মাতামুহুরী রেঞ্জের বাঁশ দাখিলার সরবরাহের দাবী পাহাড়িদের

Alikadam Bemboo News Pic

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি:
লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রিজার্ভের বাঁশ মহাল নিলামের নামে একটি ব্যবসায়ীগ্রুপের হাতে বাঁশ ব্যবসা কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় নিলামের পরিবর্তে ‘দাখিলা’য় বাঁশ সরবরাহের দাবী জানিয়েছেন আলীকদমের দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোকজন।

নিলাম গ্রহীতা পুঁজিবাদী বাঁশ ব্যবসায়ীদের নানামূখী চাপের মুখে বাঁশনির্ভর জুমিয়ারা অর্থভাবে পড়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মায়ানমারে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে অভিযোগে দাবী করা হয়েছে।

পাহাড়িদের দাবীর পাশাপাশি স্থানীয় স্থানীয় বাঁশনির্ভর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনগুলোও একই দাবীতে সোচ্চার। তারা বলেন, প্রচলিত দাখিলা প্রথায় যে হারে সরকার রাজস্ব পেয়ে থাকে এর চেয়ে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় সাপেক্ষে হলেও ‘দাখিলা’ প্রথা চালু করা হোক।

দুর্গম কুরুকপাতা এলাকার বাসিন্দা অংচিং মুরুং বলেন, একসময মাতামুহুরী রেঞ্জে উৎপাদিত লক্ষ লক্ষ বাঁশ দাখিলায় রাজস্ব আদায় করে সরবরাহের অনুমতি দিত বন বিভাগ। কিন্তু পুঁজিবাদী বাঁশ ব্যবসায়ীদের নানামূখী প্রলোভনে পড়ে বন বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা ‘দাখিলা প্রথা’ উঠিয়ে দেন। দীর্ঘদিন ধরে বাঁশ মহাল নিলাম দেওয়া হচ্ছে। এতে করে দুর্গমের বাসিন্দারা নানা মুখী ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

গত ১৯ অক্টোবর দুর্গম এলাকার ৪০ জন মুরুং ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বাসিন্দার স্বাক্ষরিত অভিযোগে বলা হয়, স্থানীয় বাঁশ সরবরাহের দাবী সত্ত্বেও মহাল ব্যবসায়ীদের তৎপরতার কারণে আবারো বন বিভাগ নিলাম দিতে যাচ্ছে মাতামুহুরী বাঁশ। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বন বিভাগের একটি উচ্চ পর্যায়ে টীম মাতামুহুরী রেঞ্জের বাঁশ মহাল তদন্ত করলেও পুঁজিবাদী মহলের স্বার্থ সুরক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাতামুহুরী রেঞ্জের বাঁশ ‘দাখিলায়’ সরবরাহের অনুমতি না দিলে স্থানীয়রা আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে জানান তিনি।

উপজেলার বাঁশ-বেত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সরকারী নিবন্ধিত সংগঠন ‘আলীকদম বাঁশ ও বেত ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, মাতামুহুরী রিজার্ভের প্রাকৃতিক সম্পদকে ঘিরে এখানকার পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশ আয়-রোজগারের ওপর নির্ভরশীল।

এ রেঞ্জে প্রতিবছর উৎপাদিত কমপক্ষে ৫০ লক্ষ বাঁশসম্পদের ওপর বিগত প্রায় এক যুগ ধরে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকিটের লোলুপদৃষ্টি পড়েছে। একসময় এ রিজার্ভের বাঁশসম্পদ ‘দাখিলার’ মাধ্যমে সরকারী রাজস্ব আদায় সাপেক্ষে সরবরাহ হতো। এতে সব ধরণের বাঁশ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা হতো। কিন্তু চকরিয়াকেন্দ্রিক একটি বাঁশ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বন বিভাগের উর্ধ্বতন মহলের সাথে আঁতাত করে ‘দাখিলা’ প্রথা ‘বিলুপ্ত’ করে তথাকথিত নিলাম প্রক্রিয়ায় বাঁশ সরবরাহ করে আসছে। লামা বন বিভাগ এ রেঞ্জের ১০-১৫ লক্ষ বাঁশের নিলাম দিয়ে থাকে। কিন্তু এ সংখ্যা আরো বেশী হওয়া প্রয়োজন। ১০-১৫ লক্ষ বাঁশ নিলাম হলে নিলাম বহির্ভূত পাচার হয় আরো ৩০-৩৫ লক্ষ।

গত ১৭ অক্টোবর স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত এক আবেদনে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাঁশ নির্ভর শ্রমজীবিদের দাবী রয়েছে দাখিলায় বাঁশ সরবরাহ করা হোক। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের দাবীকে পাশ কাটিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই পুঁজিবাদীদের দাবীমতে মাতামুহুরী রেঞ্জের বাঁশ মহাল আবারো ‘নিলাম’ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে বন বিভাগ।
অভিযোগে প্রকাশ, চলতি অর্থবছরে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ বাঁশ কর্তনযোগ্য হলেও মাত্র ১৫ লক্ষ বাঁশ নিলাম দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কম নিলাম দেখনোর ফলে চলতি অর্থবছরে কমপক্ষে ৩০ লক্ষ বাঁশ নিলাম বহির্ভূত পাচার হওয়ার আশংকা রয়েছে।
বাঁশ মহাল নিলামে কঠিন শর্ত জুড়ে দেওয়ার কারণে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিলামে অংশ নিতে পারে না। ফলে চকরিয়ার বিশেষ ব্যক্তিরা নিলাম গ্রহণ করে থাকে। চকরিয়ার একটি বাঁশ সমিতি এ নিলামে অংশ নিলেও সমবায় আইনমতে এই সমিতির ‘কার্যকরী এলাকা’ বান্দরবানের আলীকদম নয়। “মাতামুহুরী বাঁশ সরবরাহকারী সমবায় সমিতি লিঃ” কক্সবাজারের চকরিয়াভিত্তিক একটি বাঁশ সরবরাহকারী সমিতি। তা সত্বেও অবৈধভাবে এ সমিতি কথিত ‘২য় শাখা’র নাম দিয়ে একটি রশিদ প্রদর্শন করে প্রতিনিয়ত আলীকদমে মাতামুহুরী রেঞ্জ হতে বাঁশ পাচার করে চলছে। যা সমবায় আইনসিদ্ধ নয়।
কুরুকপাতার বাসিন্দা দুঃখা কার্বারী, আওয়াই কার্বারী জানান, বাঙ্গালী ও পাহাড়ি বাঁশ শ্রমিকরা নিলাম গ্রহীতাদের কাছে তাদের আরোপতি মূল্যেই বাঁশ বিক্রি করতে বাধ্য হন। নিলাম না দিয়ে দাখিলায় বাঁশ সরবরাহ করা হলে উপজাতীরা উপকৃত হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন