মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতিতে সেনাক্যাম্প স্থাপনের দাবী বাঙ্গালীদের : অবরোধ প্রত্যাহার

13.05

মাটিরাঙ্গা সংবাদদাতা :

মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন গোমতি বাজারে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন পার্বত্য শান্তিচুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ’র অব্যাহত চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মাটিরাঙ্গার কৃষি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত গোমতি। গত কয়েকদিন ধরে ইউপিডিএফের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদাবাজি ও লুটপাটের প্রতিবাদে মঙ্গলবার গোমতি বাজার ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনগণ গোমতি বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ ও মাটিরাঙ্গা-গোমতি সড়ক বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

গোমতি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি এবং এলাকাবাসী ইউপিডিএফ‘র চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও গোমতি ইউনিয়নে দুইটি সেনাক্যাম্প স্থাপনের দাবীতে গোমতি বাজারের সকল ধরণের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ এবং মাটিরাঙ্গা-গোমতি সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরের সাথে উত্তরের চার ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বিক্ষুদ্ধ ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে ২৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বিজিবি‘র পলাশপুরে জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোখলেসুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (রামগড় সার্কেল) মো: শাহজাহান হোসেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: তাজুল ইসলাম তাজু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল হক, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো: দেলোয়ার হোসেন, মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মাইন উদ্দিন খানসহ পুলিশ ও বিজিবি’র কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়রা অবিলম্বে ইউপিডিএফ কর্তৃক গোমতিতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা টাকা ও মোবাইল প্রশাসনের মাধ্যমে ফেরত, গোমতি ও জালিয়াপাড়ায় দ্ইুটি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের দাবী করেছেন। এলাকাবাসী ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের সাথে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পের আঁতাতের অভিযোগ তুলে বলেন, যখনই বিজিবি এলাকা ত্যাগ করে ক্যাম্পে ফিরে যায় তখনই ইউপিডিএফ প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ এলাকায় প্রবেশ করে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়। বিজিবি’র অবস্থানের সকল খবর সন্ত্রাসী তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যায় বলেও তাদের অভিযোগ।

গোমতি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ইউপিডিএফ গত দুই মাস ধরে গোমতি বাজার ব্যবসায়ীদের কাছে বাৎসরিক ৫ লাখ টাকা চাঁদাদাবী করে ৫ দফা চিঠি প্রদান করে। তারা বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাঁদা প্রদানের জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসন জানলেও এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

প্রশাসনের সাথে স্থানীয়দের দুই দফা বৈঠক শেষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারসহ ব্যবসায়ীসহ সাধারন মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে গোমতি ও আশেপাশের এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির সার্বক্ষনিক টহল জোরদার, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুপরের দিকে ব্যবসায়ীরা তাদের সব ধরনের কর্মসুচী প্রত্যাহার করে নেয়।

উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে গোমতির ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলার পরামর্শ দিয়ে বিজিবির পলাশপুর জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোখলেছুর রহমান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে সন্ত্রাসীদের নির্মূল সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।  

এ বিষয়ে গোমতি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. তোফাজ্জল হোসেন পার্বত্যনিউজকে বলেন, ইউপিডিএফের এসকল সন্ত্রাসীদের অবিলম্ভে গ্রেফতার করা না হলে গোমতির সর্বস্তরের মানুষকে সাথে নিয়ে আমরাই সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করবো।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১০ মে ২০১৪) রাত পৌনে ৯টার দিকে পার্বত্য শান্তিচুক্তি চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ‘র চাঁদা কালেক্টর ইউনিটের প্রধান জেরিন চাকমা‘র নেতৃত্বে ইউপিডিএফ‘র স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গোমতি বাজারে প্রবেশ করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গণহারে চাঁদাবাজি করে। এসময় তারা অন্তত: ৫০টি দোকানে প্রবেশ করে ব্যবসায়ীদের ব্যবহৃত শতাধিক মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। এসময় তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা চাঁদাবাজি করে বলে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত ৮ মে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের তৈলাফাং রোয়াজা পাড়া থেকে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী জেরিন চাকমার নেতৃত্বে স্থানীয়দের ১৩ টি গরু অপহরণ করা হয়। পরে সন্ত্রাসীদের সাথে নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং ২০ হাজার পরবর্তীতে পরিশোধ করা হবে মর্মে আপোসরফা করে গরুগুলো উদ্ধার করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউপিডিএফ, চাঁদাবাজী, বিজিবি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন