মহেশখালীর নিখোঁজ ৫৩ জেলের সন্ধান মেলেনি ১৮দিনেও

 

মহেশখালী প্রতিনিধি:

৩০ মে মোরা’র কবলে পড়ে মহেশখালীর ৫ফিশিং ট্রলারের ৫৩জন নিখোঁজ জেলের ১৮দিন পরেও সন্ধান মিলেনি। জেলে পল্লী হিসাবে একই গ্রাম থেকে ৪৩জন ও অন্যান্য গ্রাম থেকে ১০জন জেলে পরিবারের কান্না থামছে না।

অপর দিকে অসহায়, গৃহহীন জেলেদের আর্তনাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রমজানের এ দিনে হঠাৎ করে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে একই পরিবারে ২ ভাই, দাদা, নানা-নাতি, বাবা-ছেলে, মামা-ভাগিনা, চাচা-ভাইপো, জামাই-শশুর মিলে উপজেলার মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর পুত্র আব্দু শুক্কুর এর মালিকানাধীন এফবি সায়েদ, এফবি ওয়ালিদ-০১, এফবি ওয়ালিদ-০২, মোশরাফ আলী পাড়া গ্রামের মৃত আছদ আলীর পুত্র নুরুল আলম প্রকাশ বাশি মাঝির এফবি গাউছিয়া-০১, ছোট মহেশখালীর আহমদিয়া, কাটার হাবিল বহদ্দারের পুত্র নুরুল কাদেরের মালিকানাধীন এফবি গাউছিয়া-০২, দাসিমাঝি পাড়া গ্রামের মৃত সাধন আলীর পুত্র জামাল হোসেন এর মালিকানাধীন এফবি রেজা খান নামে ৬টি ফিশিং ট্রলার ১৪৬জন মাঝি মাল্লা নিয়ে ২৭ মে সাগরে মাছ আহরণ করতে যায়।

২৯ মে ভোর থেকে প্রাকৃতিক ঘূর্নিঝড় মোরা’র আবহাওয়া সতর্ক সংকেত শুরু হলে সংবাদের সাথে সাথে ট্রলারের কাজে ব্যবহৃত জাল, গোছা, লোয়াইং, কন্টিনার ভর্তি করে কুলে ফিরে আসার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এমন সময় বঙ্গোপসাগরে অদূরে গুলিধার নামক স্থানে বিভিন্ন পয়েন্টে ফিরে আসা ট্রলারগুলি প্রাকৃতিক ঘুর্ণিঝড় মোরার ১০নং মহাবিপদ এর কবলে পড়ে ৩০ মে ভোর রাতে ৬টি ফিশিং বোট এর মধ্যে ৫টি ফিশিং বোট মাঝিমাল্লা সহ সাগরে ডুবে যায়।

৬টি ট্রলারের ১৪৬জন জেলের মধ্যে থেকে একাধিক পয়েন্টে  নৌ-বাহিনী, ভারতের ত্রাণবাহী নৌ জাহাজ সুমিত্রা ও সোনাদিয়া চ্যানেলে বিভিন্ন দফায় ৯২জন জেলে উদ্ধার হয়। নুরুল কাদের এর ও জামাল হোসেন এর ২৮জন করে মাঝি মাল্লাহ ফেরৎ আসলেও ২টি ট্রলারে ২জন এবং নিখোঁজ আর ৪টি ট্রলারে ৫১জন সহ মোট ৫৩জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে।

৫টি ট্রলারের মধ্যে থেকে ২জন জেলেকে মহেশখালীতে দাফন করা সম্ভব হলেও এখনো পর্যন্ত আরো ৫৩জন জেলে সাগরে নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে ৪৩জনই শুধুমাত্র পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পুটিবিলা গ্রামের বাসিন্দা। অন্যন্যরা পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের অধিবাসী। অনেকের পরিবার একই সাথে ৩জন, ২জন, আপন ভাই, বাবা-ছেলে, নানা-নাতী, শালা-দুলাভাই সম্পর্কের। এরাই পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। তাদের আয় রোজগারে সংসারে ভরণ-পোষন চলত। পরিবারের কর্তা হিসাবে সাগরে নিখোঁজ হওয়ায় তাদের পরিবারে বুক ফাটা আর্তনাদ, খাদ্য, চিকিৎসা, বস্ত্র ও বাসস্থানের চরম অভাবের মধ্যে জীবন যাপন করছে। পবিত্র রমজান মাসে সেহেরী ও ইফতারে আহারের সংকট দেখা দিয়েছে। ভোর হলেই তাকিয়ে থাকে সাগরের পাড়ে যে ভেসে আসে প্রিয় জনের জীবিত বা মৃতদেহ।

সাগরে নিখোঁজ জেলেরা হলেন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কলেজ পাড়ার মৃত মো. আলীর পুত্র ফরিদুল আলম তার ভাই আমান উল্লাহ মাঝি, ফুপাত ভাই কবির আহাম্মদের পুত্র মিজানুর রহমান, দাসিমাঝি পাড়ার অলি আহাম্মদ এর পুত্র আমান উল্লাহ তার ভাই শহীদুল্লাহ, চাচতো ভাই মনির আহাম্মদের পুত্র আরাফাত, মৃত মনিরুল হকের পুত্র নজরুল ইসলাম, বদিউল আলমের পুত্র এহছান উল্লাহ, মৃত ইসহাক মিয়ার পুত্র মীর কাশেম মেইঠ্যা, আনচার ড্রাইভার্ ২পুত্র সারজান ও মনিরুল হক মলই,  মৃত ওহাব মিয়ার পুত্র আলতাজ মিয়া তার নাতী পীর মোহাম্মদের পুত্র আব্দুল করিম, মৃত উম্মত আলীর পুত্র খলিল আহাম্মদ, মৃত মকবুল আহাম্মদের পুত্র মোক্তার আহাম্মদ, রাহামত উল্লাহর পুত্র লোকমান, মোবারক আলী পাড়ার হোছন আহাম্মদের পুত্র সোহেল, বদি আলম-মনু মাঝির পুত্র এমরান, মৃত আবু তাহের এর পুত্র আমানুল করিম, মোশারফ আলী পাড়ার মোজাম্মেল হকের পুত্র জাবের, মৃত আমির হোসেন এর পুত্র কবির আহাম্মদ মাঝি তার পুত্র মামুন, হেদায়তুর রহমানের পুত্র মোহাম্মদ জহির, আবুল শামার পুত্র আবু ছিদ্দিক, মৃত বদিউল আলম এ পুত্র এবাদুল করিম, মৃত মকবুল আহাম্মদের পুত্র গফুর বাবুর্চি, তার পুত্র মনিরুল্লাহ মনি, পূর্ব খোন্দকার পাড়ার আব্দুর রহমানের পুত্র ইছাহাক মিয়া, আবুল কন্টাকটরের পুত্র মোস্থাক আহাম্মদের চুইণ্যা, মখলেছুর রহমান পাড়ার মৃত রৌশন আলীর পুত্র আনচার ড্রাইভার, ২নং ওয়ার্ডের মহুরীর ডেইল গ্রামের কাছিম আলীর পুত্র গোলাম হোসেন, ৫নং ওয়ার্ডের মৃত হাবীবুর রহমানের পুত্র মো. হোছেন কালইয়া মাঝি, ঘোনা পাড়ার ওসমান মাঝির পুত্র বেলাল হোসেন, বেলাল হোসেন এর পুত্র নূর মোহাম্মদ, নুরুল হাকের পুত্র শাহাব উদ্দিন, দক্ষিণ ঘোনা পাড়ার মৃত আব্দু ছত্তার এর পুত্র নেছার মাঝি, ফরিদুল আলমের পুত্র আবু হামিদ, ৯নং ওয়ার্ডের গোরকঘাটা চর পাড়ার মৃত মকবুল আহাম্মদের পুত্র আজাদ ড্রাইভার, আবুল কাশেম এর পুত্র শামসুল আলম, আমির হোসেন এর পুত্র, ছৈয়দ উল্লাহ, আব্দুছালামের পুত্র জাবেদ উল্লাহ, সুলতান আহাম্মদের পুত্র ফজল করিম, মমতাজ বাবুর্চি, ছোট মহেশখালীর মুদির ছড়া গ্রামের শামসুল আলম এর পুত্র ইয়াছিন, ডেইল পাড়া গ্রামের মৃত ঈসমাইলে পুত্র নুরুল হোসেন, আহাম্মদিয়া কাটা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র মো. হোছন মাঝি, সিপাহীর পাড়া গ্রামের মৃত আবদু শুক্কুরের পুত্র শাহাব মিয়া, বড় মহেশখালী জাগিরা ঘোনা গ্রামের বাশি মাঝির পুত্র্র খাইরুল আমিন, মুন্সির ডেইল গ্রামের মকবুল আহাম্মদের পুত্র আব্দুল মোতালেব, কুতুবজোম মেহেরিয়া পাড়া গ্রামের নুরুল আমিন এর পুত্র নুরুল আবছার।

এ ব্যাপারে, মহেশখালী কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক জানায়, সরকারের তরফ থেকে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারকে পূর্নবাসন করতে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নিঁখোজ জেলেদের সন্তানগণের লেখা পড়া দায়িত্ব তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন।

মহেশখালীর ইউএনও আবুল কালাম জানান, নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে গৃহহীনদের একটি করে বাড়ি তৈরি করে দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে সাথে সাথে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি ও এনজিওদের কে সহায়তার আহ্বান জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন