মন্দির নির্মাণের নামে গুইমারার পর মহালছড়িতেও পরিত্যাক্ত সেনাক্যাম্প দখল

মহালছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সদর উপজেলার দেবতাপুকুর এলাকায় পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পের সরকারি খাস ভূমি পূর্বানুমতি ছাড়াই দখল করে সেখানে লক্ষী নারায়ণ মন্দির নির্মাণ করেছে উপজাতীয়রা আর এ অবৈধ মন্দির অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলায় গুইমারার মতো আবারও একটি মহল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা শুরু করেছে।

জানা গেছে, মহালছড়ি জোন অধিনস্ত সদরের ৪নং মাইসছড়ি ইউনিয়নের দেবতাপুকুর সংলগ্ন নুনছড়ি এলাকায় পরিত্যক্ত একটি সেনাক্যাম্পের স্থানে (“পরিত্যক্ত সেনাক্যাম্পের স্থান, অনুমতি ছাড়া দখল নিষেধ”) সংবলিত একটি স্টিলের সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো এবং মহালছড়ি জোন সেখানে নিয়মিত টহল পরিচালনা ও বিশ্রামের জন্য উক্ত স্থানটিকে ব্যবহার করতো।

কিন্তু সরকারি কোন অনুমতি ছাড়াই উক্ত ভূমি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে লক্ষী নারায়ন মন্দির নির্মাণের নিমিত্তে ২-৩ দিনে মধ্যোই একটি ঘর দাঁড় করায় স্থানীয় উপজাতীয়রা। চারপাশে টিনের ছাইনি দেয়া ঘরটি নির্মাণের আগে স্থানীয়রা অবৈধভাবে পাহাড় কেটে উক্ত স্থানটিকে মন্দির নির্মাণের উপযোগী করে তোলে।

কয়েকদিন আগে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ওই এলাকায় গমনের পর সরকারি ভূমিতে অবৈধভাবে মন্দির ঘর দেখতে পেয়ে মন্দির নির্মাতাদের কাছে ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি পত্র দেখতে চাইলে তারা কোন প্রকার মালিকানা বা অনুমতি পত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের আলোচনার জন্য মহালছড়ি জোনে ডাকা হয়।

গতকাল ২৬ অক্টোবর সকালে জোন অধিনায়কের ডাকে সাড়া দিয়ে উক্ত এলাকার ৮টি গ্রামের (থলিপাড়া, পুকুরপাড়া, হেডম্যান পাড়া, গুইমারা পাড়া, ছাতি পাড়া, স্কুল পাড়া, মধ্যম পাড়া, মালতি পাড়া) কার্বারী, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মুরুব্বীসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী মহালছড়ি জোনে আলোচনা সভায় মিলিত হন।

সেখানে জোন অধিনায়ক মন্দির বা কোন ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণের আগে দানপত্র বা অনুমতিপত্র বা ভূমির মালিকানা লাগে এবং মালিকানা না থাকলে ভবিষ্যতে ঝামেলা হতে পারে মর্মে মন্দির নির্মাণকারী ও এলাকাবাসীকে বোঝাতে সক্ষম হন এবং তাদের মন্দিরটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে কোন ব্যক্তি মালিকানা ভূমিতে প্রতিস্থাপনের অনুরোধ জানান। এসময় তিনি মন্দির ঘরটি অন্যত্র সড়াতে  খরচআদি দিতে মন্দির কমিটিকে আশস্ত করেন। এসময় মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্যরা মন্দিরটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে সম্মত হয়।

এসময় আলোচনা সভায় মাইসছড়ি মৌজার হেডম্যান কলিন জ্যোতি চাকমা, পুকুর পাড়ার কার্বারী কুঞ্জ মেহান ত্রিপুরা, গুইমারা পাড়ার কার্বারী কলিধন ত্রিপুরা, মধ্যম পাড়া কার্বারী খুকুমনি ত্রিপুরা, হেডম্যান পাড়া কার্বারী তেজেন্দ্র রোয়াজা, মহিলা কার্বারী দৃহ ত্রিপুরা, গুইমারা ইউনিয়নের ৯নং ওর্য়াড মেম্বার কইসক ত্রিপুরা ও মন্দির পরিচালনা কমিটির সম্পাদক বিনাচান ত্রিপুরাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু স্থানীয় নিরীহ গ্রামবাসীরা সোজা কথাটি বুঝে অবৈধ কাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলেও সুযোগ সন্ধানী কুচক্রী মহলটি অনেকটাই ব্যথিত হয়েছে।

এদিকে আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকা মন্দির পরিচালনা কমিটির সম্পাদক বিনাচান ত্রিপুরা জানান, আমরা জোন অধিনায়ক মহোদয়ের সাথে একমত পোষন করেছি এবং মন্দিরটি অন্যত্র সরিয়ে নেবার কাযক্রম হাতে নিয়েছি কিন্তু কে বা কারা এখানে তাদেও স্বার্থে অপপ্রচার করছে যা মোটেই কাম্য নয়।

তবে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে কল করার পরেও রহস্যজনক কারণে প্রতিবেদকের কল রিসিভ করেননি মাইসছড়ি নুনুছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আম্যো মারমা।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য যোগদানকৃত খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. নাজমুস শোয়েব বলেন, পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পের ভূমিটি অবশ্যই সরকারি খাস ভূমি আর সেখানে কোন প্রকার অনুমতি ছাড়া অবৈধ ভাবে দখল করে মন্দির, মসজিদ কিংবা প্যগোডা নির্মাণ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ । তাছাড়া পাহাড় কাটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যদি কারো সরকারি ভূমি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে অবশ্যই সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি  সাপেক্ষে তা ব্যবহার করতে হবে, অন্যথায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ধারনা করা হচ্ছে একটি আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের আগে জেলার গুইমারার ঘটনা বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত  করতে না পেরে মহালছড়ির নিরীহ গ্রামবাসীদের দাবার গুটিতে পরিনত করে রাষ্ট্র’র বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন