মাতারবাড়ির ৫’শ পরিবার পানিবন্দি, সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি
মহেশখালী প্রতিনিধি:
মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ’শ অধিক পরিবারের লোকজন দীর্ঘ দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছেন। মাতারবাড়িতে সর্ববৃহত কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ার সুবাধে ইউনিয়নের চতুর্দিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে জাইকা ও কোল-পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। কিন্তু বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে আগে যে সমস্ত স্লুইচগেট ও চিংড়ি ঘেরের পলবোট ছিল তা সম্পুর্ন বন্ধ করে দিয়েছে কোল-পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ। এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় পুরো মাতারবাড়িই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে এতে অন্তত পাঁচ’শ এর অধিক পরিবার বর্তমানে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওই পরিবার গুলোর প্রায় ২০ হাজার নারী পুরুষ সিমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।
পানিবন্দি থাকা লোকজন গুলো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা দীর্ঘ দিন যাবত পানির সাথে বসবাস করে আসলেও তাদের কে কোন ধরনের ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা করেনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কোন এনজিও সংস্থা। এতে আরও বেশি কষ্টকর হয়ে পড়েছেন দুর্ভোগে থাকা অসহায় পরিবার গুলো।
তারা আরও বলেন, মাতারবাড়িতে বড় বড় দুইটি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ২৬ শ একর জায়গা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবদারে সাড়া দিয়ে অকাতরে দিয়ে দিয়েছেন মাতারবাড়ীর মানুষ গুলো। তাতে প্রধানমন্ত্রীও খুশী হয়েছেন মাতারবাড়ীর মানুষের প্রতি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবাড়ীর মানুষকে সব ক্ষেত্রে অগ্রাধীকারের সুযোগ দিলেও এক শ্রেণির দালাল সিন্ডিকেট সাধারণ জনগণের অধিকার বঞ্চিত করে নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয় গত গ্রীষ্মে দুই প্রকল্পের বাইরে শত শত একর লবণ মাঠ পানির অভাবে চাষ করতে পারে নি স্থানীয়রা। তার পরও বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না জমি হারা কর্ম হারা মাতারবাড়ির মানুষ গুলোর।
চলতি বর্ষার বৃষ্টির পানি আর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে এখন স্বপ্নের সিঙ্গাপুর খ্যাত মাতারবাড়িতে বন্যার সৃষ্টি হয়ে বিশ হাজার নারী পুরুষ এক মাস যাবত পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান স্থানীয় সচেতন মহল। কোল-পাওয়ার কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানালেন ভোক্তভোগীরা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় মাতারবাড়ি দক্ষিণ রাজঘাট ও ফুলজান মোরা এলাকার মানুষের কষ্ট আর স্কুল মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের অসুবিধা সহ রান্নাবান্না করতেও ভীষণ দায় হয়ে পড়েছেন তাদের। রাঙ্গাখালী বাঁধের উপর কোল-পাওয়ার কর্তৃক স্লুইচগেট নির্মাণের বরাদ্দ দিলেও বর্ষার পানি বেড়ে যাওয়ায় তা এ বর্ষায় আর নির্মাণ করা যাচ্ছে না বলে জানালেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ। তবে আপাতত পানি নিষ্কাশনের জন্য শীঘ্রই পলবোটের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি ।
এদিকে এব্যাপারে একই কথা জানালেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য মাস্টার রুহুল আমিন । তিনি বলেন, মাতারবাড়ীর জলাবদ্ধতার কথা ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ উচ্ছপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের কে অবহিত করা হয়েছে। তারা অতি শীঘ্রই এব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।