মায়ের অপেক্ষায় মিনহাজ

কাউখালী প্রতিনিধি:

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার সুগারমিল এলাকার দিদারুল আলমের ছেলে ছোট্ট মিনহাজা। এইতো ক’দিন আগে ৭ বছরে পা দিল। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। উপজেলার মদিনাতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ১ম শ্রেণির ছাত্র। থাকে মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী খালার বাসায়। বাবা থাকলেও তার দেখাশুনার পাশাপাশি লেখপড়ার খোঁজ খবর রাখতেন মা। প্রতি সপ্তাহে কিছু একটা হাতে নিয়ে আদরের ধনকে দেখতে মাদ্রাসায় আসতো তার মা।

১৩ জুন ২০১৭ রাঙামাটি জুড়ে স্মরণকালে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় শুধু কাউখালীতে মাটি চাপা পড়ে ২১ প্রান। মৃত্যুর মিছিলে শামিল হন মিনহাজের মা লায়লা বেগমও। আহত হয়ে একপ্রকার পুঙ্গ অবস্থায় ঘরে পড়ে আছেন বাবা দিদারুল আলম। গুরুতর আহত হয়েছে মিনহাজের বড় ভাই মহিউদ্দিন। মিনহাজের পরিবারে এখন হাল ধরার এখন আর কেউ নেই।

সপ্তাহ শেষে এখন আর কেউ তাকে দেখতে আসেনা। মায়ের প্রতীক্ষায় ঈদুল ফিতর গেল। সামনে আসছে ঈদুল আযহা। কিন্তু কেউতো আসেনা। দুনিয়াশুদ্ধ জানে মিনহাজের পরিবারে কি হয়েছে। জানেনা শুধু ছোট্ট মিনহাজ। খালা তাসলিমা বেগম, তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি প্রতিবেশিরাও মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে দেয়নি। আত্মীয় স্বজন বুঝতে দেয়নি মায়ের অভাব। তবুও তো একটি শব্দ মা। মায়ের অভাব কি অন্য কারো দ্বারা পূরণ করা সম্ভব?

কেউ কেউ নিজের অজান্তে তার মায়ের মৃত্যুর কথা মুখ ফসকে বলে ফেললেও সে জানেনা মৃত্যু কি জিনিষ। ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে সবার দিকে। মাদ্রাসার আঙ্গিনায় সারাক্ষণ সে হাসছে, খেলছে, ছোটাছুটি করছে। সে এতটুকু বুঝে মা তার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবে। ঈদে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে। না, মিনহাজের মা আর আসবেনা, আদর করে কপালে চুমু দিয়ে নাস্তার পেকেট তার হাতে তুলে দেবেনা।

আশান্বিত, সদা হাস্যোজ্জল ছোট্ট মিনহাজ এখনো মায়ের প্রতিক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে। এজগতে মিনাহাজের সাথে তার মায়ের দেখা না হউক, পরকালে যেন ছোট্ট শিশুর প্রতিক্ষার প্রহর শেষ হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন