মানিকছড়িতে গাছ কাটার ঘটনায় মামলা, আসামী গ্রেপ্তার

3(01)
মানিকছড়ি প্রতিনিধি :

মানিকছড়ির রাবার বাগানস্থ ‘সাহারা এগ্রো ফার্মের’ লীজ ও ক্রয় সূত্রের ১৮৭ একর ভূমির সৃজিত বাগানের কিছু অংশে সম্প্রতি মূল্যবান গাছ কাটার ঘটনায় মামলা হয়েছে! বাগান কর্তৃপক্ষ ২ ব্যক্তিকে ভূমিদস্যু উল্লেখ করে অভিযোগ করায় গত ১৪ মার্চ পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে এবং প্রধান আসামী মো. ইয়াকুব আলীকে(৪৫) গত ১৫ মার্চ  বুধবার রাতে আটক করে জেল-হাজতে প্রেরণ করলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।

সাহারা এগ্রো ফার্ম ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলার ২১৪ নং ডলু মৌজাস্থ সাবেক ‘রাবার বাগানের লীজ ২০০৭ সালে সরকার কর্তৃক বাতিল হয়। পরে বাতিল লীজের ১২৫ একর টিলা ভূমি নতুন করে লীজ পেতে সরকার নিকট আবেদন করেন সাহারা এগ্রো ফার্মের মালিক পক্ষ। তাঁদের আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোহাম্মদ মহি উদ্দীন ভূইঁয়া,পিতা- ফজলুল করিম ভূইঁয়া, ৫১ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর, মো. রশীদ আলী, পিতা- মুফতী সৈয়দ আলী, ৩৫ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর, এস.এম. গোলাম মোস্তফা, পিতা- আবদুর রশিদ, ৩৬ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর, আবদুল মন্নান, পিতা-বজলুর রহমান, ৩৮ নং হোল্ডিং এ ২৫ একর এবং আবদুস ছালাম মজুমদার, পিতা-আবদুল কাদের মজুমদার, ৫২ নং হোল্ডিং ২৫ একরসহ মোট ১২৫ একর ভূমি লীজ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে আবেদন করেন। যা বর্তমানে লীজের প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া উক্ত ভূমির পার্শ্বে খাস ও রেকর্ডীয় ৬২ একর ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিকট থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি’র মাধ্যমে আঞ্চলিক দলিল মূলে ক্রয় করে মোট ১৮৭ একর ভূমিতে ঘেরা(কাটা তারের বেড়া) দিয়ে তাতে যথারীতি বাগ-বাগান সৃজন, মাছের লেক খনন ও গবাদি পশুপালন শুরু করেন বাগান মালিক পক্ষ।

গত ১ মার্চ জনৈক মো. এয়াকুব আলী লোকজন (লেবার) নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে সাহারা এগ্রো ফার্মের(ঘেরা দেওয়া)ভূমিতে জোরপূর্বক ঢুকে অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্ঠি হয়। পরে বাগান সহকারী ম্যানাজার মো. মোস্তফা বাদী হয়ে মানিকছড়ি থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১০/১২ জন অজ্ঞাত নামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করলেও পরে সেটি স্থানীয় পর্যায়ে সমাধানের উদ্যোগ নেন জনপ্রতিনিধিরা। ফলে গত ৯ মার্চ উপজেলা চেয়ারম্যান কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং কিছু বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সমাধা হলেও গাছ কাটার বিষয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ জনৈক ইয়াকুব আলী ও মো. আবদুল মোতালেব এর বিরুদ্ধে বাগান নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে মর্মে অভিযোগ করলে গাছ কাটার বিষয়টি অসমাপ্ত থেকে যায়! ১৪ মার্চ আবারও বাগানের সহকারী ম্যানাজার মো. গোলাম মোস্তফা থানায় উপস্থিত হয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে তাকে ভয়-ভীতি দেখানো ও বাগান নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত শেষে মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।

এ বিষয়ে মামলার আই.ও এসআই মো. হেলাল উদ্দীন মামলা রেকর্ড ও প্রধান আসামী আটকের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বাগান মালিক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালামের মধ্যে চুক্তিনামার সাথে আসামীদের কোন সর্ম্পক নেই। ফলে অপরাধীরা আইনের আওতায় জবাবদীহি করতে বাধ্য। যার কারণে ১৫ মার্চ রাতে প্রধান আসামী মো. ইয়াকুব আলী (৪৫) পিতা. মো. মহরম আলী, সাং-ডাইনছড়িকে আটক করা হয়েছে এবং অপর আসামী মো. আবদুল মোতালেবকে আটকের চেষ্ঠা চলছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেপ্তারকৃত আসামী মো. এয়াকুব আলীকে খাগড়াছড়ির আদালতে হাজির করলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন।

সাহারা এগ্রো ফার্মের ম্যানাজার মো. জাবেদ অভিযোগ করে বলেন, সাবেক রাবার বাগানের লীজকৃত ভূমি সরকার কর্তৃক বাতিল হওয়ার পর সাহার এগ্রো ফার্মের মালিক পক্ষ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আবুল কালাম(মধ্যস্থতাকারী) এর মাধ্যমে সকল ভূমি লীজ ও ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ নিয়ে ওই সাবেক জনপ্রতিনিধি’র সাথে মালিক পক্ষের একটি চুক্তিনামা(এগ্রিমেন্ট) হয়েছে।

চুক্তিনামা অনুযায়ী মধ্যস্থতাকারী এখনো ভূমির সকল রেকর্ডপত্র মালিক পক্ষকে বুঝিয়ে না দেয়ায় কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। কিন্তু মধ্যস্থতাকারীর নিকট ভূমি বিক্রেতারা টাকা পাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে অবৈধভাবে বিক্রিত ভূমিতে প্রবেশ এবং প্রভাব খাটিয়ে মূল্যবান গাছ-গাছালি কেটে নেয়া সর্ম্পূণ বেআইনি এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শামিল। যার কারণে এ ঘটনাটি আইনগত ভাবে বাগান কর্তৃপক্ষ মোকাবেলা করবে।

অভিযুক্ত মো. এয়াকুব আলী জামিনে মুক্তির পর সাংবাদিকদের জানান, আমার স্ত্রী সালমা আক্তারের নামে রেকর্ডীয় ৪ একর টিলা ভূমিতে আমার হাতে সৃজিত বাগ-বাগানে সম্প্রতি আমি জোত পারমিট অনুমোদন সাপেক্ষে লোকজন নিয়ে গাছ কেটেছি সত্য। মালিক এখনো আমার পাওনা পরিশোধ করেনি এবং ভূমি রেজিট্রেশন করে নেয়নি। আমার পাওনা পরিশোধ না করে বরং গাছ কাটার ঘটনাটিকে বাগান মালিক পক্ষ অহেতুক ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের পূর্বক হয়রানী করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন