নি।”

“মিয়ানমার স্পষ্টতই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিধন চালিয়েছে। তবে এ বিষয়ে পূর্ণ এবং গভীর তদন্ত করে নিজস্ব উপায়ে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

শিশুদের কাছে স্যাম যা শুনেছেন

রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এক এক করে অনেক শিশুর সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন দূত স্যাম ব্রাউনব্যাক। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, “শিশুদের চোখের সামনে তাদের নিকটজনদের প্রহার করা হয়েছে, গুলি অথবা হত্যা করা হয়েছে।”

“একটি শিশু জানিয়েছে যে, সে তার দাদা এবং দাদি দু’জনকেই গুলি করে মারতে দেখেছে। এ এক ভয়াবহ সন্ত্রাস। একজন মা তার ১২ বছরের কন্যাকে চোখের সামনে জবাই করতে দেখেছে। একজন ইমামকে পিটিয়ে নারী ধর্ষণের দৃশ্য অবলোকন করতে বাধ্য করা হয়েছে,” সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান।

“যাদের জিজ্ঞাসা করেছি তাঁদের মধ্যে শুধু একজন ব্যতীত সবাই বলেছে যে মুসলমান হওয়ার কারণে তাঁদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে,” তিনি বলেন।

“এটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযান। আমরা এ ব্যাপারে তদন্ত চালাতে থাকব। সামনেই আরও পদক্ষেপ দেখতে পাবেন, ” বলেন স্যাম।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে কোনো জোরজবরদস্তি গ্রহণযোগ্য নয়। প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশে।”

ঢাকার আমেরিকান সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য রাখছেন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত স্যাম ডি ব্রাউনব্যাক।
ঢাকার আমেরিকান সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য রাখছেন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত স্যাম ডি ব্রাউনব্যাক। ১৯ এপ্রিল ২০১৮। [সৌজন্যে: মার্কিন দূতাবাস, ঢাকা]

যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের ইঙ্গিত

যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। গত বুধবার রাতে এ নিয়ে টেলিফোনে আলাপের সময় স্যাম ব্রাউনব্যাকের কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।

“রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সংঘবদ্ধ ও ভয়াবহ নৃশংসতার জন্য জড়িত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে বিচারের আওতায় আনতে হবে,” বলেন স্যাম।

“যুক্তরাষ্ট্র পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। আরও তদন্তের পর মিয়ানমার যে গণহত্যা চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,” জানিয়ে স্যাম ব্রাউনব্যাক বলেন, “সামনের দিনগুলোতে আপনারা আরও পদক্ষেপ দেখতে পাবেন।”

যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আরও পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন কংগ্রেস ও প্রশাসনে আলোচনা চলছে। বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জোরালোভাবে উঠছে।”

আমেরিকা আগেই এই ঘটনাকে জাতিগত নিধন হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং একটি অনুসন্ধানী দল পাঠিয়েছে। জেনারেল মঙ মঙ সোয়ে-সহ সন্ত্রাসের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জেনারেল মঙ মঙ রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন।

ওই অভিযানের মাধ্যমে গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তারা অন্তত অন্তত ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের দিকে তাড়িয়ে দিয়েছে। নিপীড়িত ওই জনগোষ্ঠী কক্সবাজারের কয়েকটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।

এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে পরের কয়েক মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা।

এ জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ। তবে তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার।

গত বছর রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদেরা মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে মার্কিন সিনেটে একটি প্রস্তাব তুলেছেন।

রোহিঙ্গা শিশুরা চরম ঝুঁকিতে

বছরের প্রথম ভারী বৃষ্টিপাত আট লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ডেকে আনছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। রোহিঙ্গা শিশুরাও চরম ঝুঁকির মধ্যে আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সেভ দ্য চিলড্রেনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের রোহিঙ্গা রেসপন্সের কমিউনিকেশন ও মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত আছেন ডাফনি কুক। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যাম্পের নিচু অঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে। ক্যাম্পে ঢোকা এখন কষ্টসাধ্য বিষয়। থকথকে কাদার মধ্যে চলাফেরা করা দুরূহ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডাফনি কুক বলেন, শিশুদের জন্য বিষয়টি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ঘনবসতির কারণে শিশুরা বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন