মানিকছড়িতে তালাকের ফতোয়া নিয়ে তুলকালাম

তালাক

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি:

উপজেলার গবামারা এলাকায় মসজিদের ঈমাম ও সমাজপতিদের ফতোয়ার শিকার হয়েছেন দিনমজুর দম্পতি! রাগান্বিত হয়ে স্বামী স্ত্রীকে তালাক বলায় তাদের পৃথক বসবাসের নির্দেশ দিয়েছেন ওই সমাজপতিরা। ফলে এক সপ্তাহ ধরে স্বামী স্ত্রী ও পুত্র সন্তানকে ছেড়ে বসবাস করছে অন্যত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকছড়ির গবামার এলাকার নাপ এগ্রো লিঃ এর কেয়াটেকার আনোয়ার হোসেন স্ত্রীকে বসবাস করছেন ওই এলাকায়। গত ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে স্ত্রী ফাতেমাকে তালাক দেন স্বামী।

বিষয়টি জানতে পেরে গবামারা মসজিদের ঈমাম আহসান উল্ল্যাহ স্থানীয়দের জানান, তাদের তালাক হয়ে গেছে এবং হিল্লা বিয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে আসতে হবে। এমন পরামর্শ পেয়ে মসজিদের সভাপতি সমশের আলী স্থানীয়দের নিয়ে আনোয়ারের বাড়িতে যান এবং তাদের মধ্যে তালাক হয়েছে মর্মে আলাদা বসবাসের নির্দেশ দেন।

এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করতে গত শনিবার বিকেলে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং এলাকা থেকে মানিকছড়ি আসেন ফাতেমার বাবা আব্দুর রশিদ, তাইন্দং মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল করিম, খাগড়াছড়ি সিনিয়র মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দীক এবং তাইন্দং বাজার জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা মোঃ মহসিন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব আলীর উপস্থিতিতে উভয় পক্ষ বিষয়টি মিমাংসার জন্য বৈঠকে বসেন। ব্যাপক আলোচনা শেষে ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক তাদের বাইন তালাক হয়নি মর্মে স্বামী-স্ত্রীকে তওবা পড়িয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আগত মুফতিরা।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন দায়িত্বশীল ঈমামের এমন ফতোয়া দেয়ার কারণে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

দিনমজুর আনোয়ার হোসেন বলেন, রাগান্বিত হয়ে আমি স্ত্রীকে তখন কী বলেছি মনে নেই, ফতোয়া দিয়ে সমাজপতিরা আমাকে আলাদা থাকার নির্দেশ দেওয়ায় সাতদিন ধরে আমি আমার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে দুরে থাকছি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করলে গবামারা জামে মসজিদের ঈমাম আহসান উল্ল্যাহ জানান, ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে মুসল্লীরা আমার কাছে পরামর্শ চাইলে আমি নিয়ম অনুযায়ী তাদের তালাক হয়েছে বলেছি। তবে হিল্লার বিষয়ে কোন কথা বলিনি।

মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সনজীদা শরমিন জানান, ফতোয়া প্রদানের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা বসবাস করার নির্দেশ বে-আইনি। এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন