মাতামুহুরী সেতুর জোড়াতালির পাটাতনে যানবাহন চলাচল, ফের দুর্ঘটনার আশঙ্কা

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী সেতুটি তিনবছর আগে ধসে পড়ার উপক্রম দেখা দিলে দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক বিভাগ সেতুর নিচের অংশে বালির বস্তার পুঁতে দেন। অপরদিকে সেতুর মাঝখানে উপরের অংশে ফাটলের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল নিবিঘ্ন করতে সেখানে দেয়া হয় পাটাতনের প্রলেপ। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ইতোমধ্যে পাটাতন গুলো ভেঙ্গে গেলে তা আবার বদল করে দেয়া হয়। বর্তমানে জোড়াতালির পাটাতনে চরমঝুঁকিতে রয়েছে যানবাহন চলাচল। এতে আবারও বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

স্থানীয় সচেতন মহল দুর্ঘটনা ঘটার আগে বর্তমান সেতুটির পাশে অবিলম্বে দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতু নিমানের দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে নতুন সেতু নির্মাণের দাবিতে চকরিয়া শহরে মানববন্ধন করেছে টিআইবির সহযোগী সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। মানববন্ধনে দাবির সাথে একাত্ম প্রকাশ করে অংশনেন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী বলেন,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কক্সবাজার জেলাকে উন্নয়নের মাধ্যমে ঢেলে সাজাতে নতুন স্বপ্ন দেখছেন। এরই অংশ হিসেবে জেলার প্রত্যন্ত জনপদে অনেক গুলো মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। সরকারের এসব মেগা প্রকল্প ঘিরে দেশি–বিদেশি পর্যটকদের আসা–-যাওয়া বেড়েছে।

তিনি বলেন, সারাদেশের সাথে স্থলপথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। শুধু তাই নয়, পর্যটন খাতের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে নিভরর্শীল এই মহাসড়ক। এই কারণে মাতামুহুরী সেতুটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। সেতুটি ধসে পড়লে বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় কক্সবাজারের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। তাই দেশের অর্থনৈতিক চাকা গতিশীল রাখতে অবিলম্বে এখানে নতুন সেতু নির্মাণের দাবিটি এখন সময়ের।

টিআইবির সহযোগী সংগঠন সনাকের আয়োজনে মাতামুহুরী নদীতে দ্বিতীয় সেতু বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু। তিনি বলেন, সব শ্রেনি পেশার মানুষের গণদাবি, মাতামুহুরী নদীর উপর দ্রুত দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করা হোক। সেটি এখনই করা সম্ভব হবে না। নির্মাণ করতে কিছুটা সময় লাগছে। সেজন্য সেতুর মেরামত কাজ হতে হবে দৃশ্যমান ও দ্রুত। শুধু বালির বস্তা দিয়ে নদীর প্রবল স্রোত কখনো ঠেকানো যাবে না। লোহার পাটাতন দিয়ে হাজারো ভারী যানবাহনের চাপও সামাল দেওয়া যাবে না। তাই দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে ভালো করে মেরামত করতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনায় আশঙ্কা থেকে যাবে।

চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, সেতুর বিষয় নিয়ে স্থানীয় জনগণ আমজনতা কী বলছে বা করছে সেটি নিয়ে আমাদের কি করতে পারি। তবে আমরা আমাদের মতো কাজ করছি। বর্তমানে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রেট্রোফিটিং’ ডিজাইন অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি থেকে এই প্রকল্পের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদার মেজবাহ অ্যাসোসিয়েটস সেতুর নিচে কাজ করছে। পরবর্তী ছয় মাস অর্থাৎ আগামী জুন মাসে এই কাজ শেষ হবে।

তিনি বলেন, রেট্রোফিটিং ডিজাইনে কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে, সে অনুযায়ী দুর্বল পিলারগুলো মেরামত করা হবে, স্টিল পাইপ দিয়ে ঝুঁকি কমানো হবে। এরপর আমরা সেতুর উপরে থাকা ভাঙা অংশের মেরামত কাজ করব।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমরা সীমিত সময়ের জন্য মেরামত কাজটি করছি। অর্থাৎ নতুন চার লেন সেতুর নির্মাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে সচল রাখার চেষ্টা করব।

জানা গেছে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে একাধিক জনসভায় সেই প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু চার লেন সড়কের অর্থায়ন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ কারণে চার লেনের আগেই মহাসড়কের চারটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে বর্তমানে মহাসড়কে চার লেন বিশিষ্ট সেতুগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুগুলো হচ্ছে চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী সেতু, দোহাজারী সাঙ্গু সেতু, চন্দনাইশের বরগুনি সেতু ও পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতু। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৩০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুগুলো নির্মাণ করবে। ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্কের আওতায় সেগুলো নির্মিত হবে।

সরকারের অনুমোদিত নির্মিতব্য চারটি সেতুর বিষয়ে সর্বশেষ ব্যাখা করেন সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিএম (ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার) সৈয়দা তানজিমা সুলতানা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে সেতুগুলোর স্থান নির্বাচন, মাটি পরীক্ষা, ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থায়নও চূড়ান্ত হয়েছে। সম্প্রতি সময়ে সেতু নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মার্চে দরপত্র খোলার পর মূল্যায়ন এবং এপ্রিল নাগাদ ঠিকাদার চূড়ান্ত হবে। এরপর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কাজ শেষ হতে সময় লাগবে তিন বছর।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন