মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে সবুজের সমারোহ শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষক

chakaria-pic

চকরিয়া প্রতিনিধি:

শীতকালীন আগাম সবজি চাষে পুরোদমে নেমে পড়েছেন কক্সবাজারের চকরিয়ায় চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং চলতি বছর তেমন বন্যা না হওয়ায় অন্যান্য বছরের চেয়ে প্রায় দেড়মাস আগেই লক্ষ্যমাত্রার ৮ হাজারের মধ্যে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করে ফেলা হয়েছে রকমারী সবজির। ইতিমধ্যে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের কোন কোন ক্ষেত থেকে আগামী শীতকালীন সবজি তুলে বাজারে বিক্রিও শুরু করছেন চাষিরা। তবে আগামী একমাসের মধ্যে রকমারী এসব সবজির পুরোদমে দেখা মিলবে বাজারে। এই সময়ের মধ্যে বাকী দুই হাজার হেক্টর জমিতেও আবাদ সম্পন্ন করার কথা বলছেন কৃষি কর্মকর্তা এবং চাষিরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, চলতি বছর বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যার ধকল না পড়ায় চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়ে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে নামার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে প্রায় দেড়মাস আগে থেকেই নানা সহায়তা দিয়ে আগেভাগে মাঠে নামানো হয় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের পৌরসভার বিভিন্ন ব্লক ছাড়াও বিএমচর, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল, কৈয়ারবিল, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুরসহ অন্তত ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার কৃষককে। বেগুন, মরিচ, টমোটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ শীতকালীন আগাম সবজির ঘরে তুলতে প্রান্তিক এসব কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মাঠে। শীতকালীন সবজি ছাড়াও বছরের বারো মাসজুড়ে এসব কৃষক মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির আশীর্বাদ এবং তীরের উর্বর মাটির ক্ষেতে রেকর্ড পরিমাণ নানান রকমারী ফসল উৎপাদন করে আসছেন। এবারও শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাম্পার উৎপাদন হওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে কৃষক আর্থিকভাবে ব্যাপক সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এর সুফল ভোক্তা পর্যায়েও ছড়াবে।

সরেজমিন মাতামুহুরী নদীর তীর ও কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া অংশের দুই তীরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন সবুজের সমারোহ। যেদিকেই চোখ যায় দেখা মিলবে সবুজের। এই সবুজেই আচ্ছাদিত হয়ে আছে নদীর দুইতীর।

কৃষকেরা জানান, আগাম শীতকালীন সবজি হিসেবে বেগুন, মরিচ, টমোটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলার চাষ করা হয়। ইতিমধ্যে কোন কোন ক্ষেত থেকে উৎপাদিত সবজি বাজারেও যাচ্ছে। আগামী একমাসের মধ্যে রকমারী সবজির আবাদ করা হবে। তন্মধ্যে উপরোক্ত সবজি ছাড়াও গাঁজর, সিম, লাউ, বরবটি, ঢ়েঁড়স, করলা, তিত করলা, লালশাক, পুইঁশাক, ধনিয়া পাতাসহ বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে উঠবে নদীর বিস্তীর্ণজোড়া তীরে।

উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীতীরের দ্বীপকূল এলাকার কৃষক মো. আলমগীর জানান, প্রতিবছর মাতামুহুরী নদীর তীরের প্রায় তিন কানি জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করেন তিনি। এবারও এই পরিমাণ জমিতে শীতকালীন আগাম রকমারী সবজি চাষে নেমেছেন। কৃষি বিভাগের দেওয়া পরামর্শে প্রায় দেড়মাস আগে মাঠে নেমে পড়েন তিনি। এতে ইতিমধ্যে ক্ষেত থেকে বেগুন, মরিচ, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রিও শুরু করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বন্যা না হওয়ায় আগাম সবজি চাষে নেমে অন্য বছরের চাইতে প্রায় দুই লক্ষ টাকা বেশি আয় হবে এবার, এমনটাই জানালেন তিনি।

চকরিয়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আমান পাড়া এলাকার কৃষক নুরুল মোস্তফা বলেন, ‘আগাম শীতকালীন সবজি চাষের জন্য শ্রমজীবী লোক নিয়োগ দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করানো হচ্ছে। চারা রোপন থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির সঙ্গে সারও প্রয়োগ করা হচ্ছে হচ্ছে ক্ষেতে।’

কৃষক নুরুল মোস্তফা জানান, আগামী এক মাসের মধ্যেই পুরোদমে মাতামুহুরী নদীর দুই তীর ভরে উঠবে সবুজে সবুজে। প্রায় দেড়মাস আগে থেকেই সবজি উৎপানের জন্য বীজ তলা তৈরি, বীজ বপন, সেচ দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ আনুষাঙ্গিক কাজও শেষ করা হয়েছে। এতে বাজারে আগাম সবজিরও দেখা মিলছে।

চকরিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের সিংহভাগ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবছর শীতকালীন সবজির আবাদ করেই তারা সাবলম্বী হন। এবার বন্যা না হওয়ায় আগাম সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয় তাদের। এতে প্রায় দেড়মাস আগে থেকেই মাঠে নেমে পড়ায় শীতকালীন সবজিও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের চাইতে এবারও সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়বেন আমার ওয়ার্ডের কৃষকেরা।’

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ‘উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার বন্যা না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয় শীতকালীন আগাম সবজি চাষে। এতে পৌরসভাসহ মাতামুহুরী তীরের অন্তত ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার কৃষক সবজি চাষে মাঠে নেমেছেন। ইতিমধ্যে নদীতীরের কোন কোন ক্ষেত থেকে উৎপাদিত আগাম সবজিও বিক্রি শুরু করেছেন।

কৃষিবিদ আতিক উল্লাহ আরো বলেন, ‘বরাবরের মতোই মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির ব্যবহার করে এবারও সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়বেন এখানকার কৃষকেরা। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেওয়া হয় কৃষকদের।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন