মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রমাণের মতো ডকুমেন্ট রয়েছে রোহিঙ্গাদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণ বা কাগজ-পত্র না থাকলে তাদের আর ফিরিয়ে নেবে না মিয়ানমার। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বুধবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার সরকারের উপদেষ্টা ইউ থাং টুন বলেছেন, যাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ নেই তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে না। তাদেরকে এটা অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, তারা বহু বছর ধরে মিয়ানমারে বাস করেন। যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তারা ফিরে আসতে পারবেন।

তিনি দেশের নাগরিকদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, আপনাদের নিরাপত্তার কোনো বিঘ্ন হবে না। সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার যেসব রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে তাদের প্রত্যেকের তালিকা করা হয়েছে। তাদের কাছে প্রমাণ করার মতো ডকুমেন্টও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মাঝে চিকিৎসা সেবাদানকারী একজন ডাক্তার জয়নুল আবেদীন রেডিও তেহরানকে জানান, যেসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদের কাছে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রমাণের মতো অনেক রকম ডকুমেন্ট রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অনেক বছর আগে মিয়ানমার সরকারের দেয়া ন্যাশনাল রেজিট্রেশন কার্ড। এছাড়াও জমিজমার দলিল, স্কুল কলেজে পড়ার সার্টিফিকেট, বিভিন্ন বিল বাবদ সরকারী খাতে টাকা জমা দেবার রশীদ ইত্যাদি প্রমাণ হিসেবে তাদের কাছে রয়েছে।

জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা জানাচ্ছেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই আহত-গুলিবিদ্ধ। তাছাড়া পালিয়ে আসার পথে স্থলমাইন বিস্ফোরণেও অনেকে আহত হয়েছেন এবং সমূদ্রপথে নৌকাডুবি হয়ে অনেক রোহিঙ্গা মারা গেছেন।

এদিকে, বাংলাদেশ কোনো রকম সংঘাতে না জড়িয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়াসহ রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে, মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক।

বাংলাদেশ সফররত তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ আশ্বাসের কথা ঘোষণা করেন। এছাড়া তিনি মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ও জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ সময় তার সাথে ছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেগলুত চাভুসওগলু, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।

এমিনি এরদোগান বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় তুরস্কের একটি বিশেষ বিমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে সড়ক পথে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। সেখানে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের উপর মিয়ানমারে বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন।

ওদিকে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বার্তা সংস্থা এপি’র এক খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সংগঠন। লাহোরে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। তাদের হাতে ছিল প্লাকার্ড। তাতে লেখা- ‘ওয়েক আপ রুলারস অব মুসলিম কান্ট্রিস’। অর্থাৎ ‘মুসলিম বিশ্বের শাসকরা জেগে উঠুন’। রোহিঙ্গাদের গণহত্যার প্রতিবাদে তারা নিন্দা প্রকাশ করেছেন অং সান সুচির প্রতি।

সূত্র: পার্সটুডে

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন