ভয়াবহ ভাঙ্গনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন

Untitled-2 copy

টেকনাফ প্রতিনিধি:

প্রায় দুইশ বছর আগে থেকে বসতি শুরু হয় দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমাটিনে। এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসসহ ভয়াবহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ টেকনাফ উপকুলে আঘাত হানলেও কখনো মনোবল ভাঙ্গেনি সেন্টমার্টিন-দ্বীপবাসীর।

কিন্তু সম্প্রতি এ দ্বীপে দু‘টি জলোচ্ছাসে আঘাত হানে এবং দ্বীপের চারপাশে ভয়াবহ ভাঙ্গনের সৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে ভাবনায় পড়েছে দ্বীপের প্রায় নয় হাজার বাসিন্দা। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ৮.৩ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটি দিন দিন ছোট হয়ে আসায় দেশের মানচিত্র থেকে দ্বীপটি হারিয়ে যাবে এমন আশংকায় উদ্বিগ্ন দ্বীপবাসী।

এ দ্বীপের পরিবেশ, পর্যটন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবীতে রবিবার দুপুরে টেকনাফ পৌরসভার একটি আবাসিক হোটেলের হলরুমে সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ  এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আলহাজ্ব আমির হোসেন ও ব্যবসায়ী হাফেজ উল্লাহ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, এ দ্বীপে মানুষের  বসবাস শুরু হয় প্রায় দুইশ বছর আগে। দ্বীপে বসতি শুরুর পর এভাবে কোনো দিন এখানে পানি ওঠেনি । এ রকম ভয়াবহ ভাঙ্গনও কোন সময় দেখা যায়নি । জোয়ারের পানি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে দ্বীপে চার পাশেই ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। বেশী ভেঙ্গেছে উত্তর-পশ্চিম অংশে।

এদিকে বিস্তৃর্ণ  কেয়াবন সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের একমাত্র কবরস্থানটির প্রায় দেড়শ ফুটেরও বেশী সাগরে তলিয়ে গেছে। মাটি সরে যাওয়ায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িসহ আশপাশের কয়েকটি সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কবর থেকে বেরিয়ে আসে মানুষের কংকালও।

এছাড়া সরকারী-বেসরকারীভাবে স্থাপনা নির্মিত হলেও নির্মিত হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। পর্যটন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকারের গৃহিত উন্নয়ন পরিকল্পনা ধরে রাখতে মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ নিমার্ণের দাবী করেন।

উপস্থিত সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান নুর আহমদ আরও বলেন ‘দ্বীপের চতুর্দিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গণের কবলে পড়ে বহু বসতবাড়ি ও সরকারী-বেসরকারী অবকাঠামো সাগরে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙ্গণ রোধে ক্ষতিগ্রস্থরা ব্যক্তি উদ্যোগে বেড়িবাঁধ  নির্মাণ করতে চাইলে প্রশাসন বাধা প্রদান করে। আমি সেন্টমার্টিনদ্বীপের চতুর্দিকে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি’।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৯১সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, ৯৪’র জলোচ্ছাসসহ কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় এ দ্বীপে পানি ওঠেনি । ভাঙ্গনের সমস্যাও তেমন একটা ছিলনা। কিন্তু দ্বীপে বসতি শুরুর দীর্ঘ দুইশ বছর পর, ২০১৬সালে পূর্ণিমার জোয়ারে হঠাৎ সেন্টমার্টিনে জলোচ্ছাসের সৃষ্টি হয়। দ্বীপের চতুর্দিকে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে দ্বীপের চারপাশে বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে যায়।

ভাঙ্গন কবল থেকে রক্ষা পায়নি দ্বীপের আটটি বসতঘরসহ প্রায় ২১টি স্থাপনা পানিতে ধ্বসে যায়। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম অংশে অবস্থিত একমাত্র কবরস্থানটির ১৫০ ফুটেরও বেশী সমুদ্র গর্ভে তলিয়ে গেছে।  ফলে শংকিত হয়ে পড়ে দ্বীপের বাসিন্দারা।

জানা গেছে,বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টেকনাফ, বঙ্গোপসাগর, ভাঙ্গন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন