মানিকছড়ি সেমুতাংয়ের নতুন কূপে গ্যাসের অস্তিত্ব না মেলায় গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে কার্যক্রম

মানিকছড়ি প্রতিনিধি:

প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ মানিকছড়ির সেমুতাং গ্যাস ফিল্ডে গ্যাস ফুরিয়ে আসছে! ২০১১ সাল থেকে চালু হওয়া গ্যাস এখন শেষ হওয়ার পথে। এছাড়া নতুন খননকৃত ৭ নং কূপে প্রয়োজনীয় গ্যাস না পাওয়ায় সেটির কূপে এখন সীসা ঢালাইসহ নির্মাণ সামগ্রী গুঁটিয়ে ফেলা হচ্ছে।

এদিকে এ গ্যাসফিল্ডের আশে-পাশে নতুন কূপের অনুসন্ধান শুরু করতে যাচ্ছে বাপেক্স।

সরজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সীমান্তবর্তী মানিকছড়ি উপজেলার কালাপানি মৌজার ২১ একর টিলাভূমির ওপর ১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ কোম্পানীর একটি গ্যাস অনুসন্ধানী দল সর্বপ্রথম এ গ্যাসক্ষেত্রটি আবিস্কার করেন।

ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘ কয়েক বছর অনুসন্ধান শেষে ১৯৬৯সালে একযোগে ৫ কূপের মাধ্যমে পরীক্ষামূলভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু হলেও বছর যেতে না যেতে গ্যাসফিল্ডে বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা! ফলে অংকুরেরই বিনাশ। এর পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৩,১৯৯৪,১৯৯৭,২০০০,২০০৪ সাল নাগাদ গ্যাস উত্তোলনে চেষ্টা চালায়।

সর্বশেষ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার একনেকের বৈঠকে মানিকছড়ির সেমুতাং গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলনে সক্রিয় হয় এবং ২০১১সালের এপ্রিল মাসে ৫ নং কূপ থেকে জাতীয় গ্রীডে (চট্টগ্রাম) গ্যাস সংযোগ দেয় পেট্রোবাংলা(বাপেক্স)। শুরুতে গ্যাসের গতি ১৫-১৭ মিলিয়ন ঘনফুট।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ৬ নং কূপ খননে গেলেও সেটির গ্যাস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি! একবছর যেতে না যেতেই এর গতি কমতে থাকে এবং বছর দেড়েক পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে ৫ নং কূপ অদ্যোবদি গড়ে ২-১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিচ্ছে জাতীয় গ্রীডে।

গ্যাসের গতি কমতে থাকায় ২০১৭ সালে ৬ নং কূপ অর্থাৎ সেমুতাংয়ের মূল কূপ থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে সাপমারায়(নোনাবিল) নতুন কূপের সন্ধান পায় বাপেক্স । এটি সেমুতাংয়ের ৭ নং কূপ। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে এ কূপে খনন কাজ শেষে ফলাফল শুন্য হওয়ায় হতাশ হয়েছে বাপেক্স, ফলে উক্ত কূপের মূখে সীসা ঢালাইয়ে চিরতরে কূপটি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে খননকৃত কূপ থেকে শ্রমিকরা পাইপ তুলছে। এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এ কূপে গ্যাসের অস্তিত্ব মেলেনি। প্রায় সাড়ে ৭শত মিটার গভীরে গিয়েও শুধু পানি আর পানি বের হয়ে আসছে। ফলে বাপেক্স এটি বন্ধ করে দিচ্ছে।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেটর(পি.ডি) মো. জহুর আহম্মদ নতুন কূপের খনন কাজ শেষ হয়েছে মন্তব্য করে বলেন, এ মূর্হুত্বে আর বেশি কিছু বলা যাবে না।

এদিকে দ্রুতগতিতে সেমুতাং গ্যাসফিল্ডে গ্যাস অস্তিত্ব শেষ হওয়ার আশংকায় গ্যাসফিল্ডের আশে-পাশে নতুনভাবে জরিপ কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বাপেক্স।

ইতোমধ্যে উপজেলা সদরে তিনটহরী উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে একদল অনুসন্ধানী গ্রুপ জমায়েত হয়েছে। তারা উপজেলাব্যাপী নতুন করে গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ করবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন