মা-বাবা’র ভরণ-পোষণ আইনে মামলায় কক্সবাজারে প্রথম ৩ জনকে গ্রেফতার

Pic
কক্সবাজার প্রতিনিধি :
বিশ্ব মা দিবসে জন্মদাতা মায়ের প্রতি নানা ভাবে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা প্রকাশ করতে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে।

ওখানে অনেকে লিখেছেন, ‘শুধু মা দিবসে কেন? সারা বছরই যেন মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসা বজায় থাকে’। অনেকে আবার মায়ের প্রতি সন্তানের অবহেলার করুণ ঘটনাও তুলে ধরেছেন।ঘৃণা প্রকাশ করেছেন সক্ষম হওয়ার পরেও ভরণ-পোষণ না দিয়ে বৃদ্ধা মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রম ও অন্যত্রে ঠেলে দেওয়ার বিষয়কে। ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়ে আর খবর না নেওয়াকে। আরো ঘৃণা প্রকাশ করেছেন সন্তানদের অত্যাচার আর অবহেলার কারণে বৃদ্ধা মা-বাবাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে বাধ্য করার মত নোংরা বিষয়কে।

জন্মদাতা মা-বাবাকে যারা অবহেলা করে, অত্যাচার করে, সক্ষম হওয়ার পরেও ভরণ-পোষণ প্রদান করে না তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে আইনানুগ ব্যবস্থা। পিতা-মাতা চাইলেই করতে পারবে মামলা। আর অপরাধ প্রমানিত হলে হবে জেল-জরিমানা। এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞ আইনজীবীরা।

এদিকে পিতা-মাতার ভরণপোষণ মামলার কক্সবাজারের উখিয়ায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। এটি এ জেলায় সর্বপ্রথম ঘটনা।

উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনার পাড়া বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী বৃদ্ধা মাহমুদা খাতুনকে (৮১) তার ছেলে সিরাজ আহম্মদ (৪২) দীর্ঘদিন ভরণ-পোষণ দিচ্ছিল না। শুধু তাই নয় তিনি ও তার দুই ছেলে অর্থাৎ বৃদ্ধার দুই নাতি আব্দুল খালেক (২৫) ও মাহমুদুল হক (২২) বৃদ্ধার উপর চরম অত্যাচার চালাচ্ছিল।

এ ঘটনায় গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ২য়’ এ (উখিয়া) পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইনে (সি. আর-২৬৬/২০১৬ নং) মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত শুক্রবার বৃদ্ধার ছেলে সিরাজ আহম্মদ ও তার দুই নাতী আব্দুল খালেক ও মাহমুদুর হককে উখিয়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। এটি কক্সবাজারে প্রথম ও একমাত্র ভরণ-পোষণ আইনের মামলা বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

এ আইনের ব্যাপারে কক্সবাজার আদালত পাঙ্গনে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞ আইনজীবির সাথে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ প্রদান না করলে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোন সন্তান বাবা-মাকে ভরণ পোষণ না কররে বা এই আইনের বিধান লঙ্ঘন কররে অনূর্ধ্ব ১ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। উক্ত অর্থদন্ডা অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদন্ডে দন্ডিত হবে।

পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ এর আইন অনুযায়ী বৃদ্ধ ও কর্মহীন বাবা-মা তাঁর সন্তানের কাছ থেকে অধিকার আদায় করতে পারবেন। প্রত্যেক কর্মক্ষম সন্তানকে তার মা-বাবার ভরণ-পোষণের নিশ্চিয়তা দিতে হবে। পিতা-মাতার এইক সঙ্গে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। কোনা সন্তান তার পিতা-মাতাকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বৃদ্ধনিবাস বা অনত্রে আলাতাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। পিতা-মাতা স্বেচ্ছায় অন্যত্রে বাস করলে তাঁদের মাসিক-বার্ষিক আয়ের যুক্তিসংগত অর্থ নিয়মিত প্রদান করতে হবে। তাদের স্বাস্থ্য সর্ম্পকে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাবেসা ও পরিচর্র্যা করতে হবে। সন্তানকে নিয়মিতভাবে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কিভাবে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে এমন প্রশ্নে জানান, বাবা বা মা কিংবা উভয়ে প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে লিখিত আবেদন দাখিল করতে পারবে। আবেদন পাওয়ার পর বিচারক অভিযোগ আমলে নেবেন। প্রথমে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তি করার চেষ্টা করবেন। বিচারক অভিযোগটি আপস-নিস্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বার, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলর বা অন্য যেকোনো উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে প্রেরণ করবেন। এভাবে নিস্পত্তি হলে সেইটি উপযুক্ত আদলত কতৃক নিষ্পত্তিকৃত বলেই গণ্য হবে। আর যদি নিষ্পত্তি না হয়, আহলে বিচারক বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হবে। হবে জেল-জরিমানা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “মা-বাবা’র ভরণ-পোষণ আইনে মামলায় কক্সবাজারে প্রথম ৩ জনকে গ্রেফতার”

  1. এক বৃদ্দ বাবা ভরন পোষণ তো পাচ্ছেই না, একমাত্র ছেলে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সমস্ত সম্পত্তি লিখে নিয়ে, একটা বিবাহ দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয় বরতমানে বৃদ্দার দুই সন্তান একটা ছেলে একটা মেয়ে নিয়ে খুব কস্টে জীবন যাপন করছে সে কি পাবে তার সম্পত্তি ফিরে, কিভাবে সম্ভব যানাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন