Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

মহেশখালীতে স্বাস্থ্য কর্মিদের বিচিত্র চাকরি

untitled-1-copy

মহেশখালী প্রতিনিধি:

পৃথিবীতে কিছু মানুষের জন্ম হয়,পরের জন্য। আর কিছু মানুষের পুরা জীবনটাই চলে যায় অন্যের উপকারে। হোক সে মানব সেবায় ব্রত। অনেকে চায় মানবদরদী হতে নয়তো মাদার তেরেসা আর হাতেম তাঈ এর মতো জীবনটা মানুষের উপকারে কাটাতে। ক’জনেই বা পারে সে কাজটা স্বাস্থ্য খাতে নিজেকে সপে দিয়ে মানব শিশু আর পুরুষের শরীর গঠনে সেবা ব্রত হয়ে থাকতে? স্বাস্থ্য সেবার অপর নাম স্বাস্থ্য কর্মী হোক সে সরকারি বা বেসরকারী। সেবার কোন ধর্ম চেহারা ভাগ থাকতে পারেনা।

মানবসেবায় কোন জাত থাকতে পারেনা। সকলের জন্য যেটা প্রযোজ্য সমভাবে তার নাম বিবেক আর সেবা। তেমনি কিছু মহৎ সেবাব্রত মানুষ হলো মহেশখালীর মাঠ পর্যায়ে থাকা স্বাস্থ্য কর্মী। যাদের সাথে চলেনা কোন অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কাজের তুলনা ৷ কেন না যে সেবা বা কাজটা করে আত্মতুষ্টি আর স্রস্টা প্রদত্ত উপকার পাওয়ার গ্যারান্টি নিয়ে। এসবের জন্যই একজন স্বাস্থ্যকর্মী নিরলস স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে।

যদি সে সেবাটা সঠিক পন্থায় হয়। মহেশখালী কুতুবজুম এর প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা আর ৮ কিমিঃ পায়ে হেটে উতপ্ত গরম মাঠ প্রান্তর ঘাট পাড়ি দিয়ে জনগনের মাঝে থাকতে হয়। মহেশখালীতে যারা সরকারের ফ্রি স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছিয়ে দিচ্ছে তাদের কয়েক জনের নাম হল, শ্রদ্বেয় চাচা জাহাঙ্গীর আলম, সিএইচসিপি নুরুল আলম, স্বাস্থ্য কর্মী শাহানা আকতার, আলী হোসেন, সুপার ভাইজার কমল বোস, টিকা দান কর্মসূচী মাঠ পর্যায়ের সিনিয়র অফিসার ফকরুদ্দিন আহমদ প্রমূখ।

যারা শুধু কুতুবজুম নয়, সোনাদিয়ার মতো যোগাযোগ বিহীন জায়গায় ও সমান ভাবে দায়িত্ব পালন করে বিপ্লব ঘটিয়েছে রোগমুক্ত সমাজের। ড: শাইখ সিরাজ যদি ভিয়েনামের মতো দেশে কৃষিচাষ করে বিপ্লব ঘটায় দেশের মিডিয়ায়, তাহলে জীবনের ঝুঁকি আর আল্লাহ প্রদত্ত পায়ে হেটে মাসের পর মাস দৈনিক ১৪কিমিঃ পথ দিয়ে যারা স্বাস্থ্যখাতে কাজ যাচ্ছে তারা তো পৃথিবীতে বিপ্লব ঘটিয়ে দিলো স্বাস্থ্য জগতে। কই তাদের নিয়ে তো মিডিয়া লেখেনা। কিছু অন্ধ মিডিয়া নারী ধর্ষণ দেখে, নারীর পোশাক আশাক দেখে, নারীর প্রেম দেখে নয়তো কার কখন জম্মদিন তা দেখে। তাদের চোখের কখনো স্বাস্থ্যকর্মীর জীবন প্রনালী আসেনা বড়ই দুঃখজনক।

যাদের অবদান সমাজ বা রাষ্ট্রে অতুলনীয়। যাদের নিরলস শ্রম সততা, ফাঁকিহীন কাজের ফলে ভবিষ্যত শিশু গড়ে ওঠে যেমনটি হাম, যক্ষা, কলেরা, বসন্ত, হুপিংকাশি, ধনুস্টঙ্কার, নিউমোনিয়া, জন্ডিস, রিকেটস, অটিজম বিহীন সুস্থ্য সবল শিশুর হাসি। স্বাস্থ্যকর্মীরা যেন ভিন্ন গ্রহের কোন রোবট। কেননা তাদের কোন ফুসরত নেই নিরস্তর পথচলা চাকরিস্থল বড়ই অবাক করা নিয়মের চাপ তাদের গাড়ে।

কি আশ্চর্য্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যাবতীয় অফিস শুরু হয় সকাল ১০টায় ৷ কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজ শুরু হয় সকাল ৭-৮ টায় ৷ প্রত্যেক চাকরিজীবিদের একটা নির্দিষ্ট অফিস আছে ৷ যেখানে বসে তারা কাজকর্ম করে ও অবসরে আড্ডা দেয় ৷ কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীদের জন্য একটি চেয়ার ও নেই ৷ নিজের বাড়ি বা মানুষের দোকানকে অফিসের মত ব্যবহার করে কাজ সারতে হয় ৷ যা ৪৩ বছরেও কোন স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নজরে আসেনা। হয়তো কিছু মানুষে রঙ্গীন মনোভাব আর চশমার কারনে।

সেবা গ্রহীতারা অন্যান্য অফিসে এসে সেবা নেয় আর স্বাস্থ্য সহকারীগণ সেবা গ্রহিতার দ্বারে দ্বারে গিয়ে সেবা দেয় ৷ যা সরকারি অন্যান্য চাকরির থেকে সম্পূর্ন আলাদা। যে কোন অফিসে সেবা গ্রহীতা না আসলে কাজ করতে হয় না ৷ কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীদের অবশ্যই টিকা দেয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে হবে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে আনতে হবে ৷

মৌখিক ডাক তাও আবার নেই কোন প্রযুক্তিগত যন্ত্র। যে কোন সরকারী অফিস সপ্তাহে ৫দিন খোলা এবং বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস, কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীদের মাঝে মাঝে শুক্রবারেও টিকা দিতে হয় ৷ এভাবেই কাটে মহেশখালীর স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজ। সরকারের কারনে যদি দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত হয়। তাহলে স্বাস্থ্যকর্মীদের কারনে ১০টির অধিক ভয়ংকর রোগ থেকে মুক্ত বাংলাদেশের সমাজ ও শিশু। যারা তৈরি করবে উন্নত একটা জেনারেশন বা ফ্ল্যাটফরম।

 যে কোন কর্মকর্তা, কর্মচারী ছুটি নেয় অফিসের বস থেকে কিন্তু একজন স্বাস্থ্য সহকারীকে ছুটি নিতে হয় ৪ (চার) জন থেকে ৷ যেমন যে দায়িত্ব পালন করবে, তার সম্মতি, AHI এর সুপারিশ, HI এর অনুমতি ও সর্বোপরি UH&FPO এর ছুটি মন্জুরের মাধ্যমে ৷ অনেকে ছুটি কি জিনিস ভুলে গেছে কারন বিড়ম্বনার নাটকে। ঈদের ছুটি, শ্রান্তি বিনোদন ছুটি, অর্জিত ছুটি, কোনদিন কোন স্বাস্থ্য সহকারী ভোগ করতে পারেনা ৷ কিন্তু অন্যান্য কর্মচারীগণ সহজেই তা ভোগ করতে পারে ৷ বেতন ও পুরাপুরি জীবন সম্মত নয় বা পরিশ্রম সম্মত।

লাঞ্চ ও টিফিন বিরতি সবার জন্য প্রযোজ্য হলেও স্বাস্থ্য সহকারীদের বেলায় নাই ৷ ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দৈনিক লাঞ্চ ভাতা ২০০ টাকা কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীদের পুরো মাসে ১২৫টাকা যা দৈনিক ৪.১৬টাকা করে পড়ে৷ হিসাব করার একটা কলমের দামের চেয়ে কম। এ জাতির ভাগ্য পাল্টাবে কি করে জাতি বৈষম্য আর বেতন বৈষম্য পরিশ্রম অনুযায়ী সম্মানির বেলায় যত কাহিনী। ভারতের জনগন যদি সবচেয়ে ভালো দেশপ্রেমিক হয় তবে দুনিয়া কাঁপানো সঠিক দেশ প্রেমিক হবে এ দেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা।

যে কোন অফিসে শুধু সেবা গ্রহণকারীগণ আসে কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীদেরকে সেবা গ্রহণকারী হউক অথবা না হউক সবার বাড়িতে যেতে হয় ৷ জীবনের প্রতি যতটা উদাসী আমরা তারচেয়ে বড় পাগল চিকিৎসার বেলায়। কেননা স্বাস্থ্য বাচাতে কেহ সজাগ হতে চায়না সহজে, দেখি সকলে জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত। আদৌ আমরা স্বাস্থ্য বাঁচাতে খাবার গ্রহন করিনা, শরীর নামক ২০৬ টি মাংসপিন্ড বাঁচাতে চেষ্টায় রয়েছি।

স্বাস্থ্য সহকারীগণকে প্রত্যেকটা বাড়ি সার্চ করতে হয় ফলে একটা বাড়ি থেকে অপর বাড়িতে যেতে যদি গড়ে ২ মিনিট করে ধরা হয় এবং একটি সাব ব্লকে যদি ১২০টা বাড়িও হয় তাহলে একজন স্বাস্থ্য সহকারীর সময় লাগে ১২০x২=২৪০ মিনিট তথা ২৪০÷৬০=৪ ঘন্টা ৷ একটা বাড়িতে ১মিনিট করে কথা বললে আরও লাগবে ২ঘন্টা যা খুবই কষ্টকর ও অমানবিকও বটে ৷ অথচ অন্যরা শুধু চেয়ারে বসে বসে ফ্যান ও এয়ারকন্ডিশনের বাতাস গ্রহন করে ৷

কোন অফিসে কেউ গেলে সেবাদানকারীকে স্যার হিসেবে সম্বোধন করে (যদি পিয়ন ও হয় ) ৷ আর স্বাস্থ্য সহকারীদেরকে সবাই টিকামারনী বলে সম্বোধন করে যা ব্যাঙ্গমীধরণ ৷ বেতন স্কেলে স্বাস্থ্য সহকারীগণ আগে থেকে উপরে থাকলেও আজ পর্যন্ত সকলের নিচে অবস্থান করতেছে ৷ কারণ ক্রমান্বয়ে সবার পরিবর্তন হলেও স্বাস্থ্য সহকারীদের পরিবর্তন হয়নি ৷ এখনও সেই ১৯৮৫সালের করা ১৬তম গ্রেডেই আছে ৷বছর বছর শিক্ষানীতি বদলায়, সিনিয়র কর্মকর্তার স্কেল সহ সুবিধা বাড়ে কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতি এত বেতন বৈষম্য কেন? রাজনৈতিক ভাবেও একজন স্বাস্থ্য সহকারী দেউলিয়া ৷ কারণ সবাই রাজনীতি করতে পারে কিন্তু স্বাস্থ্য সহকারীগণ পারেনা ৷

সবার বাড়িতে যেতে হয় বিধায় এই অবস্থা ৷ প্রত্যেকটা অফিসের কর্মকর্তার সাথে কর্মচারীদের একটা সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে ৷ কিন্তু অনেক স্বাস্থ্য সহকারী তাদের বসকে চিনেনা এবং বসেরা তাদের কর্মচারীকে চিনেনা ৷ ফল স্বরুপ স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবী দাওয়া যেমন পুরণ হয় না তেমনি তাদের অভাব অভিযোগ কাউকে বলাও হয় না ৷ ফলে সামান্য দোষেও একজন স্বাস্থ্য সহকারী দোষী সাব্যস্ত হয় শুধু দূরত্ব ও যোগাযোগের অভাবে ৷

এরপরও স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতের যত পুরস্কার সরকার মহোদয় পেয়েছে বা অর্জন করেছে সব কিছু এই স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ৷ আশাকরি সামনে যা পাবে তাও এদের মাধ্যমে ৷ এরপরও এরা অবহেলিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, ও নির্যাতিত ৷ মা মারা গেলে নাকি অনাথ, বাবা মারা গেলে অসহায়, উভয় মারা গেলে এতিম হয় ৷ স্বাস্থ্য সহকারীগণও এতিমের চেয়ে এতিম ৷ এদের অর্জন অন্যরা দেখায় ৷ এদের প্রাপ্য অন্যরা ভোগ করে। এদের অধিকার সবুজ শিকলে বন্দি ৷ এরা কি আদৌ মুক্ত হবে কোনদিন এসব নিয়ম নীতি থেকে। মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর প্রতি আবেদন রহিলো নাহয় জাতীর কাছে এ ই প্রশ্নেই রয়ে যাক। কোন একটা বিশেষ দিনের জন্য,যেদিন বোধদয় হবে সমাজের, বিবেক জাগ্রত হবে সত্যিকার মানুষের। সুস্থ জাতি দেখার স্বপ্নবাজ চোখে দেখবে সেদিন সোনার বাংলার অন্তহীন উন্নত জীবন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন